• ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

শাবিপ্রবিতে ভর্তি জালিয়াতি পুলিশ ও প্রশাসনের রহস্যজনক আচরণ

প্রকাশিত নভেম্বর ২৯, ২০১৬

শাবি প্রতিনিধি::::: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি  পরীক্ষায় জালিয়াতির চক্রান্তের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ৮জনকে গ্রেফতার করা হলেও এখনো কোন মামলা করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অন্যদিকে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে শাবি ছাত্রলীগের এক কর্মী আটক হওয়ার পর আশ্রয়দানকারী মূল অপরাধীদের বাঁচাতে পুলিশ মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরও পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে কয়েকজন সাংবাদিকের কাছে ব্যাখ্যা চান। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব থাকায় মুলহোতারা ধরা-ছোয়ার বাইরে রয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বাচাতে দুর্বল আইনে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের অভিযোগ করেছেন স্বয়ং ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
এদিকে ঘটনার দুদিন পার হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোন মামলা দায়ের করা হয়নি। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর রাশেদ তালুকদারকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি সাংবাদিকদের সামনে ছাত্রলীগের কোন নেতার জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেননি। অথচ গ্রেফতার হওয়া আল আমিন দীর্ঘদিন ধরে সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুলের রাজনীতি করতো।
অথচ শাবি ছাত্রলীগের সব গ্রুপের নেতারা ঘটনার পর থেকেই গ্রেফতার হওয়া আল আমিন এবং তাকে আশ্রয়দানকারীদের বিপক্ষে স্ট্যাটাস দিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার ইশাফাকুল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি নিজেই বাদী হয়ে হয়ে রবিবার সকালে মামলা  করেছেন বলে দাবি করেন। তবে মামলার কপি চাওয়া হলে তিনি নিশ্চুপ থাকেন।
অন্যদিকে জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) ওমর ফারুক জানান, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বারবার অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও ওনারা অপারগতা প্রকাশ করলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন ধরনের মামলা করেননি বলে তিনি জানান।
আটকের পর থেকে গত তিনদিন যাবত জালালাবাদ থানায় আসা যাওয়া এবং অবস্থান করছেন ছাত্রলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম। পরীক্ষার আগের রাত(২৫ নভেম্বর) থেকে জালালাবাদ থানায় দৌড়ঝাপ শুরু করেন নজরুল। শনিবার এবং রোববার তাকে ওসি আখতার হোসেনের কক্ষে অবস্থান করতে দেখা যায়। জালিয়াতি চক্রের আটক হওয়ার পর থেকেই নজরুল ইসলামের দৌড়ঝাপ লক্ষনীয়।
এদিকে জালিয়াত চক্রকে নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের ব্যাখ্যা জানতে সাংবাদিকের কাছে ফোন দিয়ে জানতে চান প্রক্টর । সাংবাদিকরা অভিযোগ করে বলেন, প্রক্টর মহোদয় জোর করে সংবাদের সোর্সের নাম জানার চেষ্টা করেন।

বিষয়টি স্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদার বলেন, নিউজের সোর্স আমি জনতে চাইবনা?
এদিকে ওসি আখতার হল থেকে আটকের বিষয়ে অস্বীকার করলেও ড. রাশেদ তালুকদার হল থেকে জালিয়াতি চক্রকে আটকের বিষয়ে স্বীকার করেন। অথচ ২১০ নং কক্ষ থেকে আল আমিনকে আটক করা হয় বলে হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দাবি করে আসছেন।
এদিকে আটকের সংখ্যা নিয়েও দ্বিমত দেখা গেছে। শাবির ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আটজন আটকের বিষয়ে জানালেও পুলিশের দুই কর্মকর্তা ৭জন আটকের বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন। ফলে জালালাবাদ থানা এবং শাবি প্রশাসনের এমন পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে কিছুটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে ফেসবুকে শাবি ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ লিখেন, গত ২৬ নভেম্বর(শনিবার) শাবির ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় । কিন্তু শাবির ছাত্র হিসেবে মনের মাঝে অজানা ভয়ের ধাক্কা লাগে, যখন শুনি জালিয়াতির মাধ্যমে একদল প্রতারক চক্র শাবিপ্রবিতে অনৈতিকভাবে ভর্তির চেষ্টা চালাচ্ছে ।
তিনি অভিযোগ করেন, প্রতারকচক্রের রাঘববোয়ালরা কোথায়? আটককৃত প্রতারকদের বিরুদ্ধে বর্তমান তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে মামলা না দিয়ে পুরোনো আইনে মামলা কেন ?
তিনি বলেন, যদি তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে মামলা হত, তাহলে শাস্তি বেশি হত। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন বাদী হয়ে মামলা করে নাই ? সেই প্রশ্নও মনে জাগে।
যারা এই ঘৃণ্য অপরাধকে নীরব থেকে সমর্থন দিচ্ছে এবং ঘটনাটিকে অন্যদিকে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে তারা প্রকৃত অপরাধীর চেয়েও জঘন্য অপরাধী । তবে যেন চুনোপুঁটি ধরতে যেয়ে রাঘববোয়ালদের ছাড়তে না হয় ।