• ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

বিচার চাইতে গিয়ে সিরাজুল ইসলামের উপর হামলা-মামলা ও তার প্রতিবন্ধী ছেলেকে খুন

sylhetsurma.com
প্রকাশিত মার্চ ২৬, ২০১৯
বিচার চাইতে গিয়ে সিরাজুল ইসলামের উপর হামলা-মামলা ও তার প্রতিবন্ধী ছেলেকে খুন

দক্ষিণ সুরমা প্রতিনিধি: গতকাল দক্ষিণ সুরমার হায়দরপুরের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম তার জায়গা জমি ফিরে পেতে এলাকার সালিশ ব্যক্তিদের কাছে বিচার চাইতে গেলে তার ভাই শফিকুল ইসলাম গংদের হামলার শিকার হন। ঐ সময় সিরাজুল ইসলামকে বাঁচাতে তার প্রতিবন্ধী ছেলে শাহীন মিয়া এগিয়ে আসলে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে তার মৃত্যু হয়।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কামলাবাজারের হায়দরপুর গ্রামের বাসিন্দা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ইউনিয়ন শাখার সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলামের আপন ভাই শফিকুল ইসলাম আওয়ামীলীগের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা। সরকারী দলীয় নেতা হওয়ায় সেই সুযোগে তিনি সিরাজুল ইসলামের সহায় সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করে নেন। সম্পত্তি হারিয়ে অসহায় সিরাজুল ইসলাম তার স্ত্রী ও প্রতিবন্ধী ছেলে শাহিন মিয়াকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে শ্বশুরবাড়ীতে বসবাস করে আসছেন। সিরাজুল ইসলামের আরেক ছেলে সাইদুল ইসলাম সাইদ প্রাণ রক্ষায় দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। গতকাল সিরাজুল ইসলাম তার সম্পত্তি ফিরে পেতে প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে এলাকার সালিশ ব্যক্তিবর্গের কাছে বিচার চাইতে যান। তিনি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি আব্দুর রব, আব্দুল মনাফ, জাহেদ মিয়া, হুশিয়ার আলী ও এম এ মাসুক মিয়ার দ্বারস্থ হন। খবর পেয়ে সিরাজুল ইসলামের ভাই শফিকুল ইসলাম তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে প্রাণে মারার উদ্দেশ্যে সিরাজুল ইসলামের উপর হামলা চালায়। বাবাকে বাচাতে প্রতিবন্ধী শাহিন মিয়া এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা শাহিন মিয়ার বুকে ছুরিকাঘাত করে। সাথে সাথে রক্তাক্ত হয়ে শাহিন মিয়া মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করে। রাত ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহিন মিয়া মারা যান। সিরাজুল ইসলাম জানান ছেলের খুনীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে থানায় অভিযোগ করতে গেলে থানা তা গ্রহণ করেনি। উল্টো মামলার ভয় দেখায়। আর ঐদিন রাতেই শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে দক্ষিণ সুরমা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। আসামীরা হলেন ১. সিরাজুল ইসলাম ২. সাইদুল ইসলাম সাইদ ৩. মঈনুদ্দিন ৪. মনসুর আলী ৫. আশিক মিয়া। ২ নং আসামী পরে বাকী সব আসামীরা আত্মসমর্পন করলে আদালত তাদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সিরাজুল ইসলামের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। প্রতিবন্ধী ছেলেকে হারিয়ে হতবাক মা যেন কথা বলতেই পারছেন না। তিনি জানান, তার ছেলেকে খুন করে ষড়যন্ত্র করে তার স্বামীকে জেলে পাঠিয়েছে শফিকুল ইসলাম। আর তার অত্যাচারে আজ নি:স্ব, অসহায় তিনি। হামলা মামলার ভয়ে বড় ছেলে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। স্বামী জেলে। ছোট ছেলেকে খুন করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমার স্বামীর ভিটেবাড়ী দখল করে নিয়েছে শফিকুল। আর শফিকুল ইসলাম সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় পুলিশও তাদেরকে কোন সহযোগিতা করছে না। বাকহীন বৃদ্ধার চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছিল যেন সীমাহীন দু:খের ঝর্না হয়ে।
উল্লেখ্য, সিরাজুল ইসলাম একজন সফল ব্যবসায়ী ও জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ইউনিয়ন শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তার বড় ছেলে সাইদুল ইসলাম সাইদ দক্ষিণ সুরমা উপজেলা জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ফুড এন্ড বেভোরেজের ডিলারশীপ ব্যবসা করতেন। এলাকায় তার বেশ সুনাম রয়েছে। আর তাতে ঈর্ষান্বিত হয়ে ও সম্পত্তি দখল করতে তাদের জীবন দুর্বিসহ করে তুলেন সিরাজুল ইসলামের আপন ভাই স্থানীয় আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা শফিকুল ইসলাম। ভাইয়ের সম্পত্তি আত্মসাত করতে শফিকুল ইসলাম একের পর এক ষড়যন্ত্র করতে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কৌশলে হামলা, মামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করে সিরাজুল ইসলাম ও তার পরিবারকে নি:স্ব করে দিয়েছেন। শফিকুল ইসলামের সন্ত্রাসী বাহিনী কয়েকবার সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। সন্ত্রাসীবাহিনী একাধিকবার সিরাজুল ইসলাম ও তার ছেলের উপর আক্রমণ চালায়। এ নিয়ে দুই দুইবার সাইদ মারাত্মক জখমী হয়ে চিকিৎসা নেন। ২০১২, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে সাইদ মারাত্মকভাবে নির্যাতিত হন। দক্ষিণ সুরমা থানায় সাইদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।