• ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

মালেশিয়ায় পুড়ছে হাজারো বাঙ্গালীর স্বপ্ন

প্রকাশিত আগস্ট ২০, ২০১৬

শাফী চৌধুরী:
মানুষ একটু আর্থিক সচ্ছলতার জন্য কি না করে। আর্থিক সচ্ছলতার জন্য কেউ ছুটছে গ্রাম থেকে শহরে, এক শহর থেকে অন্য শহরে, কখনো বা দেশের সীমানা পেরিয়ে পাড়ি জমায় ভীনদেশে। প্রিয়জনের মায়া ছেড়ে পরিবারের সদস্যদের মূখে একটু হাসি ফোঁটানোর জন্য ছুটে য়ায় অজানার টানে। সাধ্যের মাঝে সবটুকু সুখকে সঙ্গী করে জীবনের পথচলা, এ যেন এক অন্তিম যাত্রা! এজন্য অনেকেই জমিজমা বিক্রি করতেও অনেকে পিছপা হয় না।পূর্বপুরুষের ভিটেমাঠি বিক্রি করে যখন পাড়ি জমায় স্বপ্নের দেশে।অনেক আছেন যারা উচ্চ শিক্ষার জন্য বিবিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়ে থাকেন। তারা মনের মধ্যে স্বপ্ন নিয়ে যান পার্ট টাইম চাকরি করে দেশে টাকা পাঠাবেন।
আর কিছু সুযোগসন্ধানী আছে যারা তার”ণ্যের এই স্বপ্নকে পূঁজি করে গঢ়তে তুলেছে টাকা কামানোর বড় বড় প্রতিষ্ঠান। এদের কেউ বা বিদেশের শ্রমবাজারে লোক পাঠানোর নামে প্রতারণা করছে, আর কেউ ছাত্র হিসাবে বিদেশে পাঠানোর মুলো ঝুলিয়ে ভাল কামাই করে নিচ্ছে ছাত্রদের কাছ থেকে। এদের খপ্পরে পরে বিদেশে যাওয়ার আগেই অনেকে সর্বস্বান্ত হয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ছে।। কিন্তু সব স্বপ্নভঙ্গ হয়ে যায় যখনি সে পা রাখে স্বপ্নের দেশে।বিদেশে ছাত্র পাঠানোর এজন্টগুলোর বেশিরভাগও এমন এমন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র পাঠায় যেগুলো তৈরিই হয়েছে এসব ব্যবসা করার জন্য। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগেরই কোন বৈধ অনুমোদন নেই, এবং এদের দেয়া ডিগ্রীও অচল টাকার মতোই অকেজো।

বলছি মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের কথা। সে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে বাংলাদেশি কয়েক লাখ শিক্ষার্থী। বুক ভরা রঙ্গিন স্বপ্নে বিদেশ পাড়ি দিয়ে অনেকে বিপাকে পড়েছেন। স্টুডেন্ট ভিসায় বিদেশ পাড়ি দিয়ে বর্তমানে বিভিন্ন শহরের ফ্যাক্টরির ভিতরে, দূর্ঘম জঙ্গলে ,আবারো কেউ কেউ প্রসাশনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে অলি-গলিতে হকারি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, তারা বাংলাদেশের দালালদের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় আসতে তার খরচ হয়েছিল সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা। বাংলাদেশী এজেন্সিগুলো থেকে তাদের বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে ছিল ভালো চাকরির ব্যবস্থা করে দেবে। মাসে কম করে হলেও ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় করতে পারবে।এ সব দালালদের তাদের কথামতো তাদের অনেকেই গ্রামের জায়গা-জমি বিক্রি করে পুরো টাকাটাই সরল বিশ্বাসে দালালের হাতে তুলে দিতে অনিহা প্রকাশ করেননি। তাদের সকলের উদ্ধেশ্য ছিল উদ্দেশ্য ছিল লেখাপড়ার পাশাপাশি একটা চাকরি করে পরিবারের দেনা চুকিয়ে একটু স্বচ্ছলভাবে বেঁচে থাকবেন। কিন্তু মালয়েশিয়ায় মাটিতে পাঁ রাখার পর থেকেই তাদের স্বপ্ন ভোঙ্গে যায়। কারো সে দেশে পা পেরিয়ে গেলেও ভাগ্যে জোটেনি কোনো চাকরি। প্রতিনিয়তই অভাব-অনটনের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলতে হচ্ছে ।

অনেকেই জানে না যে, মালয়েশিয়া সরকার অবৈধ বিদেশী শ্রমিকদের সাধারন ক্ষমা ঘোষনা করেনি। ২০১১ সালের ৬পি পারমিটের মতো সবার পারমিট পাবার সুযোগ নেই এবার। এবার যে সুযোগ দেয়া হয়েছে সেটা হচ্ছে রিহায়ারিং প্রোগ্রাম। এ প্রোগ্রামে শুধুমাত্র কিছু শ্রমিক সুযোগ পাবে। সবাই নয়। আর এটা বুঝতে না পেরে অনেকে শিক্ষার্থীরা দালালের কাছে ছুটছে মুক্তির উপায় হিসাবে। কিন্তু যেখানে সে দেশের সরকার স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে কারা পারমিট পেতে পারে কারা পাবে না। সেখানে হাজার হাজার শ্রমিক বহু টাকা দালালকে দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করছে। অবস্থা এমন যে, সরকার পারমিট না দিলেও দালাল পারমিট দিয়ে দিবে।

সূত্রে জানা যায়, মালয়েশিয়ার উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অনুমোদন দেয় সেদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আর এসব প্রতিষ্ঠানের দেখভাল করেন মালয়েশিয়ান কোয়ালিফিকেশন এজেন্সি (এমকিউএ)। কোনো প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। সম্প্রতি ভিসা ব্যবসার অভিযোগে কুয়ালালামপুরের টিএমসি কলেজ ও লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়কে জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান দুটিকে ফরেন শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন বাতিল করা হয়। মালয়েশিয়ার উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কোনো বৃত্তির ব্যবস্থা নেই। তবে ভালো ফল অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষকতা করার সুযোগ রয়েছে এখানে। মালয়েশিয়ায় ৪শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এরমধ্যে লোকাল প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩শ। আর ইন্টারন্যাশনাল ১শ। বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে স্কিল ডেভেলপমেন্ট ডিপ্লোমা কোর্স করতে ৫০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা খরচ হয়। আর ব্যাচেলর ডিগ্রি নিতে খরচ হয় ৩ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত।