• ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক আর নেই

sylhetsurma.com
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৬

সিলেট সুরমা ডেস্ক : বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮১। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী কুড়িগ্রামে লেখকের নিজ গ্রামের মাটিতে শেষ আশ্রয় পাবেন তিনি। হাসপাতাল থেকে মরদেহ গুলশানে তার বাসভবনে নেওয়া হবে। রাতে হিমঘরে রাখার পর সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ বুধবার সকাল ১১টা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। বাদ যোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে প্রথম নামাজে জানাযার পর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে কুড়িগ্রামে গ্রামের বাড়িতে।
তর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সৈয়দ হকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে চ্যানেল আই পরিবার।
ক্যান্সারে আক্রান্ত সৈয়দ হক লন্ডন থেকে দেশে ফিরে ইউনাইটেড হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে গতকাল তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। এরমধ্যেই সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হককে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিলো। চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে দেশে ফিরেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত লেখক সৈয়দ শামসুল হক উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে সস্ত্রীক লন্ডনে গিয়েছিলেন এ বছরের ১৫ এপ্রিল। একইসঙ্গে যুক্তরাজ্যেরও নাগরিক হওয়ায় লন্ডনে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা কর্তৃপক্ষের (এনএইচএস) নিয়মিত চিকিৎসকের (জিপি) মাধ্যমে চিকিৎসা শুরু করান তিনি। এরপর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ম্যাকডোনাল্ডের তত্ত্বাবধানে লন্ডনের রয়্যাল মার্সডেন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি।
পরে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ নিউসাম ডেভিসের তত্ত্বাবধানে চেলসি অ্যান্ড ওয়েস্টমিনস্টার হাসপাতালে কেমোথেরাপি নেন। কিন্তু টানা প্রায় তিন মাসের চিকিৎসা শেষে মন খারাপ করা খবর নিয়েই দেশে ফিরেছেন তিনি। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন মাত্র ছয় মাস বাঁচবেন কবি। মৃত্যুমুখে দাঁড়ানো এই সময়টা কবি জীবনের শেষ দিনগুলো কাটাতে চান নিজের দেশে। তাই লন্ডন থেকে দেশে ফিরে ভর্তি হন রাজধানীর ইউনাইটের হাসপাতালে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখতে যান তাকে। নেন তার যাবতীয় চিকিৎসার দায়ভার। কবিতা, নাটক, গল্প, উপন্যাস, চলচ্চিত্রসহ সাহিত্যের সব শাখায় স্বচ্ছন্দ সৈয়দ হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। হোমিওপ‌্যাথিক চিকিৎসক সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন ও গৃহিনী হালিমা খাতুনের ঘরে। ১৯৫৩ সালে ‘একদা এক রাজ্যে’ কাব্য দিয়ে তার যাত্রা শুরু হলেও ‘তাস’ নামক গ্রন্থ আগেই প্রকাশিত হয়েছিল।
তারপর অবিরাম লিখেছেন সৈয়দ হক। সাহিত‌্যের সব শাখায়। তবে সব ছাপিয়ে কবি পরিচয়টিই প্রধান মনে করতেন তার সাহিত‌্যাঙ্গনের বন্ধুরা। বৈশাখে রচিত পংক্তিমালা, পরাণের গহীন ভেতর, নাভিমূলে ভস্মাধার, আমার শহর ঢাকা, বেজান শহরের জন্য কেরাম, বৃষ্টি ও জলের কবিতা- এসব কাব‌্যগ্রন্থের অজস্র কবিতায় তার নানা নীরিক্ষা জনপ্রিয়তাও এনে দেয় তাকে।
কাব্যনাট্য রচনায় ঈর্ষণীয় সফলতা পাওয়া সৈয়দ হক ‘নূরলদীনের সারাজীবন’, ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘গণনায়ক’, ‘ঈর্ষা’ ইত্যাদি নাটকে রেখেছেন মুন্সীয়ানার স্বাক্ষর। ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ ও ‘নুরলদীনের সারাজীবন’ বাংলাদেশের মঞ্চনাটকের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে আছে।
তিনি মহাকাব্যিক পটভূমিকায় বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ নামে দীর্ঘ উপন্যাস যেমন লিখেছেন, তেমনি ছোট আকারের উপন্যাস লিখেছেন সমান তালে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে তাৎপর্যময় হয়ে উঠেছে তার ‘নিষিদ্ধ লোবান’সহ নানা উপন‌্যাসে।
‘খেলারাম খেলে যা’, ‘নীল দংশন’, ‘মৃগয়া’, ‘সীমানা ছাড়িয়ে’, ‘এক মহিলার ছবি’, ‘দেয়ালের দেশ’, ‘স্তব্দতার অনুবাদ’, ‘এক যুবকের ছায়াপথ’, ‘মহাশূন্যে পরানমাস্টার’, ‘তুমি সেই তরবারী’, ‘দ্বিতীয় দিনের কাহিনী’, ‘অন্তর্গত’, ‘এক মুঠো জন্মভূমি’, ‘শঙ্খলাগা যুবতী ও চাঁদ’, ‘বাস্তবতার দাঁত ও করাত’, ‘বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ’, ‘আয়না বিবির পালা’সহ ৫০টির বেশি উপন‌্যাস এসেছে তার হাত দিয়ে।
ছোটগল্পে তিনি নিজের এলাকা উত্তরাঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষের জীবনের মর্মন্তুদ ছবি একেছেন।
গত শতকের ষাট, সত্তর ও আশির দশকে অনেক চলচ্চিত্রের চিত্রনাট‌্যের সঙ্গে চলচ্চিত্রের জন‌্য গানও লিখেছেন সৈয়দ হক। তার লেখা গান ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘অনেক সাধের ময়না আমার’, ‘তোরা দেখ দেখ দেখরে চাহিয়া’, ‘চাঁদের সাথে আমি দেব না তোমার তুলনা’র মতো বহু গান এখন মানুষের মুখে ফেরে।
তার নিষিদ্ধ লোবান উপন‌্যাস নিয়ে কয়েক বছর আগে গেরিলা নামে চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়।
সংবাদপত্রে কলাম লেখাকে আকর্ষণীয় করে তোলার ক্ষেত্রে অনেকেই সৈয়দ হকের দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত ‘হৃৎকলমের টানে’র কথা বলেন।
সৈয়দ হকের আত্মজীবনী ‘প্রণীত জীবন’ও প্রশংসিত সাহিত‌্যাঙ্গনের মানুষদের কাছে।