• ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

কুলাউড়ায় ৬ লাখ মানুষের চিকিৎসায় ৫ জন ডাক্তার!

sylhetsurma.com
প্রকাশিত আগস্ট ২০, ২০১৬

কুলাউড়া সংবাদদাতা : মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার সংকটের কারণে কুলাউড়া ও জুড়ীর ৬ লক্ষাধিক  মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারসহ ৩২টি পদের মধ্যে এতদিন ২২ জন চিকিৎসক রোগীদের সেবা দিয়ে আসলেও গত ২০ দিন থেকে সেখানে আছেন মাত্র পাঁচ জন। দুই উপজেলার এসব রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ৩২ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। তার মধ্যে বিশেষজ্ঞসহ মোট ২২ জন চিকিৎসক এতদিন কর্তব্যরত ছিলেন। এরমধ্যে চার জন গেছেন প্রশিক্ষণে, পাঁচ জন ডেপুটেশনে, তিন জন কনসালটেন্টসহ বাকিরা কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।মেডিক্যাল অফিসার ডা. মহিউদ্দিন আলমগীর  জানান, প্রতিদিন দুপুর ১টা পর্যন্ত দুই শতাধিক রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নেন। এছাড়া লাইনে আরও দুই শ’ জনের ওপরে রোগীদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এসব রোগীদের ডা. মহিউদ্দিন আলমগীর, আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. সাঈদ এনাম, ডা. ফারহানা হক ও ডা. পরিমল চিকিৎসা দিচ্ছেন। ছুটিতে আছেন এক জন। দ্বিতীয় তলার অন্যান্য ডাক্তারের চেম্বার যথাক্রমে চক্ষু বিভাগ, দন্ত বিভাগ, কার্ডিওলোজি বিভাগ, নাক, কান ও গলা রোগ বিভাগ ফাঁকা পড়ে আছে চিকিৎসকের অভাবে। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। মাত্র পাঁচ জন চিকিৎসক দিয়ে কুলাউড়া ও জুড়ীর ৬ লাখ মানুষের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে, কিন্তু চিকিৎসকের বাড়ানো হচ্ছে না। এ ব্যাপারে মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. সত্য কাম চক্রবর্তী বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের বিষয়ে স্থানীয় এমপির উদ্যোগী হতে হবে। তিনি এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকের কাছে সুপারিশ পাঠালে ডাক্তার সংকটের নিরসন হবে বলে আমি মনে করি। এরপরেও আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। এদিকে কুলাউড়া  হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে চলছে পানি সংকট। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান বলেন, পাইপ লাইন মেরামত শেষ না করে ৬ লাখ টাকার বিল তুলে নিয়ে গেছে ঠিকাদার। বিলে আমার কোনও সুপারিশ স্বাক্ষর ছাড়াই, কাজ না করে ঠিকাদারকে কিভাবে বিল দেওয়া হলো তার কোনও উত্তর পাচ্ছি না।  পানি সমস্যা সমাধানের জন্য ছয় লাখ টাকা সরকারের ব্যয় হয়েছে সত্যি, কিন্তু সমস্যা রয়েই গেছে।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে চরম অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে। হাসপাতালে বিদ্যুতের ভোল্টেজ সমস্যাও রয়েছে। বারবার বলার পরেও কুলাউড়ার পিডিবি কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিচ্ছে না। পিডিবির প্রকৌশলী এসে সমাধান করবেন বললেও তিনি আসছেন না। ফলে হাসপাতালের ফ্যান চলছে না। লাইট নিভছে আর জ্বলছে। ইতোমধ্যে অনেক লাইট নষ্ট হয়ে গেছে।বিদ্যুতের সমস্যার জন্য রোগীরা দুর্ভোগে পড়েন। ডা. মিজান বলেন,  হাসপাতালের ডাক্তার কোয়ার্টারের ওপর দিয়ে টানা হয়েছে বিদ্যুতের লাইন। গত ১৫-২০ দিন আগে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মহিউদ্দিন আলমগীরের বাসার ওপরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তার মামা গুরুতর আহত হয়েছেন। এ বিষয়ে পিডিবি কর্তৃপক্ষকে বার বার বলার পরও এখনও কোয়ার্টারের ওপর থেকে লাইন সরানো হয়নি। এ ব্যাপারে পিডিবির কুলাউড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী দুলাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, হাসপাতালের বিদ্যুতের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হলে এটা তাদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিষয়। মূল লাইনের সমস্যা হলে আমি আজই লোক পাঠিয়ে সমাধান করবো। এদিকে কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার সংকট, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এবং নানা সমস্যা নিয়ে কুলাউড়ার মানুষ সচেতন সমাজ ব্যানারে  আন্দোলনে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে  কয়েকবার প্রস্তুতি সভাও করা হয়েছে এবং শহরে মানববন্ধন এবং স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে।