• ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৪ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সিলেটে বাড়ছে তীর শিলং অপরাধ, নির্মূলে তৎপর প্রশাসন, ৩ এজেন্ট শনাক্ত

প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৭

আব্দুল খালিক
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শীলং। সিলট সীমান্তের একদম কাছাকাছি। শীলংয়রে সবচেেয় জনপ্রিয় একটি খেলা হচ্ছে ‘তীর খেলা’। অনেক ভারতীয়রা তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় এ খেলায় অংশ নিয়ে থাকেন। এখন এ খেলা শুধু ভারতে সীমাবদ্ধ নয়। সীমান্ত পেরিয়ে এ খেলা এখন এপার বাংলার সিলেটে ও অনুষ্ঠিত হয়। এ ‘তীর খেলা’য় বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নিচ্ছে। সিলেটের যে কোন এলাকায় বসেই তারা শীলং জুয়ায় বাজি ধরছে। এ খেলাটি সপ্তাহে ছয়দিনই বসে থাকে। প্রতিদিন দুইবার এ খেলার ড্র অনুষ্টিত হয়। সিলেট তাদের নিজস্ব এজন্টেদের মাধ্যমে ভারতের এজেন্টের সাথে জুয়ার আসরে সমন্বয় করে থাকে। আর ভারতীয় এ ভাগ্যের খেলায় স্কুল কলজেরে ছাত্র, শিক্ষক, দিন মজুর, রিক্সা ও যানবাহন চালক-শ্রমিকসহ যুবকরা অংশ নিচ্ছেন। আর এতে করে অনেক স্কুলগামী ছাত্ররা স্কুল ফাঁকি দিয়ে দিন দিন বিপদগামী হচ্ছে। তাই ছাত্রদের মনযোগ এখন বইয়ের পরিবর্তে তীর খেলার দিকেই বেশী। র্দীঘদিন ধরে এই খেলা চললেও এদের বিরুদ্ধে প্রশাসন নিরব ভূমকিা পালন করছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ২০ থেকে ২৫ বছর পূর্বে ভারতীয় ধনীরা এ রকম খেলাটি আবিস্কার করে। এর নাম রাখে মেঘালয়ের আঞ্চলিক ভাষায় ‘তীর খেলা’। স্থানীয়ভাবে খেলাটিকে অনকেই শিলং, ডিজিটাল খেলা, টুকা খেলা, নাম্বার খেলা, বোটকা খেলা, ভাগ্যের খেলা, ডিজিটাল নাম্বার খেলা ইত্যাদি নামে অবহিত করে থাকেন। খেলাটির ধরণ হচ্ছে এ রকম যে, এদেশের এজেন্টদের মাধ্যমে ১-৯৯ পর্যন্ত নাম্বার বিক্রয় করা হয় যে কোনো মূল্যে। লটারিতে ০ থেকে ৯৯ পর্যন্ত যে কোনো সংখ্যা কমিয়ে নেওয়া যায়। সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে সর্বচ্চো ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাজি ধরা যায়। যত মূল্যে সংখ্যাটি বিক্রয় হবে তার ৭০ গুণ লাভ দেয়া হবে বিজয়ী নম্বরকে। অর্থাৎ ১০ টাকায় ৭০০ টাকা। একই নম্বর একাধিক লোকও খেলতে পারেন। সবাই কেনা দামরে চেয়ে ৭০ গুণ বেশি টাকা পাবেন। প্রতিদিন বিকাল সোয়া ৪টায় ও সাড়ে ৫টায় দুইবার এ লটারি ড্র অনুষ্টিত হয়ে থাকে। ড্র ফলাফল দেওয়া হয় অনলাইনে। ভারতের শিলং তীর teercounter.com এ ওয়বেসাইটরে মাধ্যমে জুয়ার আসরটি পরিচালনা করা হয়। আর এ ওয়বে সাইটরে মাধ্যমে ফলাফল জানাও যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সিলেট শহরের কাজির বাজার, শেখঘাট, বেতের বাজার, শামীমাবাদ, কাজলশাহ্, রিকাবীবাজার, মদিনা মার্কেট, কুমারগাঁও বাসষ্ট্যান্ড, তেমুখী, টুকের বাজার, আখালিয়া, বালুচর ,টিলাগড়, আম্বরখানা, মেন্দিবাগ, কদমতলী, বলাউরা বাজার, হাউসা, ধনপুর, ফতেহপুর বাজার, করিমগঞ্জ বাজার, দশগ্রাম বাজার, বিশ্বানাথের লামাকাজী পূর্বপার, লামাকাজী বাজার, লামাকাজী বাস পয়েন্ট, শৎপুর, গোলন্দর বাজার, পরগনা বাজার, আমতৈল বাজার, রামপাশাসহ শহরের প্রায় শতাধিক স্পটে ভারতীয় এ জুয়ার আসর বসে থাকে। আর এসব জুয়ার নেতেৃত্বে রয়েছেন বিভিন্ন দলের নেতার্কর্মী।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও ৭নং মোগলগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হিরণ মিয়া জানান, নাম্বার বইয়ের মালিকরা হোটেলে বসে নিরাপদে খেলার নাম্বার টুকন বিক্রয় করছেন। তাদের লিডারদের কারণে কোন কিছু বলতে পারছে হোটেল মালিকরা। এমন কি গত এক থেকে দেড় মাস আগে তীর খেলার এজেন্টদেরকে পুলিশ তাড়া করার সময় একজন জনপ্রিয় শালিশ ব্যাক্তি সুরমা নদীতে পড়ে মারা যান। যার নাম শাহিন আহমদ। পুলিশ বার বার অভিযান চালিয়ে অপরাধীদের গ্রেফতার করলেও মূল হোতারা রয়েছে ধরা ছোয়ার বাহিরে।
ইতিপূর্বে সিলেটে তীর খেলার আস্তানা ধ্বংস করাসহ খেলায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে প্রশাসনের বরাবরে স্মারকলিপিও প্রদান করেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। কেউ কেউ আবার এমন অপরাধ দমনে নিজ নিজ এলাকায় একটি কমিটি তৈরী করে সেই কমিটির মাধ্যমে প্রশাসনকে সাহায্য করে থাকেন। ইতিপূর্বে সিলেটের বেশ কয়েকটি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে তীর খেলায় জড়িতদের গ্রেফতার করায় পুলিশের প্রতি ওইসব সংগঠনের নেতারা সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, পুলিশ মূল অপরাধী ও জেলার প্রত্যেকটি স্থানে লুকিয়ে থাকা এজেন্টদের শীঘ্রই গ্রেফতার করে জনতার সামনে প্রকাশ করবে।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) মো. রহমত উল্লাহ জানান, শীলংয়ে অনলাইনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত জুয়া খেলা সিলেট সংক্রমণ ব্যধির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। এ খেলায় মানুষ এতই আস্থাশীল হয়েছে যে, একই পরিবারের বাবা-মা ও ছেলে মিলে জুয়ার বাজি ধরছেন। পুলিশ জুয়ার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছে। যেখানেই জুয়ার আসরে খবর পাচ্ছে, সেখানেই স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় অপারেশন চালাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, এ পর্যন্ত সিলেটে অবস্থানরত তীর শিলংয়ের মূল তিন হোতাকে শনাক্ত করা গেছে। অবশ্যই তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে, যে কোন সময় তারা গ্রেফতার হতে পারেন। তখনই মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের নাম প্রকাশ করা হবে।