• ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

চীনের প্রেসিডেন্টের সফরে আসলে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে কোন ধরনের প্রভাব পড়বে না

প্রকাশিত অক্টোবর ১৩, ২০১৬

সিলেট সুরমা ডেস্ক::::::::::::: চীনের প্রেসিডেন্টের সফরের কারণে ঢাকা-নয়াদিল্লি সম্পর্কে কোনো ধরনের টানাপড়েন সৃষ্টির আশঙ্কা একেবারেই ভুল বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী।

চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশে সফরের একদিন আগে আজ বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

চীনের প্রেসিডেন্টের সফরকে কেন্দ্র করে ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি খবর সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, ‘চীনের প্রেসিডেন্টের সফরের কারণে ঢাকা-নয়াদিল্লি সম্পর্কে কোন ধরনের টানাপড়েন সৃষ্টির আশঙ্কা একেবারেই ভুল। এ ধরনের কোন খবরের বিন্দুমাত্র সত্যতা নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এই পরারাষ্ট্র নীতি অবলম্বন করছে। এর ফলে সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে এবং সুফল পাওয়া যাচ্ছে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেন, ’চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের প্রতি আন্তর্জাতিক নেতৃত্বের আস্থার প্রতীক। এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-চীন বন্ধুত্বের স্মারক ও দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের পথে ঐতিহাসিক নবযাত্রার সূচনা করবে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের, অত্যন্ত নিবিড় এবং নানাবিধ কারণে গুরুত্বপূর্ণ। পঞ্চাশের দশকে বঙ্গবন্ধুর দুবার গণচীন সফরের মধ্য দিয়ে যে সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল, ২০১০ ও ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরকালে নেই সম্পর্ক আরও নিবিড়, গভীর ও ব্যাপক অংশীদারিত্বমূলক সহযোগিতায় রূপ নিয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে চীন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও উচ্চতর পর্যায়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে।

বর্তমান সরকারের প্রাজ্ঞ কূটনৈতিক পদক্ষেপের ফলে চীন বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিরাজমান সম্পর্কগুলোকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার অংশ হিসেবে ৩০ বছর পর এটাই চীনের কোনো প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর বলেও জানান তিনি।

এ সময় তিনি জানান, এই সফরে সই হতে যাওয়া সম্ভাব্য ২৫টিরও বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কী পরিমাণ অর্থ নতুন সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। চীনের একটি দল কম্বোডিয়ায় রয়েছে। তারা ঢাকা পৌঁছালে শুক্রবার সকালের মধ্যেই তা চূড়ান্ত করা হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্টের সফরসূচি সম্পর্কে তিনি জানান, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অভ্যর্থনা জানাবেন। চীনের প্রেসিডেন্টকে বহনকারি বিমানটি বাংলাদেশ আকাশ সীমায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দুটি জেট তার বিমানটিকে এসকর্ট করে নিয়ে আসবে। তাকে এবং তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিশেষ বিমানটি সকাল ১১ টা ৪০ মিনিটে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।

বিমান বন্দরে পৌঁছলে একুশবার তোপধ্বনির পর সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল চীনের প্রেসিডেন্টকে গার্ড অব অনার প্রদান করবে। চীনের প্রেসিডেন্ট ডায়াস থেকে সালাম গ্রহণ এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে সঙ্গে নিয়ে গার্ড পরিদর্শন করবেন। এ সময় দুদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হবে।

বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে চীনা প্রেসিডেন্টকে হোটেল লা মেরিডিয়ানে নিয়ে যাওয়া হবে।

চীনের প্রেসিডেন্ট জিনপিং আগামীকাল বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন। আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে দু’নেতা কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে স্বক্ষর করবেন।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সন্ধা ৬টা ৩০ মিনিটে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির দেয়া নৈশভোজে যোগ দেবেন। এর আগে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বিকেল ৪টায় হোটেল লা মেরিডিয়ানে চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

চীনা প্রেসিডেন্ট জিনপিং-এর ঢাকা সফরের দ্বিতীয় দিন শনিবার সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। জিনপিং শনিবার সকাল দশটায় ভারতের গোয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমান বন্দরে তাকে বিদায় জানাবেন।

চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরকালে তার ১৩ সদস্যের সফরসঙ্গীর পাশাপাশি ৩৩ সদস্যের সরকারি কর্মকর্তা এবং ৩৪ সদস্যের নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও মিডিয়া কর্মী থাকছেন।

শি জিনপিং-এর সফর সঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সেন্ট্রাল কমিটির পলিট ব্যুারোর (সিসিসিপিসি) ওয়াং হুনিং, সিসিসিপিসির সদস্য সচিবলী জানশু, স্ট্যাট কাউন্সিলর ইয়াং জিয়েছি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং জি, জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশন মন্ত্রী (এনডিআরসি) জু শাওসি, অর্থ মন্ত্রী লো জিয়েই, বাণিজ্য মন্ত্রী হুচেং, চীনের পিপলস ব্যাংকের গভর্নর ঝো জিয়াওচুয়ান, আথির্ক ও অর্থনীতি বিষয়ক অফিসের পরিচালক লিউ হে, সিসিপিসির জেনারেল অফিসের নির্বাহী উপ প্রধান ডিং জুজিয়াং, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিগকিয়াং, সিসিসিপিসির জেনারেল অফিসের উপ-প্রধান ওয়াং শাওজুন, এবং সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী কং জুয়ানইউ।