• ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের দৃঢ় আস্থার পরিপূর্ণ মূল্যায়ন করা হবে : প্রধানমন্ত্রী

sylhetsurma.com
প্রকাশিত জানুয়ারি ৯, ২০১৯
আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের দৃঢ় আস্থার পরিপূর্ণ মূল্যায়ন করা হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী

সিলেট সুরমা ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের প্রতি যে দৃঢ় আস্থা রেখেছে তার পরিপূর্ণ মূল্যায়ন করা হবে। তিনি বলেন, ‘সদ্যসমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে বিপুলভাবে বিজয়ী করেছে। আমাদের ওপর দেশের মানুষ যে দৃঢ় আস্থা রেখেছে, আমরা তার পরিপূর্ণ মূল্যায়ন করব। আমরা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের আগেই উন্নত দেশে পরিণত করব, ইনশাআল্লাহ।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আজ দেয়া এক বাণীতে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের এই উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করে জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহবান জানান।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি
পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ১০ জানুয়ারি এক ঐতিহাসিক দিন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৭০ এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক জান্তা জনগণের এ রায়কে উপেক্ষা করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে। তারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে শুরু করে প্রহসন। বাঙালির ওপর নেমে আসে ইতিহাসের নির্মম গণহত্যা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির চূড়ান্ত মুক্তির লক্ষ্যে জাতির পিতা ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ২৫-এ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। বঙ্গবন্ধু ২৬-এ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করার পরপরই পাকিস্তানি বাহিনী তাঁকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের নির্জন কারাগারে প্রেরণ করে। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস নিভৃত কারাগারে তিনি অসহনীয় নির্যাতনের শিকার হন। প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে তিনি মৃত্যুর প্রহর গুণতে থাকেন। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও তিনি বাঙালির জয়গান গেয়েছেন। জাতির পিতা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণশক্তি। তাঁর অবিসংবাদিত নেতৃত্বে বাঙালি জাতি মরণপণ যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে আনে। পরাজিত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাধ্য হয় বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে।
জাতির পিতা ১৯৭২’র ১০ জানুয়ারি বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ঐদিন তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বিশাল জনসমুদ্রে এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি সামরিক জান্তার নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দেন। বাঙালি জাতি ফিরে পায় জাতির পিতাকে। বাঙালির বিজয় পূর্ণতা লাভ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সদস্যদের দ্রুত দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বন্ধু দেশসমূহ দ্রুত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে ওআইসি’র সদস্য হয়। বঙ্গবন্ধুর ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্বে অতি অল্পদিনের মধ্যেই বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থান তৈরি হয়।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তুলে সোনার বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে নিয়োজিত, তখনই স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী চক্র জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের এই জঘন্য হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে তারা হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়। মার্শাল ল’ জারির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে বিকৃত করে। সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা রুদ্ধ করে। পরবর্তীকালে বিএনপি-জামাত সরকার এই ধারা অব্যাহত রাখে।
সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৯৬ সালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন জাতীয় ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল সময় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। বাঙালি জাতি দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ২০০৮ সালে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। বহু প্রতীক্ষিত নির্বাচনে জনগণ স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটকে বিপুলভাবে বিজয়ী করে। এই সরকার সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণ পুনরায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করে সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে এবং তার সরকার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশ ও জনগণের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’। বিগত ১০ বছরে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন, কূটনৈতিক সাফল্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ প্রতিটি সেক্টরে নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে পৃথিবীর ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইট-প্রযুক্তির অভিজাত দেশের কাতারে যুক্ত হয়েছি। আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.৮৬ শতাংশ, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। দেশের দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়ে বর্তমানে ২১.৮% এবং চরম দারিদ্র্যের হার ১১.৩%-এ দাঁড়িয়েছে। আমাদের মাথাপিছু আয় ১৭৫১ মার্কিন ডলার। শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে বই পাচ্ছে। শিক্ষার হার ৭৩ শতাংশ। দেশের ৯৩% মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে এবং আশা করছি, স্বল্প সময়ের মধ্যেই তা শতভাগে উন্নীত হবে।
স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৭২.৮ বছরে উন্নীত হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তবতা। সারাদেশে সড়ক, মহাসড়ক, সেতু ফ্লাইওভার, পাতাল সড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রেল, নৌ ও যোগাযোগ অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করছি। মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদক নির্মূলে আমাদের সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করে যাচ্ছে। আমরাই বিশ্বে প্রথম শত বছরের ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়ন শুরু করেছি। অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিশ্বের ৫টি দেশের একটি বাংলাদেশ। উন্নয়নের ৯০ ভাগ কাজই নিজস্ব অর্থায়নে করছি।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য পরিচালনা এবং বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আগামী প্রজন্ম পাবে সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ।’
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।

ঢাকা, ৯ জানুয়ারি, ২০১৯ (বাসস ) :