• ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৪ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সংস্কারের দাবিতে পরিবহন ধর্মঘট চলছে, যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে

sylhetsurma.com
প্রকাশিত মার্চ ১৩, ২০১৭

জকিগঞ্জ সংবাদদাতা :
জকিগঞ্জ-সিলেট সড়ক সংস্কারের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। দীর্ঘদিন থেকে জকিগঞ্জ-সিলেট সড়কের বেহাল দশা। একাধিকবার শ্রমিক-মালিক সমিতি ধর্মঘটের ডাক দিলেও জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ও দ্রুত সড়ক সংস্কারের আশ্বাস পেয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে মালিক-শ্রমিক সংগঠন। জেলা প্রশাসনের আশ্বাসের কোন বাস্তবায়ন না হওয়ায় রবিবার থেকে আবারও শ্রমিকরা সড়ক সংস্কারের দাবিতে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। শ্রমিকদের পরিবহন ধর্মঘটের কারণে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রবিবার সকাল থেকে জকিগঞ্জ থেকে দূরপাল্লার কোন যানবাহন ছেড়ে যায়নি। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ী ঘন্টার পর ঘন্টা সড়কে কাটাতে হয়েছে। গন্তব্যে যেতে পারেননি কেউই। ধর্মঘট সফল করতে সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্নস্থানে শ্রমিকরা অবস্থান করতে দেখা গেছে। চলাচলে চরম কষ্ট পোহালেও সড়ক সংস্কারের কথা চিন্তা করে পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটে সমর্থন জানিয়েছেন জকিগঞ্জ যাত্রী কল্যাণ পরিষদসহ সর্বস্তরের জনগণ। রবিবারের পরিবহন ধর্মঘটের কারণে কয়েক কোটি টাকা লোকসান গুণতে হবে সরকারকে।
প্রায় ২ বছর হতে জকিগঞ্জ উপজেলা থেকে জেলা শহর পর্যন্ত ৯১ কিলোমিটার সড়ক যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রয়োজনের তাগিদে লোকজন চলাচল করছেন। পুরো সড়কটি ছোট বড় খানাখন্দে এক মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানের পিচ উঠে খন্ড খন্ড পুকুরে রূপ নিয়েছে। জকিগঞ্জ-সিলেট, আটগ্রাম-সিলেট ও শেওলা-সিলেট সড়কে ভাঙ্গন শুরু হওয়ার পর থেকেই দ্রুত সংস্কার করার কথা শুনা গেলেও এখন পর্যন্ত সংস্কারের কোন খবর নাই। প্রতিদিন এ তিন সড়ক দিয়ে জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা, মৌলভীবাজারের বড়লেখাসহ বিভিন্ন উপজেলার মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। তাছাড়া জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের সুতারকান্দি শুল্ক ষ্টেশনের মালবোঝাই ট্রাকও দেশের বিভিন্ন স্থানে মালামাল নিয়ে যাওয়া আসা করে। ভাঙ্গাচুড়া সড়কের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে অনেক নিহত ও আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। গত ১৭ সেপ্টেম্বর এ সড়কে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় একই পরিবারের দুই কন্যা শিশু নিহত ও প্রায় ১৫ জন আহত হয়েছেন। বৃষ্টিতে কাঁদাজল আর রোদে ধূলার রাজ্যে পরিণত হয় ভাঙ্গচুড়া এ সড়ক।
বিশেষ করে সড়ক ও জনপথের অধিনে চারখাই থেকে আটগ্রাম-কালীগঞ্জ-জকিগঞ্জ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধিনে জকিগঞ্জ বাজার থেকে আটগ্রাম পর্যন্ত সড়ক পথ চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন সড়কটির কোথাও না কোথাও গাড়ী গর্তে আটকা পড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত করে। ভাঙ্গা সড়কে জন দুর্ভোগ চরম মাত্রায় পৌছেছে। দুর্ভোগের কারণে মানুষ খুব বেশী প্রয়োজন ছাড়া এ সড়ক দিয়ে কোথাও যেতে বের হন না। রোগীদের নিয়ে জেলা সদরের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে অনেক রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে বলে জানাগেছে। কিছুদিন পূর্বে স্থানীয় সংসদ সদস্য বিরোধীদলীয় হুইপ সেলিম উদ্দিন কানাইঘাট থেকে শাহবাগ ১৮ কিলোমিটার সড়কে ১৮ কোটি টাকা ও শাহবাগ থেকে চারখাই পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সড়কে ৯ কোটি ১০ লক্ষ টাকার বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু কাজ এখনো শুরু হয়নি।
জকিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী খলিল উদ্দিন বলেন, এ সড়ক নিয়ে তাঁরা প্রতিদিন সাধারণ মানুষের গালমন্দ শুনছেন। বিশেষ করে পৌরসভার ভেতরে জকিগঞ্জ বাজারের রাস্তার অবস্থা খুবই নাজুক। পৌর এলাকার ভিতরের সড়কের সংস্কার কাজের টেন্ডার হয়েছে কিন্তু সওজ কর্মকর্তারা ওয়ার্ক অর্ডার দিচ্ছেন না। ওয়ার্ক অর্ডারের জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা সফটওয়্যার নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে। কিন্তু সফটওয়্যার নষ্ট হওয়ার অজুহাতকে তিনি রহস্যজনক বলে মনে করছেন। জকিগঞ্জের মানুষের সাথে সওজ কর্তৃপক্ষ তামাশা করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
পরিবহন শ্রমিক আব্দুল আব্দুশ শহীদ বলেন, পুরো সড়কটি ভাঙ্গচুড়া কিন্তু এমপি সাহেব শাহবাগ থেকে চারখাই পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সড়কে বরাদ্দ দিয়েছেন। তিনি দাবী জানিয়ে বলেন, দ্রুত জকিগঞ্জ-সিলেট পুরো সড়কটি সংস্কার করতে হবে। অন্যথায় আমাদের ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। এ ব্যাপারে কথা বলতে সড়ক ও জনপথ শাখা সিলেটের সাথে বারবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও কেউ মোবাইল কল রিসিভ করেনি।