• ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

মানবাধিকারের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

sylhetsurma.com
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৭

সিলেট সুরমা ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবীন পুলিশ সদস্যদের সততা, পেশাদারিত্ব ও শৃঙ্খলার সাথে দেশের সার্বিক কল্যাণে নিয়োজিত থেকে জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদানের আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ সদস্যদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।’
তিনি দৃঢ়আস্থা প্রকাশ করে বলেন, ‘নবীন পুলিশ কর্মকর্তাগণ অর্জিত জ্ঞান, শৃঙ্খলা, পেশাদারিত্ব, সততা এবং নিষ্ঠার সাথে দেশের সার্বিক কল্যাণে নিয়োজিত থাকবেন।’
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমীতে ৩৪তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের শিক্ষানবিস সহকারী পুলিশ সুপারদের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নবীন সদস্যদের শিক্ষা সমাপনী প্যারেডের অভিবাদন গ্রহণ, প্যারেড পরিদর্শন এবং বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী সহকারী পুলিশ সুপার (শিক্ষানবিস)দের মধ্যে পদক বিতরণ করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির কুচকাওয়াজের অভিবাদন মঞ্চের কাছে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামাল, পুলিশের আইজিপি একেএম শহীদুল হক এবং পুলিশ একাডেমীর প্রিন্সিপাল, অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ নজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের কূটনিতিকবৃন্দ এবং পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে পুলিশ সদস্যদের জাতির পিতার বক্তৃতার ‘আজকে আপনারা আরও প্রতিজ্ঞা করুন, আমরা এমন পুলিশ গঠন করব-যে পুলিশ হবে মানুষের সেবক, শাসক নয়,’ উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, ‘পুলিশকে আমি সব সময় আইনের রক্ষকের ভূমিকায় দেখতে চাই। দেশের প্রচলিত আইন, সততা এবং নৈতিক মূল্যবোধই হবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের পথ নির্দেশক।’
বাংলাদেশ পুলিশকে শান্তি, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রতীক আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু স্বাধীনতা সংগ্রামেই নয়, দেশের যে কোন সঙ্কটময় মুহূর্তে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা সাহসিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন, গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ পুলিশের আন্তরিকতা, কর্মদক্ষতা ও পেশাদারিত্ব দেশবাসীর কাছে প্রশংসিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমন এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও সংঘাতপূর্ণ কর্মতৎপরতা রোধসহ সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে বাংলাদেশ পুলিশের দক্ষতা ও সক্ষমতা বিভিন্ন মহলে স্বীকৃতি লাভ করেছে।’
‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করেছে,’যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী দক্ষ ও জনবান্ধব পুলিশ সার্ভিস গঠনে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের প্রত্যাশার অনুযায়ী-চৌকস, পেশাদার, দক্ষ ও জনবান্ধব পুলিশ সার্ভিস গঠনে আমাদের সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী ‘হোম অব পুলিশ’ খ্যাত বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, সারদার সার্বিক উন্নয়নে আমরা ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছি।
তিনি বলেন, নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ নিশ্চিতকল্পে প্রস্তাবিত একাডেমি সংলগ্ন পদ্মা নদী তীরবর্তী অতিরিক্ত ১০০ (এক শত) একর খাস জমি বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তাঁর সরকার বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিকে সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এজন্য প্রতিষ্ঠানটির সাংগঠনিক কাঠামো সংস্কার, জনবল বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় যানবাহন, সরঞ্জামাদি এবং লজিস্টিক সরবরাহ অব্যাহত রাখা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই একাডেমীর আধুনিক শ্রেণীকক্ষ, কম্পিউটার ল্যাব, ল্যাংগুয়েজ ল্যাব, ফরেনসিক ডেমোনাস্ট্রেশন ল্যাব, ড্রাইভিং ও শ্যুটিং সিমিউলেটর যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদানে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের আধুনিক প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে ‘পুলিশ স্টাফ কলেজ প্রতিষ্ঠা’ করা হয়েছে। ‘৯৬ সালে প্রথম তিনি যখন সরকারে আসেন এটি করে যান, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রশ্নে তাঁর সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির পুনরোল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশ সদস্যদের সাফল্যের প্রশংসা করে বলেন, ‘জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের অব্যাহত সাফল্য শুধু দেশেই নয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসিত হচ্ছে।’
তিনি এ সময় জঙ্গি বিরোধী অভিযানে শহীদ পুলিশ সদস্যদের আত্মত্যাগের কথা গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে বিভিন্ন ক্যাডারের ৭৩৯ টি পদ সৃষ্টি, বাংলাদেশ পুলিশে আরো ৫০ হাজার জনবল নিয়োগের সিদ্ধান্ত পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে ‘কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট’ গঠন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ সৃষ্টি, আরো বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট যেমন-‘পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)’, ‘ট্যুরিস্ট পুলিশ’, ‘নৌ পুলিশ’ এবং ২টি ‘স্পেশাল সিকিউরিটি এন্ড প্রটেকশন’ ব্যাটালিয়ন, ‘গার্ড এন্ড প্রটেকশন পুলিশ’ গঠনের উদ্যোগ তুলে ধরেন।
এছাড়া, পুলিশ সদস্যদের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত এসআই/সার্জেন্ট পদকে ৩য় শ্রেণী হতে ২য় শ্রেণীতে এবং ইন্সপেক্টর পদকে ২য় শ্রেণী হতে ১ম শ্রেণী (নন-ক্যাডার) পদে উন্নীতকরণ,ঝুকি ভাতা প্রবর্তন, পুলিশ হেল্প লাইন চালু এবং জাতির জনক প্রদত্ত আইজিপি’র র‌্যাঙ্ক ব্যাজ পুনঃ প্রবর্তনেরও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তথ্য প্রযুক্তির সাইবার অপরাধ, তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারসহ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশ পুলিশকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে পুলিশের প্রশিক্ষণ ও আধুনিকায়নে সকল পর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এপিবিএন’ নামের বিশেষায়িত ট্রেনিং সেন্টারসহ সারাদেশে ৩০টি ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। আরো ৪টি স্থাপনের কাজ চলছে।
সেইসাথে তথ্য প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট অপরাধ তদন্তে পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে সিআইডিতে ‘সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেন্টার’ এবং ‘সাইবার ক্রাইম ট্রেনিং সেন্টার’ স্থাপন করা হয়েছে,বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার পুলিশের আবাসন, রেশন, চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ, লজিস্টিক, যানবাহন, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণসহ সকল ধরণের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অব্যাহত রেখেছে।
এসময় নারী পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ প্রসংগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার পথ অনুসরন করে পুলিশের বিভিন্ন স্তরে নারীদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। ২০১৫ সাল থেকে ট্রাফিক সার্জেন্ট পদেও নারীদের নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা সর্বপ্রথম পুলিশে নারীদের নিয়োগ প্রদান করেন।
বক্তৃতার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনদের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে রাজধানীর রাজারবাগে পুলিশ বাহিনীর দুর্জয় প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথাও উল্লেখ করেন।
শিক্ষানবীশ এএসপি সন্দ্বীপ সরকার প্যারেড কমান্ডার হিসেবে এদিনের কুচকাওয়াজ পরিচালনা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের মধ্যে সন্দ্বীপ সরকার ‘বেষ্ট প্রবেশনার’ মো.মাসুকুর রহমান ‘বেষ্ট একাডেমিক’ এবং মো. বেলাল হোসেন ‘বেষ্ট ইন হর্সম্যানশীপ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে সম্মাননা পদক গ্রহণ করেন।
বিসিএস ৩৪তম ব্যাচে সফলভাবে মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্নকারী ২৬ জন নারীসহ ১৪১ জন নবীন সহকারী পুলিশ সুপার এদিন কর্ম জীবনে প্রবেশ করেন। (বাসস)