• ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

অনাহারে যাদুকাটা নদীর অর্ধলক্ষাধিক পাথর শ্রমিক

sylhetsurma.com
প্রকাশিত মার্চ ১৬, ২০১৭

সুনামগঞ্জ  সংবাদদাতা :
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত নদী যাদুকাটা। এই নদীর মাঝ থেকে কুদাল ও বেলছা দিয়ে বালি ও পাথর উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক পুরুষ ও নারী শ্রমিক। কিন্তু নদীর মাঝ থেকে বালি ও পাথর উত্তোলন করা বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। ফলে শ্রমিকরা তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে দিন যাপন করছে। তাদের এই দুঃখ দুর্দশা দেখার কেউ নেই। অথচ স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে ড্রেজার ও বোমা মেশিন দিয়ে যাদুকাটা নদীর তীর কেটে বালি ও পাথর উত্তোলন করে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা বিক্রি করেছে। তারপরও নেওয়া হচ্ছে না আইনগত কোন পদক্ষেপ।
এ ব্যাপারে স্থানীয়রা জানায়, এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাদের অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাওয়ার জন্য গত কয়েক মাস ধরে এলাকায় গ্র“পিং তৈরি করে রেখেছে। এবং উপজেলা প্রশাসনকে দিয়ে আইনি জটিলতা সৃষ্টি করে যাদুকাটা নদীর মাঝে শ্রমিকদের কোন কাজ করতে দিচ্ছে না। অন্যদিকে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা উপজেলার মাহারাম ও গাগটিয়া এলাকায় অবৈধভাবে ড্রেজার ও বোমা মেশিন দিয়ে অবাধে নদী তীর কেটে বালি-পাথর উত্তোলন করে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা বিক্রি করেছে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত নেওয়া হয়নি আইনগত কোন পদক্ষেপ। আর যে সকল শ্রমিকরা মাথার গাম পায়ে ফেলে কোদাল ও বেলছা দিয়ে নদীর মাঝ থেকে বালি-পাথর উত্তোলন করে তাদের সংসার চালাচ্ছে তাদের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। ফলে অসহায় শ্রমিকদের জীবনে নেমে এসেছে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। কিন্তু যুগ যুগ ধরে শ্রমিকরা উন্মুক্ত ভাবে কোন প্রকার বাধা ছাড়াই যাদুকাটা নদীর মাঝ থেকে বালি-পাথর উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।
এ ব্যাপারে শ্রমিকরা জানায়, দীর্ঘদিন যাবত যাদুকাটা নদীটি বন্ধ থাকায় ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে শ্রমিকরা উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসক বরাবর একাধিক বার আবেদন নিবেদন করেছে। কিন্তু তাতে কোন সুফল পায়নি শ্রমিকরা। অবশেষে নিরুপায় হয়ে শ্রমিকদের প্রতিনিধি হয়ে লাউড়গড় গ্রামের নারী শ্রমিক আম্বিয়া বেগম বাদী হয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন নং-২৬৮৫/২০১৭ইং দায়ের করেন। এই পিটিশনের প্রেক্ষিতে গত ৭ই মার্চ হাইকোর্টের বিচারপতি মোছাঃ নাইমা হায়দার ও আবু তাহের মোঃ সাইফুর রহমান যাদুকাটা নদীতে শ্রমিকদের ৬মাসের জন্য কাজ করার নির্দেশ দেন। আর এই রায় পেয়ে শ্রমিকরা তাদের পরিবার-পরিজনদের ক্ষুধা নিবারণের জন্য আবারও যাদুকাটা নদীতে বালি-পাথর উত্তোলনের কাজ করতে যায়। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নদী তীর কাটা বন্ধ না করে নদীর মধ্য থেকে কোদাল, বেলছা ও দেশীয় যন্ত্রপাতি দিয়ে বালি-পাথর উত্তোলন করা বন্ধ করে দেন। এর ফলে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক বালি-পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিকরা আবারও বেকার হয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে নারী শ্রমিক সুজাতা বেগম, খালেদা বেগম,রহিমা বেগম বলেন-যাদুকাটা নদীতে পাথর ও কয়লা উত্তোলন করে প্রতিদিন ৩ থেকে ৫শত টাকা বিক্রি করে সংসার চালাতাম। কিন্তু নদীটি বন্ধ করে দেওয়ায় ছেলে-মেয়ে নিয়ে না খেয়ে দিন যাপন করছি। পাথর শ্রমিক আব্দুর রহমান, বজলুর রহমান, বিল্লাল হোসেন, আবুল কাসেমসহ আরো অনেকে বলেন-আমাদের এলাকায় যাদুকাটা নদী ছাড়া আর কোথাও কাজ করার কোন সুযোগ না থাকায় স্ত্রী সন্তান নিয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। নদীর মাঝে কাজ করতে বাধা দিলে আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।
লাউড়গড় বালি-পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ওসমান গনি ও বাদাঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বলেন, পাহাড়ি ঢলের সাথে ভেসে আসা বালি ও পাথর নদীর মাঝ থেকে উত্তোলন করে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিক তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। কিন্তু প্রশাসন নদীটি বন্ধ করে দেওয়ায় শ্রমিকদের জীবনে নেমে এসেছে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ।
উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, আমি সরেজমিন যাদুকাটা নদীর চরে গিয়ে দেখেছি শ্রমিকরা কত কষ্ট করে বালি থেকে কয়লা ও পাথর উত্তোলন করে। কিন্তু নদীটি বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা সীমাহীন কষ্টের মধ্যে রয়েছে। এ ব্যাপারে আমি ও আমার পরিষদের সকল সদস্যরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত হয়ে অসহায় শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের একমাত্র অবলম্বন যাদুকাটা নদীটি উন্মুক্ত রাখার জন্য দাবী জানিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, আদালতের রায়ের বিষয়টি আমার জানা নেই, আমি যাদুকাটা নদী পরিদর্শনের গিয়েছিলাম শ্রমিকদের কাজে কোন প্রকার বাধা দেইনি।