• ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

অশ্লীল ভিডিওই কাল হল জাহানারার!

sylhetsurma.com
প্রকাশিত নভেম্বর ৬, ২০১৬

সুলতান সুমন:::::
ফুটফুটে দুইটি শিশু। একজন ছেলে অপরজন মেয়ে। মনসুর বয়স ২ ও আরেকজন সামিয়া আক্তার বয়স ৪ বছর। এখনও জানে না তাদের মায়ের মৃত্যুর খবর। তাই প্রতিদিন মাকে পাশে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল থাকে তাদের হৃদয়। মায়ের একটু আদর আর ভালোবাসা এবং দেখার জন্য বায়না ধরে কাঁদে। কিন্তু তাদের মা জাহানারা বেগম (২২) গত ২৭ অক্টোবর বিষপানে আত্মহত্যা করে ছেড়েচেন এই পৃথিবী। আর তার আত্মহত্যার মূল কারণ হলো এসএমপি’র শাহপরাণ থানার সিরাজনগর গ্রামের প্রভাবশালি সিরাজ তালুকদারের ভাতিজা ইকবাল তালুকদারের (২০) ধারণ করা অশ্লীল ভিডিও। এ ঘটনার পরদিন ২৮ অক্টোবর এসএমপি’র শাহপরাণ থানায় ২০১২ সালের পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ও নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা নং ১৭ দায়ের করেন নিহতের ৬০ উর্দ্ধ বৃদ্ধা মা কমলা বিবি। ঘটনার ৯ দিন পেরিয়ে গেলেও ঐ আসামিকে ধরতে পারেনি পুলিশ। তাছাড়া মামলাটি তুলে নেয়ার জন্য ইকবালের পক্ষের লোকজন চাপ প্রদান করছেন বাদীনিকে।
জাহানারা বেগম এর পরিবার সূত্রে জানা যায়, এসএমপি’র শাহপরাণ থানার সিরাজনগর গ্রামের মৃত আব্দুল ওয়াবের মেয়ে নিহত জাহানারা বেগম (২২) একজন স্বামী পরিত্যাক্ত মহিলা। বিয়ের পর দ্বিত্বীয় ছেলে মনসুর জন্মের ৭ দিন আগে স্ত্রী ও সন্তানদের রেখে পালিয়ে যায় তার স্বামী আব্দুর রব (৩০)। গত দুই বছরেও স্ত্রী ও সন্তানের কোন খবর নেয়নি রব। আর এর একমাত্র কারণ হিসেবে জাহানারার পরিবার ইকবাল তালুকদারকে দায়ি করছেন। জীবন জীবিকা ও সন্তানদের লালন পালনের জন্য জাহানারা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে চাকুরী নেন সিলেট নগরীর খাদিমপাড়াস্থ মধুবন ফ্যাক্টরিতে। সেখানে চাকুরী নেয়ার পর প্রতিনিয়ত যাতায়াতের সময় তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিত ইকবাল। এ নিয়ে এলাকায় একাধিকবার সালিশ বৈঠকও হয়। ইকবাল প্রভাবশালি হওয়ায় নানা মাধ্যমে জাহানারাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় এবং রাজি না হলে বাচ্চাদের মেরে ফেলার হুমকীও প্রদান করে। এসকল হুমকী ও অব্যাহত চাপের কারণে এক পর্যায়ে রাজি হয়ে যান জাহানারা। যার ফলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গড়ে তুলে অনৈতিক সম্পর্ক। এক সময় সেই সম্পর্কের সুবাদে ফুসলিয়ে ধারণ করে অশ্লীল ভিডিও। সেই ভিডিও ক্লিপটি নিহত জাহানারার ছোটভাই আনোয়ারকে মোবাইলে শেয়ারইটের মাধ্যমে মোবাইলে প্রেরণ করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি প্রদান করে। ২৭ অক্টোবর আনোয়ার ঘরে গিয়ে তার মাকে বিষয়টি জানানোর সময় তা শুনে লজ্জায় আত্মহত্যা করেন জাহানারা। তার মৃত্যুর পর ইকবালের পক্ষের লোকজন জানাযা পড়তে ও খবর দিতেও বাঁধা প্রদান করে।
আত্মহত্যার পরদিন ২৮ অক্টোবর এসএমপি’র শাহপরাণ থানায় ২০১২ সালের পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ও নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা নং ১৭ দায়ের করেন নিহতের ৬০ উর্দ্ধ বৃদ্ধা মা কমলা বিবি। ঘটনার ৯ দিন পেরিয়ে গেলেও ঐ আসামিকে ধরতে পারেনি পুলিশ। তাছাড়া মামলাটি তুলে নেয়ার জন্য ইকবালের পক্ষে তার চাচা সিরাজ তালুকদার, পুতুল তালুকদার, শাবুদ্দিন তালুকদার, সুলতান, পাপ্পু ও তাদের পক্ষের লোকজন চাপ প্রদান করছেন বাদীনিকে। এ নিয়ে বিগত ২ নভেম্বর কমলা বিবি শাহপরাণ (রহ:) থানায় সাধারণ ডায়েরী নম্বর ৮১ দাখিল করেন। কিন্তু পুলিশ এখনও এসকল ব্যাপারে কোন কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়নি।
মামলার বাদীনি কমলা বিবি জানান, তার মেয়ে হত্যায় তিনি থানায় মামলা করলেও এখনও পুলিশ আসামিকে ধরতে পারেনি। উল্টো তার পরিবার ও তাকে প্রাণে হত্যার হুমকি প্রদান করা হচ্ছে এবং মামলা তুলে নেয়ার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া তার কলেজ পড়–য়া ছেলে আনোয়ারকে হত্যার জন্য সিরাজ তার লোকজন নিয়ে কয়েকবার হামলাও চালিয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শাহাজাহান আহমদ জানান, ইকবালের কারণে জাহানারা আত্মহত্যা করেছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলাও হয়েছে। আসামি আত্মগোপনে থাকায় তাকে ধরা যাচ্ছে না। তাবে তাকে আটকের জন্য পুলিশী অভিযান অব্যাহত আছে। তাছাড়াও বাদীনি ও তার পরিবারের লোকজনকে হুমকীর ব্যাপারে সাধারণ ডায়েরীর পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত অব্যাহত আছে।
এ ব্যাপারে শাহপরাণ (রহ:) থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহজালাল মুন্সি জানান, জাহানারা হত্যার পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য সকল চেষ্টা অব্যাহত আছে এবং আসামি পক্ষের লোকজনের হুমকির বিষয়টিও তদন্তাধীন আছে।