• ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

চার্জশীট

sylhetsurma.com
প্রকাশিত অক্টোবর ১০, ২০১৬

সুলতান সুমন
বিজ্ঞান মনস্ক লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলার চার্জশীট (অভিযোগপত্র নং ৮০) দাখিল করা হয়েছে আদালতে। চলতি বছরের ২৮ আগষ্ট অনেক গোপনীয়তার সাথে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট হরিদাস কুমার এর আদালতে ৫ জনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ পত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অর্গানাইজড ক্রাইম ,বাংলাদেশ পুলিশ,সিআইডি,ঢাকা এর পুলিশ পরিদর্শক আরমান আলী। তবে এ অভিযোগপত্র এখনও গ্রহণ করেননি আদালত। আগামী ১৮ অক্টোবর অভিযোগ পত্রের উপর শুনানী ও গ্রহণের নির্ধারিত তারিখ রয়েছে বলে জানিযেছে আদালত সূত্র।
অভিযোগ পত্রে অভিযুক্তরা হলেন, সিলেটের কানাইঘাট থানার ফালজুড় গ্রামের জমসেদ আলীর ছেলে আবুল হোসে ওরফে আবুল হোসাইন (২৫)একই থানার খালপাড় তালবাড়ি গ্রামেরমৃত আব্দুর রবের ছেলে ফয়সাল আহমদ, সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর থানার বীরেন্দ্র নগর বাগলী গ্রামের মো. আমির উদ্দিনের ছেলে হারুনুর রশিদ (এই তিনজন পলাতক রয়েছেন)। অন্য অভিযুক্ত ও কারাগারে আটককৃতরা হলেন, কানাইঘাট থানার পূর্ব ফালজুড় গ্রামের হাফিজ মঈনউদ্দিনের ছেলে মান্নান ইয়াহইয়া ওরফে মান্নান রাহি ওরফে এবি মান্নান ইয়াহিয়া ওরফে ইবনে মঈন (২৪)।
অভিযোগপত্রে অব্যাহতি প্রাপ্তরা হলেন, এসএমপি’র বিমান বন্দর থানার মো.ইলিয়াছ আলীর ছেলে ও স্থানীয় দৈনিক সবুজ সিলেটের আলোকচিত্রী মো. ইদ্রিছ আলী, কানাইঘাট থানার পূর্ব ফালজুড় গ্রামের হাফিজ মঈনউদ্দিনের ছে,েমোহাইমিন নোমান (১৯), লক্ষিপুর জেলার রামগঞ্জ থানার রমনপুর জমাদার বাড়ির মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে সাদেক আলী মিঠু (২৮), যশোর জেলার কোতয়ালী থানার এসএমএ করিম রোডের মৃত এ,এফ রশিদুর রহমানের ছেলে মো. তৌহিদুর রহমান গামা(৫৯) ঢাকা মিরপুর থানার সন্তোষপুর এর মৃত জব্বার মল্বিলক’র ছেলে আমিনুল মল্লিক, যাত্রাবাড়ি থানার দক্ষিণ কাজলার মইনউদ্দিনের ছেলে জাকিরুল্লাহ হাসান(১৯),পল্লবী থানার বাউনিয়াবাদ কলোনী ব্লিডিংএর তাজুল ইসলামের ছেলে আরিফুল ইসলাম আরফান মুসফিক (২০), বাগেরহাটের গোয়াখালি গ্রামের রেজাউল কবির বিশ্বাসের ছেলে জুলহাস বিশ্বাস (২৪), নওগা জেলার মহাদেবপুরের ডা.আনোয়ারুল ইসলামের ছেলে জাফরান হাসান (২০), বরুগুনার হেউলিবুনিয়া গ্রামের মৃত নুর মোহাম্মদেও ছেলে আবুল বাশার (৪০), বিবাড়িয়ার কালীশ্রী পাড়ার মৃত ফৈরদস-উর-রহমানের ছেলে সাফিউর রহমান ফারাবি।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরীর সুবিদ বাজারে নিজ বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় পেশায় ব্যাংক কর্মকর্তা ও মুক্তমনা ব্লগের বিজ্ঞান মনস্ক লেখক অনন্ত বিজয় দাশকে। হত্যার একদিন পর তাঁর বড় ভাই রতেœশ্বর বাদী হয়ে সিলেট মহানগরের বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাত চার দুর্বৃত্তকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়। মামলার তদন্তভার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়। এরপর গত বছরের ৭ জুন স্থানীয় একটি পত্রিকার ফটোসাংবাদিক ইদ্রিস আলীকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২৮ অক্টোবর জামিনে মুক্তি পান ইদ্রিস। একই বছরের ২৯ আগস্ট সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার পূর্ব পালজুর গ্রাম থেকে মান্নান ইয়াহইয়া ওরফে মান্নান রাহী (২৪) ও মোহাইমিন নোমান ওরফে নোমান নামে দুই ভাইকে গ্রেফতার করে সিআইডি পুলিশ। পরে তাদের দেওয়া তথ্য মতে আবুল খায়ের ওরফে রশীদ আহমদ (২৪) নামের তাঁদের আরেক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ৫ মে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে মুক্তি লাভ করেন নোমান ও রশীদ। যদিও ওইদিনই একটি নাশকতা মামলায় তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। রাহি আদালতে অনন্ত হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছেন। এছাড়া অভিজিৎ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার মো. তৌহিদুর রহমান, আমিনুল মল্লিক, আরিফুল ইসলাম, জাকিরুল প্রকাশ, সাদেক আলী মিঠু ও জাফরান হাসানকেও এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
উল্লেখ্য, অনন্ত বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখি করতেন। তার লেখা ও সম্পাদিত একাধিক বই প্রকাশিত রয়েছে। সিলেটে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক অনন্ত ‘যুক্তি’ নামের বিজ্ঞান বিষয়ক ম্যাগাজিনেরও সম্পাদক ছিলেন। তিনি সিলেট গণজাগরণ মঞ্চেরও সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) কিশোর কুমার কর জানান,আলোচিত অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মালার চার্জশীট (অভিযোগপত্র ) আদালতে দাখিল হয়েছে। তবে আদালত তা গ্রহণ করে অন্য আদালতে বিচারের জন্য বদলী করবেন। যাতে খুব দ্রুততার সাথে মামলাটি নিষ্পত্তি হয় এবং অপরাধীদের শাস্তি হয় সেটার জন্য আমরা সবাই আশাবাদি।