• ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সিলেটের শহর-গ্রামে দুর্গোৎসবের ব্যাপক প্রস্তুতি

sylhetsurma.com
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭

সিলেট সুরমা ডেস্ক : আর মাত্র ক’দিন পরই শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। তাই সিলেট জুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। শহর-গ্রামে সর্বত্র চলছে পূজার প্রস্তুতি। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে পূজাম-প তৈরিসহ আনুসাঙ্গিক কাজ। মৃৎশিল্পীরা ব্যস্ত তাদের নিপুণ হাতে গড়া প্রতিমার সাজসজ্জায়। তারা তুলির আঁচড় টানছেন প্রতিমার গায়ে। নতুন জামা-কাপড় পরে পূজায় অংশ নিতে অনেকেই ছুটছেন শহরের বাজারে। তাই বিপনীবিতানগুলোতেও ভিড় বেড়েছে।
২৬ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠী। ওইদিন থেকে ম-পে ম-পে বেজে উঠবে ঢাকঢোল আর কাঁসার শব্দ। পাঁচদিনব্যাপী উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে ৩০ সেপ্টেম্বর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে। তবে মহালয়ার দিন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেবীর আগমনী উৎসব শুরু হয়। আর এবার মহালয়া হলো আজ (মঙ্গলবার)। তাই আজ থেকেই পূজার আনুষ্ঠানিকতা।
সিলেট জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী এবার সিলেট জেলায় মোট ৫৭৬টি ম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। সিলেট মহানগরীতে পূজা হবে ৬৪ ম-পে। যার মধ্যে সর্বজনীন ৪৭ ম-পে এবং পারিবারিক উদ্যোগে হবে ১৭ ম-পে। এছাড়া জেলার সদর উপজেলায় ৫০ ম-পে, দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ২১ ম-পে, গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ৬৩ ম-পে, বালাগঞ্জ উপজেলায় ২৭ ম-পে, কানাইঘাট উপজেলায় ৩০ ম-পে, জৈন্তাপুর উপজেলায় ২২ ম-পে, বিশ্বনাথ উপজেলায় ২৫ ম-পে, গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৩৯ ম-পে, জকিগঞ্জ উপজেলায় ৯১ ম-পে, বিয়ানীবাজার উপজেলায় ৪৯ ম-পে, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ২৬ ম-পে, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় ৩৬ ম-পে ও ওসমানীনগর উপজেলায় ৩৩ ম-পে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। এসব উপজেলার মধ্যে পারিবারিকভাবে আয়োজন করা হয়েছে ৬০টি ম-পে। বাকি ম-পগুলোতে পূজা অনুষ্ঠিত হবে সর্বজনীন আয়োজনে।
সিলেট নগরী ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কাদা-মাটি, বাঁশ, খড়, সুতলি দিয়ে শৈল্পিক ছোঁয়ায় তিলতিল করে গড়ে তোলা দেবী দুর্গার প্রতিমার সাজ-সজ্জায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। পুরুষের পাশাপাশি নারী এবং শিশু শিল্পীরাও কাজ করছেন গভীর রাত পর্যন্ত। তাই এখন মৃৎপল্লীর বাসিন্ধাদের অনেকেরই রাত কাটছে নিদ্রাহীনচোখে।
সিলেট নগরীর ‘মৃৎপল্লী’ দাড়িয়াপাড়া গিয়ে দেখা যায়, খড় ও মাটি দিয়ে ইতোমধ্যে প্রতিমার কাঠামো নির্মাণ করা সম্পন্ন হয়েছে। চলছে সাজ-সজ্জা ও রংয়ের কাজ। মৃৎশিল্পীরা গভীর মনোযোগে প্রতিমার গায়ে রঙতুলির চালাচ্ছেন। তাদের তুলির শৈল্পিক আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে দেবীর সুদর্শনা রূপ।
আলাপকালে মৃৎশিল্পী শঙ্কর পাল জানান, প্রতিমার কাঠামো তৈরির কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। চলছে সাজ-সজ্জা ও রঙের কাজ। তবে এবার বৃষ্টি এবং মেঘলা আবহাওয়ার কারণে প্রতিমা শুকাতে অনেক সময় লেগেছে বলে জানান তিনি। শঙ্কর পালের কারখানার জ্যেষ্ঠ কারিগর মুন্সিগঞ্জ থেকে আগত রাধে শ্যাম জানান, তিনি প্রায় ৫ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। এবার অর্ধশতাধিক প্রতিমা তৈরি করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বছরের প্রায় ৮ মাসই প্রতিমা বানানোর জন্য সিলেটে থাকতে হয়। তার তৈরি প্রতিমা নগরীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হয় বলেও জানান রাধে শ্যাম। লামাবাজারের তিন মন্দিরের প্রতিমা তৈরির কারিগর সাগর পাল বলেন, এবার ৯টি ম-পের জন্য প্রতিমা তৈরি কাজ পেয়েছি। ইতোমধ্যে কাঠামো বানানো শেষ হয়েছে। চলছে সাজ-সজ্জা ও রঙের কাজ। মাছুদিঘিরপারের ত্রিনয়নী সার্বজনীন পূজা কমটির প্রতিমা তৈরির কারিগর মৃৎশিল্পী হনু পাল বলেন, বৃষ্টির কারণে প্রতিমা শুকাতে দেরি হলেও এখন সে সমস্যা কেটে গেছে। ভালভাবে রঙ দেওয়া যাচ্ছে। চলছে সাজ-সজ্জার কাজও।
এদিকে, পূজাম-প নির্মাণের কাজ চলছে পুরোদমে। অনেক ম-পে প্রতিমা নির্মাণ ও সাজ-সজ্জা করতেও দেখা যায় মৃৎশিল্পীদের।
সুন্দর পরিবেশে পূজা উদযাপনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে যথাযথ বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রতিমা তৈরির স্থানগুলোতে গত বৃহস্পতিবার থেকে দেওয়া হচ্ছে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা। দুর্গাপূজা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিত সদস্যদের পাশাপাশি অতিরিক্ত সদস্যও মাঠে নামানো হয়েছে।
‘মৃৎপল্লী’ দাড়িয়াপাড়ায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এএসআই প্রবীর শীলের সাথে কথা বলেন জানা যায়, ৬ জন পুলিশ ওই এলাকায় সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। নগরী ও নগরীর বাইরের বিভিন্ন পূজা ম-পেও পুলিশ সদস্যরা অনুরূপভাবে নিরাপত্তা দিচ্ছেন। এব্যাপারে আলাপকালে সিলেটের পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা উদযাপনে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সিলেট জেলায় ১ হাজার পুলিশ সদস্য পূজাম-পগুলোতে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার জেদান আল মুসা বলেন, প্রতিটি ম-পে স্থায়ী পুলিশ অবস্থানের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় স্টাইকিং ফোর্স, টহল দল এবং সাদা পোশাকধারী পুলিশ থাকবে। এছাড়াও র‌্যাব, আনসার, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা মাঠে থাকবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেট মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত বলেন, সুন্দর পরিবেশে পূজা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন থেকে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, সিলেট সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতির এক উজ্জল স্থান। এখানে প্রত্যেকেই নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব সুন্দর পরিবেশে আয়োজন করছেন। তাই প্রতিবছরের ন্যায় এবারও দুর্গাপূজা সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। (বাসস)