• ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

প্রধানমন্ত্রী বরাবর শেখ শহীদুল ইসলামের খোলা চিঠি

sylhetsurma.com
প্রকাশিত জানুয়ারি ২, ২০১৮

মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।

আস সালামু আলাইকুম।
আমি শেখ শহীদুল ইসলাম, সিলেট জেলার অন্তর্গত বিশ্বনাথ উপজেলার ৭ নং দেওকলস ইউনিয়নের বাসিন্দা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার স্বপ্ন ও প্রত্যাশা সবকিছুই আওয়ামীলীগের রাজনীতিকে ঘিরে। বিগত ১০ বছর আপনার অসাধারণ নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন যেন পৃথিবীর সব উন্নয়নকে হার মানিয়েছে। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করায় আপনাকে জানাচ্ছি অন্তরের অন্তস্থল থেকে শত শত অভিনন্দন। আমাদের ভাগ্য ভালো এই জন্য যে, আমরা আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখছি। যে প্রত্যাশা নিয়ে ৭১-এ আমরা ঝাপিয়ে পড়েছিলাম বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠের আওয়াজের সুরে। আর যে পত্যাশা নিয়ে ৩০ লক্ষ মানুষ প্রাণ দিয়েছে অনেক মা বোন ইজ্জত হারিয়েছে, আজ সেই প্রত্যাশা পূরণ হওয়ার পথে শুধু আপনার দূরদর্শী রাজনীতি ও সঠিক এবং যোগ্য নেতৃত্বে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সাবেক ছাত্রনেতা ও এমপি মরহুম আশরফ আলী ও সাবেক এমপি শাহ আজিজের অনুপ্রেরণায় আমি ১৯৬৮ সালে ছাত্রলীগে যোগদান করি। তখন বিশ্বনাথ উপজেলার রামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হই। ৮ম শ্রেণীর ছাত্র হিসেবে আমি বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিকে মনেপ্রাণে উপলব্ধি করতে থাকি। এক বছরের মাথায় ১৯৬৯ সালে আমি ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে বিভিন্ন স্কুলে ছাত্রলীগ কমিটি গঠন করি এবং তাকে সুসংঠিত করতে আপ্রাণ চেষ্টা করি। এভাবেই শুরু হয় আমার রাজনৈতিক জীবন। যাদের প্রেরণা আর উৎসাহ আমাকে এগিয়ে নিয়েছে তারা হলেন- জিয়া উদ্দিন লালা, বাবরুল হোসেন বাবুল, ওহিদুল ইসলাম তোফা, আবু হোসেন চৌধুরী, আশফাক আহমদ, সুলতান মোহাম্মদ মনসুরসহ অনেকে। ওরা সবাই তখন ছাত্রনেতা ছিলেন।

১৯৭১ সালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন। কিন্তু পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ক্ষমতাতো দূরে থাক উল্টো ঝাপিয়ে পড়ে এদেশের নিরীহ বাঙালির উপর। তখনই বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠ গর্জে উঠে। দিক নির্দেশনা দেন ৭ কোটি বাঙালিকে তিনি ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষনের মাধ্যমে। যার যা কিছু আছে তা নিয়ে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তাকে আটক করে নিয়ে যায়। তখন আমার আপন চাচা মরহুম আব্দুল মনাফ ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে আমি স্বাধীনতার আকাংখা জাগিয়ে তুলতে তরুণদের উৎসাহ দেই। সংঘটিত করি যোদ্ধাদের। চাচা চলে যান যুদ্ধে। আমি ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দরা দায়িত্ব নেই মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার। অনেক ত্যাগ আর কষ্টের বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তুত করে যুদ্ধে পাঠাতে থাকি। আমার সিনিয়রদের মধ্যে সিরাজুল ইসলাম (বীর প্রতীক), নুরুজ্জামান, আব্দুল মল্লিক, সুজ্জাদুর রহমান ও সহপাঠীদের মধ্যে আবুল কালাম আজাদ, আব্দুল খালিক, আব্দুল মোমিন, লাল মিয়াসহ আরও অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে চলে যান। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশর স্বপ্ন দেখি। কিন্তু কিছু রাজাকার বাহিনী আমার তথা মুক্তিযোদ্ধোদের পরিবার বলে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে অবগত করে আমার বাড়ীঘরে লুটপাট করে আমাকে তথা আমার পরিবারকে ফেরারী বানিয়ে দেয়। কিস্তু আমাকে দমাতে পারেনি। লুকিয়ে আড়ালে আবডালে থেকে লড়াই চালিয়ে যাই। কখনও কখনও যেন মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসি। ধন্যবাদ সৃষ্টিকর্তাকে যেন আজও বেঁচে আছি আর দেখছি স্বপ্ন।

