• ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

রক্তের হুলিয়া থামছে না খুলিয়াপাড়ায়

sylhetsurma.com
প্রকাশিত আগস্ট ২৬, ২০১৬

sultan-sumonরেষারেষি দীর্ঘদিনের। ভূসম্পত্তি আর আধিপত্য বিস্তারই মূল কারণ। দু’পক্ষে এ পর্যস্ত খুন হয়েছেন পাঁচজন। আর কোপাকুপিতো লেগেই আছে। পান থেকে চুন খসলেই দু’গ্রুপের সংঘর্ষ বাঁধে। রক্তের নেশায় মেতে ওঠে দু’পক্ষই। যার অন্তিম পরিণতি ঘটে খুনোখুনিতে। তাজুলের আগেও এই পরিবারে খুন হয়েছেন তার দুই ভাই ও ছেলে। আরেক ছেলে রায়হান একই কায়দায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে পঙ্গুত্ব বরণের পথে। মা শানু ওই ছেলেকে নিয়ে এখনো চিকিৎসার জন্য ভারতে অবস্থান করছেন। শানুর পরিবারের হামলায়ও অপরপক্ষের কামাল নামের এক যুবক খুন হয়েছেন। খুনোখুনি আর কোপাকুপিতে দু’পক্ষই প্রায় যুগ ধরে উত্তপ্ত করে তুলেছেন গোটা খুলিয়াটুলা এলাকা। এই দুই পক্ষের ধারাবাহিক হামলায় পুরো এলাকাও ভীত-সন্ত্রস্ত। দুই পক্ষেরই মামলা চলছে আদালতে। একাধিক সদস্য জেলও খেটেছেন একাধিকবার। সামাজিকভাবে নিষ্পত্তির বৈঠকও হয়। কিন্তু সমাধান আসে না। বিপরীতে মনন্তর আরো বেড়েই চলে। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। এতে হামলা-হত্যাই শেষ পরিণতিতে গড়ায়। এলাকাবাসীর দাবি, এই দুই পরিবারের খুনোখুনি এখন সিলেটের আলোচিত একটি কলঙ্কময় অধ্যায়ে পরিণত হয়েছে। তাই যে কোনো মূল্যে এই হত্যাযজ্ঞের মিছিল আইনি প্রক্রিয়া কিংবা সামাজিক মধ্যস্থতায় এখনই বন্ধ করা প্রয়োজন। তা না হলে এলাকায় আরো সংর্ঘষ ও প্রাণহানির ঘটনা বাড়বে। বিঘিœত হবে সার্বিক সামাজিক নিরাপত্তা। এদিকে, আইনজ্ঞরা বলছেন, খুলিয়াটুলা এলাকায় পূর্বের সকল হত্যাকান্ডের সঠিক বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি হলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতো না। চরম রেষারেষির এই দুই পক্ষের খুনোখুনির চিত্র বিশ্লেষণে চোখ কপালে উঠবে যে কারোরই। শানুর স্বামী তাজুল ইসলমকে যে স্থানে হত্যা করা হয় একই এলাকায় একই কায়দায় হত্যা করা হয় তার ছেলে সোহানকেও। ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি এই হত্যাকান্ড ঘটে। এর কিছুদিন পরেই তাজুলের আরেক ছেলে রায়হানকে একই কায়দায় হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়। তবে ভাগ্যগুণে রায়হান বেঁচে গেলেও এখনও পঙ্গুত্বের শঙ্কা কাটেনি তার। স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে এখনো চিকিৎসা নিচ্ছেন দেশ-বিদেশে। গত বছরের ডিসেম্বরে ঐ হামলায় সন্ত্রাসীরা কোপানোর আগে তার চোখে চুনাও ছিটিয়ে দেয়। এতে তার চোখের দৃষ্টিশক্তিরও মারাত্মক ক্ষতি হয়। ছেলেদের আগে ২০০৭ সালে একই কায়দায় খুন করা হয় তাজুলের ভাই ফখরুল ইসলামকেও। এরও আগে খুন করা হয় তার অপর ভাই নজরুল ইসলামকে। নিহত তাজুল ইসলামের ভাই নূরুল ইসলাম জানান, প্রবাসী সৈয়দ হাফিজ ও গুলজারের সাথে তাদের পারিবারিক বিরোধ দীর্ঘদিনের। তার দাবি হাফিজ-গুলজারের নেতৃত্বেই ধারাবাহিক এ হত্যাযজ্ঞ চলছে। ওদিকে, তাজুল হত্যায় ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত কোতোয়ালী পুলিশ অভিযান চালিয়ে শেখঘাট-খুলিয়াপাড়া এলাকার গুলজার ও হাফিজ বাহিনীর ৫ সদস্যকে আটক করেছে। আটককৃতরা হচ্ছে গুলজার আহমদ, তার ভাই দুলাল আহমদ, গুলজারের পুত্র সুলেমান আহমদ ও ঘাতক সৈয়দ হাফিজের ভাই সৈয়দ আপ্তাব আলী। নূরুলের অভিযোগ, কিছুদিন আগে তাদের পারিবারিক একটি দ্বিতল বাসাসহ ৯ শতক ভূমি দখল করে গুলজাররা। ঐ জমিটুকু নিয়ে কিছুদিন থেকে তাজুলের সঙ্গে তাদের বিবাদ সৃষ্টি হয়। এর সূত্র ধরেই তারা হামলা চালিয়ে নির্মমভাবে তাজুলকে হত্যা করে। তবে তাজুল নিহতের ঘটনায় ৫ জন আটক হলেও এ পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। নিহত তাজুলের স্ত্রী সাবেক কাউন্সিলর শানু ছেলে রায়হানকে নিয়ে ভারতে অবস্থান করছেন। তিনি দেশে ফেরার পর মামলাসহ আইনি প্রক্রিয়া শুরু করবেন জানান নূরুল। বিষয়টি নিয়ে কথা বললে, সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের (পিপি) কিশোর কুমার কর জানান, নগরীর কুয়ারপাড় এলাকায় খুলিয়াটুলায় পূর্বে যে সকল হত্যাকান্ড ঘটেছে সে সকল মামলার বিচার যদি দ্রুত নিষ্পত্তি হতো তাহলে হত্যাযজ্ঞের পুনরাবৃত্তি ঘটতো না। ৫ জন আটকের বিষয়টি জানিয়ে সিলেট কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ সোহেল আহমদ সিলেট সুরমাকে জানান, ধারাবাহিক এ খুনোখুনির বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তাজুলসহ এ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সব হত্যাকান্ডে জড়িতদের পর্যায়ক্রমে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। আর যাতে খুনের পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেদিকেও নজর থাকবে।