• ৭ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২২শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৩রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটের বাবলী ও সাদিয়ার ব্ল্যাক মেইলিংয়ের শিকার দিনা : থানায় মামলা দায়ের

sylhetsurma.com
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৪
সিলেটের বাবলী ও সাদিয়ার ব্ল্যাক মেইলিংয়ের শিকার দিনা : থানায় মামলা দায়ের

ডেস্ক ::: বিদেশ পাঠানোর নাম করে প্রতারণার শিকার হওয়ার ঘটনা প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে ক্রমশ বেড়েই চলছে। এতোদিন ধরে প্রতারকদের তালিকায় শুধুমাত্র পুরুষ লোকদের নাম দেখা গেলেও, তালিকাতে এবার যুক্ত হয়েছে দুই নারীর নাম। তারা হলেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার কলাশ্বর পূর্বভাগ গ্রামের হেলাল উদ্দিন চৌধুরীর মেয়ে বাবলী বেগম চৌধুরী (৩৮)। তার সহযোগী ঢাকার রামপুরা সাদিয়া আফরিন (৩৮। দুজন মিলে অভিনব কায়দায় সন্তানসহ যুক্তরাজ্য পাঠানোর নাম করে নগরীর মিরাবাজার এলাকার বাসিন্দা তানজিনা আক্তার দিনার (২৮) ১৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বারবার বলার পরও টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো তারা দিনা’র ব্যক্তিগত ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি-ধামকি দিয়ে ব্ল্যাকমেইলিং করছেন। এ ঘটনায় ৯ সেপ্টেম্বর বাবলী ও আফরিনকে আসামি করে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় মামলা (১৫(০৯)২৪) দায়ের করেছেন দিনা।

জানা গেছে, বাবলী বেগম চৌধুরী ও সাদিয়া আফরিন দুজন মিলে তানজিনা দিনার কাছ থেকে বিদেশ পাঠানোর নাম করে ও ব্ল্যাকমেইলিং করে দফায় দফায় নগদে এবং ব্যাংকিং ও বিকাশ লেনদেনে হাতিয়ে নিয়েছেন ১৯ লক্ষ টাকা। বারবার বলার পরও টাকা ফেরত না পেয়ে টাকা লেনদের বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ এবং ঘটনাক্রম উল্লেখ করে তিনি মামলা দায়ের করেছেন। ফেঞ্চুগঞ্জের লামা গঙ্গাপুরের মৃত শফিক মিয়ার মেয়ে দিনা সন্তানদের নিয়ে মিরাবাজারের উদ্দীপন ৩৩/৩ নং বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাসরত।

মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, দিনা মিরাবাজারের ভাড়া বাসায় বসবাসরত। তার মা-বাবা নগরীর শাহজালাল উপশহরে ভাড়া বাসাতে থাকেন। বাবলী বেগম চৌধুরী পূর্বে তার মা-বাবার ভাড়া বাসার পাশের বাসায় থাকতেন। ভালো সম্পর্কের কারণে বাবলী বেগম উপশহরের বাসা ছেড়ে দিয়ে সে মিরাবাজারে দিনার বাসাতেই বসবাস শুরু করে। বাবলী যুক্তরাজ্য প্রবাসী ছিল। ভালো সম্পর্কের অভিনয় করে সে দিনাকে এবং দিনার সন্তানদেরকে যুক্তরাজ্যে নিবে বলে আশ্বস্থ করে। দিনা সরলমনে বাবলীর কথায় বিশ্বাস করে। ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বাবলী বেগম চৌধুরী ভিসা প্রসেসিংয়ের নাম করে দিনার নিকট থেকে নগদ ৫ লক্ষ টাকা নেয়। পরে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে পর্যায়ক্রমে নগদ মোট সাড়ে ১৩ লক্ষ টাকা নেয়। এরপর সে তার বোনের বিয়ের সময় আরও ১ লক্ষ টাকা নেয়। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও সে দিনা ও তার সন্তানদের ইংল্যান্ডে নেওয়ার কোনো ব্যবস্থা করতে পারেনি।

একটা সময় দিনা প্রতারণার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে জানতে চাইলে বাবলী টালবাহানা শুরু করে। বুঝতে পেরে দিনা বাবলীর কাছে টাকা ফেরত চান। তখন বাবলী দিনাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। আর একই বাসার বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে গোপনে দিনার মুঠোফোন থেকে অনেক ব্যক্তিগত ছবি তার ফোনে ট্রান্সফার করে নেন বাবলী। এসব ব্যক্তিগত ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল করে দিবে বলে হুমকি দিতে থাকে বাবলী। দাবি করেন দিনা।

অব্যাহত হুমকি-ধামকির একটা অবস্থায় ২০২৩ সালের ৭ জুন বাবলী ও সাদিয়া মিলে দিনার বাসায় এসে তার ব্যক্তিগত ব্যক্তিগত বিকাশ নাম্বার থেকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে দফায় দফায় তানজিনা দিনা’র ব্যক্তিগত বিকাশ নাম্বারে অনেক টাকা ট্রান্সফার করে নেয়। ট্রানজেকশনসমূহের দিন তারিখ ও সময় এজাহারে উল্লেখ করেছেন দিনা। চলতি বছরের ১৩ আগস্ট আম্বরখানার একটি ব্যাংক থেকে বাবলীর বেগমের দেওয়া অ্যাকাউন্ট নাম্বারে ১ লক্ষ টাকা প্রেরণ করেন দিনা। পরবর্তীতেও আরও কয়েকদফা তাকে টাকা দিতে হয়েছে। এভাবে বাবলী বেগম চৌধুরী ও সাদিয়া আফরিন দুজনে মিলে দিনাকে ব্ল্যাকমেইলিং করে সর্বমোট ১৯ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে দাবি করেছেন দিনা।

দিনা বলেন, ‘একজন নারী হওয়ার কারণে ব্যক্তিগতভাবে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। পরবর্তীতে আত্মীয়-স্বজনদের সাথে আলাপ করে আমি কোতোয়ালি থানাতে মামলা দায়ের করেছি। বাবলী বেগম চৌধুরী ও সাদিয়া আফরিনের বিষয়ে আমি বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি এরা এমন প্রতারণা দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে। তারা মানুষকে নানাভাবে ভুল বুঝিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আমি এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ নুনু মিয়া। তিনি জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

তথ্য সূত্র : দৈনিক একাত্তরের কথা