নয় মাস যুদ্ধ চলে। বিজয় হয় আমাদের। বাধ্য হয়ে পাকিস্তানীরা ফিরিয়ে দেয় আমাদের নায়ক বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তার নেতৃত্বে আমি দেশগড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করি। ১৯৭৩ সালে সিলেটর ঐতিহ্যবাহী কলেজ মুরারীচাঁদ মহাবিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতির দায়িত্ব পাই। তারপর কলেজ ছাত্রসংসদের সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক এবং ১৯৭৪ ইংরেজীতে বৃহত্তর ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ঘটে যায় জাতির কলঙ্কজনক অধ্যায়। আমি বিমর্ষ, হতবাক হয়ে পড়ি। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা সব যেন আমার কাছে মলিন হয়ে যায়। দেশের গোটা রাজনীতি যেন কালো আধারের অনামিশায় অন্ধকার হয়ে পড়ে। অনেক কষ্টের পর ১৯৭৭ সালে সৌদি আরবে চলে যাই। পরে ১৯৮০ সালে আমি দেশে ফিরে আসি। এসে সিলেট জেলা যুবলীগ সংঘটিত করার কাজে লেগে যাই। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দেশ পরিচালনা নীতি বিশেষ করে ইমডেমনিটি বিল সহ রাজাকারদের রাজনীতির সুযোগ দেওয়া-এই সব নীতির বিরুদ্ধে মিছিল মিটিং করি। তাতে প্রশাসনের টার্গেটে পড়ে যাই আমি। একদিকে শারীরিক ও পারিবারিক অবস্থা খারাপ অন্যদিকে প্রশাসনের কড়া নজর এড়াতে ১৯৮৩ সালে আমি নিজ উপজেলায় চলে যাই। সেখানে গিয়ে আমি যুবলীগ সংঘটিত করার কাজে লেগে যাই। এবং পুরো দায়িত্বটাই আমি পালন করি। ১৯৯০ সালে সাবেক ছাত্রনেতা মরহুম বজলুর রশীদের নির্দেশে আমাকে বিশ্বনাথ উপজেলা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক করে সাইদুর রহমান সাইদ, নোয়াব আলী, সাজিদ আলী, ফখর উদ্দিনসহ একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে আমি উপজেলা আওয়মীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করি এবং আওয়ামীলীগের বিগত দুটি সম্মেলনে কাউন্সিলে আমি উপজেলা সভাপতি পদপ্রার্থী ছিলাম। কিন্তু নবাগত হাইব্রিড নেতাদের তোপে আমি নির্বাচিত হতে পারি নাই। তবে আমি প্রতিটি উপজেলা কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলাম। পরবর্তীতে সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ডাইরেক্টর ও সচিব নির্বাচিত হই। সিলেটস্থ বিশ্বনাথ থানা সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ২০০১ সালে আমি সিলেট-২ আসনে মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু দ্বিতীয়বারের মতো শাহ আজিজুর রহমানকে নির্বাচনী বোর্ড মনোনীত করে। আমরা ১ম বার উনাকে বিজয়ী করলেও ২য় বার তা সম্ভব হয়নি। আপনার স্বাক্ষরিত একটি পত্রে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, দেশ ও দলের জন্য কারো আত্মত্যাগ ও পরিশ্রম অবদান ব্যর্থ হবেনা। প্রিয় মাননীয় নেত্রী আজ আমি অবহেলিত।