• ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী এলাকায় সেতুর অভাবে ৩৫ গ্রামের দুর্ভোগ

sylhetsurma.com
প্রকাশিত মার্চ ১৭, ২০১৭

মৌলভীবাজার  সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী এলাকা খলিলপুর ইউনিয়নের খলিলপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে এরাবরাক নদী (স্থানীয়দের কাছে মরা গাং হিসেবে পরিচিত)। ওই নদীর ওপারে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়ন। বরাক নদীর অর্ধেক মৌলভীবাজার ও অর্ধেক হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের খতিয়ানে রয়েছে। নদীর মালিক দুই জেলাবাসী। ব্যবহার করছেন উভয় জেলার স্থানীয় বাসিন্দারা। নদীটি মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলাবাসীর মিলনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। সেতু না থাকায় সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুই জেলাবাসীর চলছে যোগাযোগ। প্রতি বছর দীর্ঘ ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্য এ নদীতে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করতে খরচ হয় প্রায় লক্ষাধিক টাকা। এলাকাবাসী চাঁদা তুলে ব্যয়ভার বহন করেন। নদীতে সেতু হলে মৌলভীবাজার-হবিগঞ্জ বাইপাস রাস্তা হিসেবে এটি ব্যবহার করা যাবে। ত্বরান্বিত হবে দুই জেলার সার্বিক উন্নয়ন। বরাক নদীতে সেতু না থাকার কারণে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মৌলভীবাজার অংশের প্রায় ৩৫ হাজার বাসিন্দা।
স্বাধীনতার পর থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিভিন্ন দফতরে আবেদন-নিবেদন করেও আজ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি নদী তীরবর্তী মৌলভীবাজার অংশের কেশবচর, সাবটিয়া, দেওয়াননগর, হলিমপুর, ঘোড়ারাই, কাটারাই, কঞ্চনপুর, চাঁনপুর, নামুয়া, খলিলপুর ও সাদুহাটি এবং হবিগঞ্জ অংশের ফরিদপুর, নোয়াহাটি, সিটফরিদপুর, ধর্মনগর, আলমপুর, নাজিমপুর, ফরাসতপুর, বখশিপুর, মুকিমপুর ও সিছনপুর গ্রামসহ উভয় জেলার ৩৫ গ্রামের লোকের। যার কারণে অর্থনৈতিক, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগের দিক দিয়ে পিছিয়ে রয়েছে উভয় জেলার প্রায় ৫০ হাজার লোক।
সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমান, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী মরহুম সৈয়দ মহসিন আলীর কাছে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে একাধিক আবেদন করা হয়েছিল। তারা পরিদর্শন করেছিলেন নদী তীরবর্তী এলাকা।
সর্বশেষ গেল ১৫ আগস্ট ২০১৬ ইং তারিখে  মৌলভীবাজার-৩ আসনের (সদর-রাজনগর) অংশের সংসদ সদস্য সৈয়দা সায়রা মহসিন ও হবিগঞ্জ-১ আসনের (নবীগঞ্জ-বাহুবল) অংশের সংসদ সদস্য এমএ মুনিম চৌধুরীকে অতিথি করে উভয় জেলার বাসিন্দাদের উদ্যোগে সভা করা হয়েছিল। তারা উভয়েই আশ্বস্থ করেছেন সেতুটি নির্মাণ করে দেবেন বলে।
নবীগঞ্জ অংশে রয়েছে রপ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সানফ্লাওয়ার জুনিয়র স্কুল, উদয়ন বিদ্যাপিঠ, উলখান্দি এতিমখানা, আউশকান্দি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, অরবিট হসপিটাল, কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সৈয়দপুর ফাজিল মাদ্রাসা, ইয়াকুবিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা, দাখিল মাদ্রাসা, ব্যাংক ও বীমাসহ আরও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। খলিলপুর ইউনিয়ন মৌলভীবাজার শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে থাকায় নবীগঞ্জ অংশের ওই সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্বল্প সময়ে যোগাযোগ করা সুবিধাজনক। বিশেষ করে মুমূর্ষু রোগী ও গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগ পোয়াতে হয় ওই অঞ্চলের লোকদের। সেতু না থাকায় নদীর ওপারের নবীগঞ্জ অংশের হাসপাতালগুলোতে যেতে পারে না তারা। যার কারণে বাধ্য হয়ে রোগীর জীবন বাঁচাতে ৩৫ কিমি. দূরের মৌলভীবাজার শহর অথবা ২৫ কিমি. দূরের সরকার বাজার হয়ে শেরপুরে যেতে হয়।
ইতিমধ্যে অনেক রোগীই রাস্তায় মারা গেছেন। অথচ ওই সেতু হলে হাসপাতাল যেতে এলাকাবাসীর সময় লাগবে ৮-১০ মিনিট।
ওই আউশকান্দি বাজারের পাশ দিয়েই ঢাকা-সিলেট বিশ্ব রোড (প্রস্তাবিত ৪ লেন রোড) এবং ৮ কিমি. দূরে শ্রীহট্ট ইকোনমিক জোন অবস্থিত।
ইকোনমিক জোনের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ করতে পারলে বৃহত্তর এ অঞ্চলের লোকের বেকারত্ব দূর হবে। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এগিয়ে যাবে এ অঞ্চলের লোক। বিশ্ব রোড দিয়ে নবীগঞ্জ হয়ে অতি সহজেই ঢাকা ও সিলেটের সঙ্গে স্বল্প সময়ে যোগাযোগ করা দুই জেলাবাসীর জন্য অতি সহজ।
দেখা যায়, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, শ্রমিক, চাকরিজীবীসহ নানা পেশার লোক ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘ ৩০০ মিটার নদীটি পার হচ্ছে।
এ সময় স্কুল শিক্ষার্থী ফাতেমা, আয়শা, তামান্না, হাবিব, বিলাল, সাজু, পরে ইকবালসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলে তারা বলে, ৩০০ মিটার সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যেতে অনেক ভয় হয়। বর্ষা ও বৃষ্টির দিনে স্কুলে যাওয়াই সম্ভব হয় না।
কেশবচর এলাকার আবদুল বশির, শিক্ষক আবদুল হাই, মাহমুদ মিয়া, সুব্রত চন্দ্র বিশ্বাস, আমিরুল ইসলাম শাহেদ, ডা. জুয়েল আহমদ ফয়েজসহ এলাকার শতাধিক লোক বলেন, সেতু না হওয়ায় আমাদের মৌলভীবাজার অংশের ২২টি গ্রামের ৩৫ হাজার লোক পিছিয়ে রয়েছেন।