• ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

বড়লেখায় ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে অপহৃত শিশু উদ্ধার !

sylhetsurma.com
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৯, ২০১৮
বড়লেখায় ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে অপহৃত শিশু উদ্ধার !

স্টাফ রিপোর্টার
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় অপহরণের দুইদিন পর মোবাশ্বিরাত বিনত মোহাম্মদ নামে ১৮ মাস বয়সী এক কন্যাশিশুকে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে। গত ০৮ ডিসেম্বর (২০১৮) বিকেল তিনটার দিকে উপজেলার সীমান্তবর্তী ছোটলেখা চা-বাগানের পরিত্যক্ত একটি ঘর থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত ০৬ ডিসেম্বর (২০১৮) ঘর থেকে খেলা করা অবস্থায় শিশুটি অপহরণ করা হয়েছিল। মোবাশ্বিরাত বিনত মোহাম্মদ উপজেলার বড়লেখা সদর ইউনিয়নের সাতকরাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী যুবদল নেতা ময়নুল মোহাম্মদের মেয়ে।
অপহৃত শিশুর পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় একটি ব্র্যাক এনজিওর মাঠকর্মী কুলছুমা বেগম প্রতিদিনের মতো গত ০৬ ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে শিশুকন্যা মোবাশ্বিরাত বিনত মোহাম্মদকে তার দাদির কাছে রেখে অফিসে যান। একই সময় শিশুটির বাবা ব্যবসায়ী বাটা-সু স্টোরের স্বত্বাধীকারী ময়নুল মোহাম্মদও দোকানে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে যান। এদিকে দুপুর ১২টায় দাদি খেলনা দিয়ে মোবাশ্বিরাতকে খেলতে রেখে রান্না করতে যান। কিছুক্ষণ পর শিশুটির দাদি শোবার ঘরে এসে মোবাশ্বিরাত বিনত মোহাম্মদকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। বিষয়টি তিনি তার ছেলে ময়নুল মোহাম্মদ ও ছেলের বউ কুলছুমা বেগমকে মুঠোফোনে জানান। খবর পেয়ে ময়নুল ও তার স্ত্রী দ্রুত বাড়ি এসে শিশুটিকে খুঁজতে থাকেন। স্বজনরাও বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুঁজির পর শিশুটির আর কোনো খোঁজ পাননি। শিশুটিকে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার মা-বাবা।
এদিকে ঘটনার দিন (০৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পরে অপরিচিত এক (০১৮১৪-৭৬৩৬৮১) মোবাইল নম্বর থেকে ময়নুল মোহাম্মদারে কাছে কল আসে। অপরপ্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি ময়নুলকে বলেন, ‘তর বাচ্চাকে জীবিত চাস, তাহলে ১০ লাখ টাকা নিয়ে প্রস্তুত থাক, যখন যেখানে বলবো, তখন সেখানে নিয়ে আসবে, তবে বিষয়টি কাউকে জানানোর চেষ্টা করবে না, এমনকি পুলিশকেও না। যদি জানাস, তাহলে তর শিশুটিকে জ্যান্ত মাটিতে পুঁতে ফেলব।’ একথাগুলো বলেই ওই ব্যক্তি ফোনের সংযোগ কেটে দেন। ময়নুল আর কিছু বলতে পারেননি তাকে। অজ্ঞান হয়ে পড়েন তিনি। এরপর ভয়ে বিষয়টি পুলিশকে তিনি জানাননি।
গতকাল ০৮ ডিসেম্বর বেলা দেড়টায় একই (০১৮১৪-৭৬৩৬৮১) নম্বর থেকে কল আসে ময়নুলের কাছে। তিনি কল ধরতেই অপরপ্রান্ত থেকে ওই ব্যক্তি বলে, ‘শিশুটিকে বাঁচাতে চাইলে দ্রুত ১০ লাখ টাকা নিয়ে ছোটলেখা চা-বাগানে আয়, একা আসবি, সঙ্গে কাউকে নিয়ে আসবি না। আর পুলিশকে সঙ্গে আনলে তর বাচ্চাকে মেরে ফেলব।’ একথা বলেই সংযোগ কেটে দেয় অপহরণকারী। অপহরণকারীদের কথামতো বেলা দুইটায় ময়নুল শিশুটিকে উদ্ধার করতে একটি ব্যাগে ১০ লাখ টাকা নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে উপজেলার সীমান্তবর্তী ছোটলেখা চা-বাগানের যান। সেখানে গিয়ে তিনি ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করেন।
ময়নুল মোহাম্মদ সাংবাকিদের বলেন,‘অপহরণকারীদের কল পেয়ে আমি একা মোটরসাইকেলে ছোটলেখা চা-বাগানের যাই। সেখানে যাওয়ার পর একটি পরিত্যক্ত ঘরে মুখে মুখোশ পড়া অবস্থায় দুই ব্যক্তিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। তাদের চিনতে পারিনি। একজনের কোলে আমার মেয়ে ছিল। শিশুটি তখন কাঁদছিল। তখন অপহরণকারীরা আমাকে বলে, ১০ লাখ টাকা দেয়, আর তর বাচ্চাকে নিয়ে এখান থেকে কেটে পর। তাদের কথামতো টাকার ব্যাগ তাদের হাতে তুলে দেই এবং তারা আমার বাচ্চাকে আমার কোলে তুলে দেয়। পরে সেখান থেকে বাচ্চাটিকে বাড়িতে নিয়ে চলে আসি।’ তিনি জানান, আমার মেয়েকে ওরা মারধর করেনি। তার শরীরে কোনো আঘাতের কোনো চিহ্ন পাইনি। বাড়িতে আনার পর একজন চিকিৎসককে দেখিয়েছি। তিনি বলেছেন, কোনো সমস্যা নেই।
ঘটনাটি পুলিশকে জানালেন না কেন, এই প্রশ্নের জবাবে ময়নুল বলেন, ‘ভয়ে পুলিশকে জানাইনি। কারণ, তারা যদি আমার মেয়েকে মেরে ফেলে।’
এব্যাপারে বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ সহিদুর রহমান বলেন, ‘এরকম ঘটনা শুনিনি। কেউ আমাদের বলেনি। তবে এখন খোঁজ-খবর নিচ্ছি।’