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বিশ্বনাথে বর্তমানে কিছু প্রভাবশালী বিএনপি নামধারী ব্যক্তিবর্গ আওয়ামীলীগে সদ্য যোগদান করে। তারা তাদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করতে আওয়ামীলীগের রাজনীতিকে ব্যবহার করছে। কিন্তু আমি বা আমার মত যারা মনে প্রাণে আওয়ামীলীগ তথা দেশের জন্য ভালো কাজ করে যাচ্ছি- তা তাদের সহ্য হচ্ছে না। তাই তারা বিগত ১১/১২/২০১৩ ইংরেজী তারিখে সন্ধ্যা সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্বনাথ থানা সদর থেকে আমার বাসায় যাওয়ার পথে পূর্বপরিকল্পিতভাবে রাস্তায় দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমার উপর হামলা চালায়। তাদের উপর্যূপরি আঘাতে আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। পরে ১ মাস সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে এখন দলীয় কাজকর্মে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছি। আমাদের বিশ্বনাথে আওয়ামীলীগের সম্মেলন হওয়ার পরে কন্ঠভোটে বিএনপি থেকে আগত সাধারণ সম্পাদককে আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদককে বহাল ঘোষনা দেয়া হয়। এরপর ২৯ মাস পেরিয়ে গেছে কোন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয় নাই। জেলার সাধারণ সম্পাদক উনার ব্যক্তিস্বার্থে ঘোষিত সভাপতি ও হাতে গোনা ২/১জনকে নিয়ে চলছে আওয়ামীলীগের কার্যক্রম। প্রকাশ করার দরকার যে, উক্ত নেতৃবৃন্দ তাদের মনোনীত জামাত বিএনপির কিছু লোক দিয়ে একটি প্রস্তাবিত কমিটির নাম জেলায় প্রেরণ করলে আপনার হস্তক্ষেপে তা স্থগিত করার নির্দেশ আসে। তা উপেক্ষা করে আওয়ামীলীগের কার্যক্রম চলছে। এতে হারিয়ে যাওয়া ত্যাগী ও তৃণমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন হচ্ছে না। আর বহিরাগতদের দাপটে ত্যাগী নেতাকর্মীরা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে দল সঠিক রাস্তা হারিয়ে ফেলছে। এতে বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামীলীগ অনেকটা পিছিয়ে পড়ছে। সংগঠনকে চাঙ্গা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আপনার মর্জি কামনা করছি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশের বর্তমান রাজনীতিতে আমি আজ অবহেলিত। খুব কষ্ট লাগে যখন দেখি ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে হাই ব্রিড ও বিভিন্ন দল থেকে আগত নব্য নেতাদের মূল্যায়ন করে দলকে কলুষিত করা হচ্ছে। যারা আমাদের ইতিহাসকে বিকৃত করছে। দু:খ আর ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়েও স্বপ্ন দেখছি আপনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ যেন সব সময় এগিয়ে থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারে। সব কালো শক্তিকে পরাজিত করে এগিয়ে যায় দুর্বার গতিতে। জীবনের প্রবীন সময়ে এসে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জন্য আরও ভালো কিছু করার সুযোগ পেলে ধন্য হবে আমার জীবন। এই অপেক্ষায় আছি।

বিনীত
শেখ শহীদুল ইসলাম
সাবেক ছাত্রনেতা
বৃহত্তর সিলেট।
মোবা: ০১৭৫৯৮৬৭১৬০, ০১৭৫০৩২৬২৯৪, ০১৯৪৩৭৭২৭৩৯