• ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

স্ত্রী পরকীয়ায় আসক্ত : বলি আইনজীবী রথীশ

sylhetsurma.com
প্রকাশিত এপ্রিল ৪, ২০১৮
স্ত্রী পরকীয়ায় আসক্ত : বলি আইনজীবী রথীশ

সিলেট সুরমা ডেস্ক : আইনজীবী রথীশ চন্দ্র ভৌমিক হত্যার ব্যাপারে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ জানিয়েছেন, রথীশের স্ত্রীর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, দুই মাস আগে তারা হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ২৯ মার্চ রাতে নিজ ঘরেই খুন করা হয় রথীশ চন্দ্রকে। নিহত ব্যক্তির স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দীপা পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে প্রেমিক কামরুল ইসলামের সহায়তায় তাঁর স্বামীকে খুন করেন। এ কাজে তার বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী সহায়তা করে।

বুধবার (৪ এপ্রিল) রংপুর র‌্যাব-১৩ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় ওই আইনজীবীর স্ত্রী এবং তার কথিত প্রেমিকসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলন র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, পিপি রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিকের পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল কামরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির সাথে। কামরুল স্নিগ্ধার সহকর্মী এবং তিনি জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। স্নিগ্ধা ও কামরুল দুই মাস আগেই রথীশ চন্দ্রকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ২৯ মার্চ রাতে ভাত ও দুধের সঙ্গে ১০টি ঘুমের বড়ি খাইয়ে রথীশ চন্দ্রকে অচেতন করেন স্নিগ্ধা। এরপর স্নিগ্ধা ও তার প্রেমিক মিলে রথীশ চন্দ্রকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে লাশ ঘরের মধ্যেই রেখে দেন। পরদিন ভোরে সবার অগোচরে কামরুল বাবুপাড়ার ভৌমিকের বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।

পরে সকাল ৯টায় কামরুল একটি ভ্যান নিয়ে রথীশ চন্দ্রের বাড়িতে আসেন। স্নিগ্ধা আলমারির ভেতর রথীশ চন্দ্রের মরদেহ ঢুকিয়ে ভ্যানে করে নিয়ে যায় কামরুলের ভাইয়ের মোল্লাপাড়ার নির্মাণাধীন একটি বাড়িতে। সেখানে আরো তিনজন মিলে লাশটি গর্ত করে মাটিচাপা দেয়া হয়।

বেনজির আহমেদ আরও বলেন, রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিক ও তার কথিত প্রেমিক কামরুল তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। মাত্র ৩০০ টাকার বিনিময়ে তারা দুজন ছাত্রকেও এ কাজে ব্যবহার করেন। তারা হলেন-মোল্লাপাড়ার রবিউল ইসলামের ছেলে সবুজ ইসলাম (১৭) ও একই এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে রোকনুজ্জামান (১৭)। তাদেরকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। নিখোঁজের পাঁচ দিন পর মঙ্গলবার রাতে ওই বাড়ির মেঝে খুড়ে রথীশ চন্দ্রের লাশ উদ্ধার করা হয়।

এর আগে বুধবার সকালে র‌্যাব ও পুলিশ জানায়, জাপানি নাগরিক হত্যা ও মাজারের খাদেম হত্যা মামলার পিপি ছিলেন রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা। গত শুক্রবার (৩০ মার্চ) বাবু সোনার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয় বাবু সোনা নিখোঁজ হয়েছেন। তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

এরপর বিভিন্ন সংগঠন তাকে উদ্ধারে মানববন্ধন, সমাবেশ, অনশনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। এরপরই মাঠে নামে র‌্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তারা প্রথমেই পরকীয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে তদন্তে নামেন। এরপর পুলিশ বাবু সোনার স্ত্রী তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা স্নিগ্ধা ভৌমিক ও তার প্রেমিক একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামরুল ইসলামের মোবাইল ফোনের কললিস্ট বের করে।

এদিকে কললিস্ট দেখে আঁতকে উঠেন পুলিশ। প্রতিদিন প্রেমিক-প্রেমিকা জুটি ৩০ থেকে ৩৫ বার মোবাইলে কথা বলতেন। ওই কললিস্ট দেখে সন্দেহ হলে শনিবার রাতে নগরীর রাধাবল্লভের বাড়ি থেকে প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয় কামরুল ইসলামকে। তাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এরপর হত্যাকাণ্ডের তথ্য জানায় কামরুল।

মঙ্গলবার রাতে র‌্যাব বাবু পাড়ার বাড়ি থেকে স্নিগ্ধা ভৌমিককে গ্রেফতার করে। তাদের দেয়া তথ্য পেয়ে র‌্যাব মঙ্গলবার রাতে সোয়া একটার দিকে রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের বাবুপাড়ার বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে মোল্লাপাড়ায় খাদেমুল ইসলাম জাফরীর নির্মাণাধীন বাড়ির মাটির তলা থেকে লাশটি উদ্ধার করে।

এরপর রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক, রংপুর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু এবং অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন তুহিনকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যান লাশ শনাক্তের জন্য। লাশটি ফুলে ফেঁপে যাওয়ায় চিনতে পারছিলেন না।

দুর্গন্ধে ওই এলাকায় যাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে সাংবাদিকরাও ছুটে যান সেখানে। এরপর সুশান্ত ভৌমিক ও জাহাঙ্গীর হোসেন তুহিন খুন হওয়া রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের পায়ের জুতা দেখে লাশ শনাক্ত করেন। পরে বুধবার ভোরে লাশটি উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, রংপুর তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন রথীশ চন্দ্র ভৌমিক। ওই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি করতেন রথীশ চন্দ্রের স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিক ও কামরুল ইসলাম। দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে রথীশের মাঝে মাঝে ঝগড়া হতো।পরকীয়ার কারণে অশান্তি ছিল পরিবারের মধ্যে। বিষয়টি নিয়ে অনেকবার ঘরোয়াভাবে বিচারও হয়।

কিন্তু তারপরও পরকীয়া থেকে ফেরাতে পারেনি স্ত্রীকে। রথীশ চন্দ্রের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। বাড়িতে তেমন একটা লোকজন থাকতো না। বাবু সোনাও বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে গভীর রাতে ফিরতেন।

রংপুর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক বলেন, আমার সহকর্মী রথীশ চন্দ্রের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আমি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যেন কেউ আর এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে সাহস না পায়।

রথীশ চন্দ্র ভৌমিক হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ ঘটনায় রথীশের ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা করেছেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের পিপি জাহাঙ্গীর হোসেন তুহিন বলেন, আমি রথীশ চন্দ্রের জুতা দেখে চিনতে পারি। তিনি একজন ভাল মানুষ ছিলেন। তার এ ধরনের হত্যাকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না।

রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু বলেন, রথীশ চন্দ্র ভৌমিক জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। আমরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দাবি জানাই এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক বলেন, আমি দাদার লাশ দেখে তাকে শনাক্ত করি।এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই।