• ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

হাওয়া ভবনে তারেক রহমান, হারিছ, বাবর, মুফতি হান্নান ও মাওলানা তাজউদ্দিনকে দেখেছি : সাক্ষি রশিদ

sylhetsurma.com
প্রকাশিত নভেম্বর ২১, ২০১৭

হাওয়া ভবনে তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, কায়কোবাদ, লৎফুজ্জামান বাবর, মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিমকে প্রবেশ করতে দেখি।
সেখানে আগে থেকেই মুফতি হান্নান, মাওলানা তাজউদ্দিনসহ অন্যরা অপেক্ষায় ছিলো। আমি হাওয়া ভবনের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সিনিয়র এডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের ত্রয়োদশতম দিনে এ মামলার সাক্ষি মাওলানা আবদুর রশিদের জবানবন্দিতে দেয়া এ সাক্ষ্য তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সিনিয়র এডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান আজ মামলার আসামী শরীফ সাইদুল আলম বিপুল, আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাকের ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও তুলে ধরেন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষি মাওলানা আবদুর রশিদ তার জবানবন্দিতে বলেন, তার এক আত্মীয় মুফতি শহিদুল্লাহ তাকে আল মারকাজুল ইসলাম বাংলাদেশ মাদ্রাসায় চাকরি দেয়। সেখানে মাওলানা তাজউদ্দিন, মুফতি হান্নান, শেখ সালাম, শেখ ফরিদ, মুফতি সফিকুর রহমান, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ এমপিসহ অনেকে আসতেন। একদিন মাওলানা তাজউদ্দিন, মুফতি হান্নানরা সে মাদ্রাসায় যায়। সেখানে গিয়ে তারা বনানীর হাওয়া ভবনে যাওয়ার কথা বলে গাড়ী দিয়ে সহযোগিতার কথা বলে। তাদের অনুরোধে মাদ্রাসার একটি গাড়ী করে আমিসহ (রশিদ) হাওয়া ভবনে যাই। আমাকে ভবনটির নিচে রেখে তাজউদ্দিন ও হান্নান ভিতরে প্রবেশ করেন। আমি দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ভবনে তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, কায়কোবাদ, লৎফুজ্জামান বাবর, মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিমকে প্রবেশ করতে দেখি।
মামলায় আটক ১২ আসামী যারা নিজেকে জড়িয়ে এবং নিজেকে সম্পৃক্ত না করে ২১ আগস্ট ঘটনায় সম্পৃক্ত যাদের নাম জবানবন্দিতে প্রকাশ করেছেন তাও আজ রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্কে পেশ করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্কের অসমাপ্ত অবস্থায় ২৭ ও ২৮ নভেম্বর পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে। রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে।
প্রধান কোঁসুলিকে যুক্তিতর্ক পেশে আরো সহায়তা করছেন আইনজীবী আকরাম উদ্দিন শ্যামল, ফারহানা রেজা। এছাড়াও রাষ্ট্রপক্ষে মো. আমিনুর রহমান, আবুল হাসনাত ও আশরাফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে আসামিপক্ষে আইনজীবী এসএম শাহজাহান, আব্দুল সোবহান তরফদারসহ অন্যান্যরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গত ২৩ অক্টোবর থেকে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছে।
আজ যুক্তিতর্কে আসামী শরীফ সাইদুল আলম বিপুলের জবানবন্দির আলোকে বলা হয়, এ আসামী মুফতি হান্নানের কাছ থেকে গ্রেনেড নিয়ে সিলেটে বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায়। ১৯ আগস্ট ২০০৪ সালে এ আসামী ঢাকায় মুফতি হান্নানের সঙ্গে সাক্ষাত করে সিলেটের উদ্দেশ্যে চলে যায়। ২০ আগস্ট ২০০৪ সালে তাকে মুফতি হান্নানের ভাই মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি ফোনে জানায় ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে শেখ হাসিনাকে হালকা নাস্তা করানো হবে। পরের দিন ২১ আগস্ট রাতে সে জানতে পারে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় বহু হতাহত হয়েছে। পরে মুফতি হান্নান তাকে ২১ আগস্ট ঘটনা বিষয়ে বিস্তারিত জানায়।
আসামী আরিফ হাসান সুমন তার জবানবন্দিতে বলে, বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের ঢাকার প্রধান ছিলেন। তাজউদ্দিন এ আসামীর বাড়ীতে ভাড়া থাকত এ সুবাদে তাজউদ্দিনের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিলো। তাজউদ্দিনের কাছে অনেক পাকিস্তানি নাগরিক আসত। এছাড়া মাওলানা হাফেজ আবু তাহের, মাওলানা মুনিরসহ অন্যরা তার কাছে আসত। ২১ আগস্ট ঘটনা বিষয়ে বিস্তারিত মাওলানা তাজউদ্দিন জানে বলে আসামী সুমন তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছে।
মুফতি হান্নানসহ ১২ আসামী এ মামলায় ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি পেশ করেছে। আসামীদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি উপস্থাপন আজ শেষ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৫১১ জনকে সাক্ষি করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির জ্যেষ্ঠ বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দসহ ২২৫ জনের সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামীপক্ষেও ২০ জন সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ এসব সাক্ষ্য জেরা করেছে।
২১ আগষ্টের ওই নৃশংস হামলায় পৃথক দু’টি মামলায় মোট আসামী ৫২ জন। মামলার আসামী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছেন। এ মামলায় পুলিশের সাবেক আইজি আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদাবক্স চৌধুরী, লে.কমান্ডার (অব:) সাইফুল ইসলাম ডিউক এবং মামলার সাবেক তিন তদন্ত কর্মকর্তাÑ সিআইডি’র সাবেক এসপি রুহুল আমিন, সিআইডি’র সাবেক এএসপি আতিকুর রহমান ও আবদুর রশিদসহ মোট ৮ জন জামিনে রয়েছেন। তারেক রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ ১৮ জন এখনো পলাতক। এছাড়া ৩ জন আসামী জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মুফতি হান্নান ও শরীফ সাইদুল আলম বিপুলের অন্য মামলায় মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ায় এ মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়। পলাতক আসামীদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী রয়েছেন।
বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক আহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পতœী আইভি রহমান। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচন্ড শব্দে তিনি শ্রবণশক্তিতে আঘাতপ্রাপ্ত হন। (বাসস)