• ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সিলেট সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল যেনো নিজেই সংক্রমিত

sylhetsurma.com
প্রকাশিত আগস্ট ২৬, ২০১৬

ডাক্তার নেই : সেবা অপ্রতুল
শরীফুল ইসলাম চৌধুরী ::::দিনবদলে সিলেট বিভাগের সরকারি বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়নের হাওয়া লাগলেও সেই হাওয়া লাগেনি সিলেট সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে। তিনজন ডাক্তার নিয়ে অপ্রতুল সেবায় প্রতিদিন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। নানা সমস্যায় জর্জরিত সিলেট সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল নিজেই যেনো সংক্রমিত। বাহির থেকে ভিতরÑ পরিবেশ দেখলে এমনটিই মনে হবে যে কারো। আর সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৫৪ বছর পরও কোনো সীমানা প্রাচীরই নেই এই প্রতিষ্ঠানটির। সম্মুখভাগে দাঁড়িয়ে থাকা একটি গেইট দেখে বোঝার উপায় নেই এটি হাসপাতাল না অন্যকিছু। ১৯৬২ সালে নগরীর শাহী ঈদগাহে ৭৫০ শতক ভূমির উপর সিলেট বিভাগের একমাত্র সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালটি স্থাপন করা হয়। প্রায় চার যুগ পার হলেও গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটি সংরক্ষণের জন্য কোনো সীমানা প্রচীর নির্মাণ হয়নি। কাটাতারের জোড়াতালির বেড়ায় শূন্য মাঠে দাঁড়িয়ে আছে একটি গেইট। ফলে বাহিরাগতদের অবাধ যাতায়াতে রোগীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিনিয়ত দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া ভূমিখেকোদের দখলে যাওয়ার শঙ্কায়ও ভূগছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ২০ শয্যার এ হাসপাতালে মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা ২১টি। তবে দীর্ঘদিন থেকে এখানে অনেক পদ-ই শূন্য রয়েছে। রোগীদের সেবা প্রদানের জন্য ২ জন পুরুষ ও একজন মহিলা ডাক্তারসহ মোট তিন জন ডাক্তার নিয়েই চলছে সিলেট বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতাল। এছাড়া ঔষধ সংকট, চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, যন্ত্রপাতির অভাবসহ নানা কারণে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা ব্যহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। তবে চিকিৎসাসেবা ফ্রি হওয়ায় মধ্যবিত্ত ও নি¤œআয়ের মানুষের কাছে হাসপাতালটি অনেক জনপ্রিয়। অনেকের কাছে ডায়রিয়া হাসপাতাল হিসেবে অধিক পরিচিত। এখানে ডায়রিয়া, ধনুষ্টংকার, জলবসন্ত, হাম, হুপিংকাশি, গন্ডমালা রোগ, রুবেলা, জলাতংক, ডিপথেরিয়াসহ এই ধরণের নানা সংক্রামক রোগের চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। এই মারাত্মক রোগগুলোর সিলেট বিভাগে এটিই একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য প্রতিদিন ছুটে আসেন আক্রান্ত রোগীরা। খুব কম খরচে ডাক্তারদের ভালো চিকিৎসা মিললেও নানান অবকাঠামোগত ও ব্যবস্থাপনাজনিত বিশেষত লোকবল সঙ্কটে বিপন্ন বিশেষায়িত এই হাসপাতালটি। রোগীদের মতে হাসপাতালটি নিজেই যেন সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত। নানা সমস্যায় জর্জরিত বিশেষায়িত এই হাসপাতালটি সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের সীমানা ঘেষেই রাস্তার পাশে পঁচা ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। দূর্ঘন্ধের কারণে রোগীদের অসুখের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। এছাড়া সীমানা প্রাচীর না থাকার কারণে হাসপাতালের আঙিনায় গরু-ছাগল , কুকুর নির্ভিঘেœ চলাফেরা করছে। কুকুরের কামড়ে আহত হয়ে চারখাই এর কাকুরা বাজার থেকে এখানে চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন খেলন দাস (২৫)। হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কেমন পাচ্ছেন খেলন দাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি সিলেট সুরমাকে বলেন, ‘আমি ইকানো বর্তি অওয়ার ৬দিন অইছে, ডাখতর ডেইলি আইয়া দেখে। আগে তাকি বালা আছি, ডাখতর খইছইন আমি বালা অইযাইমু।’ চিকিৎসা খরচ কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১০ টেখা দিয়া বর্তি অইছি, কিছু ওষুদ ডাখতরে মাগনা দিছইন আর বাদবাকি বারা তাকি দুই আজার টেখার লইয়া আনছি।’ সিলেট সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে রয়েছে জরুরি বিভাগ । এখানে বেশিরভাগ রোগীই আসেন কুকুর, বিড়াল, বাদুড়ের কামড় ডায়রিয়া বা বসন্তে আক্রান্ত হয়ে। ২৪ ঘন্টা রোগী দেখা হয়, এবং খুব কম খরছে চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব এমটা জানালেন এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। বিয়ানীবাজার জলঢুপ এলাকার ইসরাইল আলীর (৭৫) জলবসন্ত হয়েছে, শরীরে তিল ধারণের ঠাই নেই। অনেক ডাক্তার দেখিযেছেন, শেষমেষ এক ডাক্তারের পরামর্শে সিলেট সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আজ তিন দিন হয়েছে পূর্বের তুলনায় অনেকটা ভালো। তবে এখানকার চিকিৎসকরা খুব আন্তরিক বলে জানালেন রোগীরা। এদিকে হাসপাতালের অভ্যন্তরে স্থানীয় অনেক ছেলে বুড়োদের আড্ডা দিতে দেখাযায়। হাসপাতালের আঙিনায় গরু চরাচ্ছেন রুবেল মিয়া, তার সাথে কথাবলে জানাযায়, তিনি প্রায়ই এখানে গরু চরাতে আসেন। হাসপাতাল সূত্রে জানাযায়, হাসপাতালের নিরাপত্তার জন্য কোনো সিকিউরিটি গার্ড নেই। এছাড়া ধনুষ্ঠংকার, চিকেন পক্স, ডায়রিয়ার মূমুর্ষ রোগীর জন্য নেই কোনো আইসিইউ ব্যবস্থা। নেই চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি। হাসপাতালের অবস্থাও বেশ ভালো নেই। ভেতরে এবং বাইরে অনেক জায়গায় প্লাস্টার খসে পড়েছে। এ ব্যাপারে হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার (সমন্বয়) ডা. মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, এই হাসপাতালটি সিলেট বিভাগের জন্য অনেক গুরুত¦পূর্ণ একটি হাসপাতাল। এখানে এমন কিছু রোগের প্রতিষেধক ভ্যাকসিন দেয়া হয় যা বিভাগের অন্য কোথাও নেই। এছাড়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, সরঞ্জামাদি ও লোকবল সংকটে আমরা নিয়মিত হিমশিম খাচ্ছি। এ ব্যাপারে আমরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠিও দিয়েছি।