• ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

বুলবুল’র তাণ্ডব : ৪৪ হাজার ৫৬৩টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত

sylhetsurma.com
প্রকাশিত নভেম্বর ১০, ২০১৯
বুলবুল’র তাণ্ডব : ৪৪ হাজার ৫৬৩টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত

সিলেট সুরমা ডেস্ক : ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র তাণ্ডবে বাগেরহাটে ৪৪ হাজার ৫৬৩টি ঘরবাড়ি, ১৮ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, ৩৫ হাজার ৫২৯ হেক্টর ফসলি জমি এবং সাত হাজার ২৩৪টি মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এরমধ্যে, ৩৫ হাজার ৭৭৫টি আংশিক এবং আট হাজার ৭৮৮টি ঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে অর্ধ-শতাধিক বিদ্যুতের খুঁটি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিদ্যুৎ লাইন।

রোববার (১০ নভেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে জেলায় এসব ক্ষতি হয়। এরআগে, শনিবার (০৯ নভেম্বর) মধ্য রাত থেকে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছে জেলা শহরসহ বাইরের সব এলাকা।

এদিকে ঝড়ে গাছ পড়ে জেলায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা হলেন- ফকিরহাট উপজেলার মাসুম শেখের স্ত্রী হিরা বেগম এবং রামপাল উপজেলার বাবুল শেখের মেয়ে সামিয়া খাতুন।

জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়, বিধ্বস্ত বাড়িঘর ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের ভিত্তিতে জেলার ৭৫টি ইউয়িনের মধ্যে ৬২টি ইউনিয়নকে দুর্যোগকবলিত ইউনিয়ন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এসব জেলার ১ লাখ ৩২ হাজার ৩০০ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে বলা হয়েছে। মৃত দুইজনের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে।

বুলবুলের প্রভাবে টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে জেলার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অনেকের বাড়ি ঘরে পানি উঠে গেছে। ভেসে গেছে ১০ সহস্রাধিক মৎস্য ঘের।

শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আছাদুজ্জামান মিলন  বলেন, বুলবুলের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি ছিল। তবে প্রাণহানির হাত থেকে রক্ষা পেলেও বিপুল পরিমাণ সম্পদের ক্ষতি হয়েছে আমার এলাকার মানুষের।

কৃষি অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক দীপক কুমার  বলেন, বাগেরহাটে ৩৫ হাজার ৫২৯ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৩১ হাজার ৮০৩ হেক্টর রোপা আমন, ২ হাজার ৩৯৫ হেক্টর সবজি, ৫৪০ হেক্টর পান, ৫৭০ হেক্টর খেসারি ডাল, ৭০ হেক্টর কলা, ৯৫ হেক্টর আখ, ৩৬ হেক্টর মরিচ এবং ২০ হেক্টর সরিষার ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা খালেদ কনক  জানান, জেলার বিভিন্ন উপজেলার সাত হাজার ২৩৪টি মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে মাছ চাষিদের প্রায় ২ কোটি ৯৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে জেলার বিভিন্ন এলাকার মৎস্য চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য ঘের ও টাকার পরিমাণ আরও বেশি। শুধু মোরেলগঞ্জে পাঁচ হাজারের অধিক মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি বাগেরহাটের সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান খান বলেন, বাগেরহাট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৭০টি পোল ভেঙে পড়েছে। নয়টি উপজেলার বেশিরভাগ অঞ্চল বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বৈদ্যুতিক লাইন মেরামতে আমাদের একাধিক টিম কাজ শুরু করেছে।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ্জামান খান বলেন, বুলবুলের প্রভাবে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৮ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ বলেন, বাগেরহাটে ৪৪ হাজার ৫৬৩টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া বেশকিছু ফসলি জমি ও মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিহত দুই পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে।