• ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সিলেট পাসপোর্ট অফিসের হালচাল : জন হয়রানির আরেক নাম পুলিশ ভেরিফিকেশন

sylhetsurma.com
প্রকাশিত অক্টোবর ৯, ২০১৭

বিশেষ প্রতিবেদন : সিলেটের বিদেশযাত্রীদের হয়রানির ঘটনা পাসপোর্ট অফিস থেকে শুরু করে নগর পুলিশের কার্যালয়েও ঘটছে। পুলিশ রিপোর্ট, পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ ড্রাইভিং ভেরিকেশনের জন্য দালাল ধরে নথি জমা দিতে হয়। দালালদের কাছ থেকে পাওয়া নথি পুলিশ ৮-১০ দিনের মধ্যেই করে দেয়। দালালরা নথি প্রতি উৎকোচ দিচ্ছে।

বিপত্তি ঘটে যখন কেউ নিজে নিজে নথি জমা দেন। তখন নানা ত্রুটির অজুহাতে পুলিশ আবেদনকারীকে জিম্মি করে ঘুস আদায় করে। পুলিশ টাকা পেলে রিপোর্ট দেয় পজেটিভ (ভালো) , টাকা না পেলে নেগেটিভ (খারাপ)।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর শাহপরাণ থানাধীন মুক্তিরচকের মুরাদপুরের মো. আরিফ আহমদ তার পাসপোর্টে পিতা-মাতার নাম সংশোধনীর জন্য পাসপোর্ট অফিসে আবেদন জমা দেন। এসএমপির বিশেষ শাখার এএসআই ফিরোজ মিয়া আরিফের বাড়ি পরিদর্শন করেন।

এসময় আবেদনকারীর মায়ের জন্মনিবন্ধন, পিতার জমির পর্চা, ভোটার আইডি কার্ড ও নোটারি পাবলিক অ্যাফিডেভিট সংগ্রহ করেন। এসব কাগজ নিয়ে আসার সময় এএসআই ফিরোজ মিয়া আবেদনকারীর কাছে রিপোর্ট পজেটিভের জন্য ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। আবেদনকারী টাকা দিতে অপারগতা জানান। এরপর দিনের পর দিন আরিফকে ঘুরাতে থাকেন এএসআই ফিরোজ।

দিন যায়, তার রিপোর্ট জমা পড়ে না। যখনই তিনি এএসআই ফিরোজকে ফোন করেন, তখনই তিনি তার সাথে দেখা করতে বলেন। আরিফ বিশেষ শাখায় যোগাযোগ করে তার আরো কিছু কাগজ জমা দেন। তারপর অন্য একদিন আবার ফোন করে এএসআই ফিরোজ বলেন, তুমি আমার সঙ্গে দেখা না করে অফিসে দেখা করলে কী হবে ? তোমার রিপোর্ট তো নেগেটিভ যাবে।’

আরিফ বলেন, আমি সব কাগজ জমা দিয়েছি, তাহলে আমার রিপোর্ট কেন নেগেটিভ যাবে ? তারপর আবারো দেখা করতে বলেন ওই এএসআই। রবিবার এএসআই ফিরোজ প্রার্থীকে বলেন, তোমার রিপোর্ট নেগেটিভ দিয়ে দিছি।

ভুক্তভোগী আরিফ আহমদ জানান, তিনি এ ব্যাপারে অফিসে গেলে জানতে পারেন তার রিপোর্ট নেগেটিভ দেওয়া হয়েছে। মূলত, এএসআই ফিরোজকে টাকা না দেওয়ায় তিনি রিপোর্ট নিয়ে এই হয়রানি করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশেষ শাখার এএসআই ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘এটা অনেক জটিল, নাম সংশোধন করতে চান প্রার্থী। আরো কাগজ লাগবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এসএমপির বিশেষ শাখার সেরেস্তা আর তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে বিদেশ যাত্রী ও গাড়ি চালকেরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এএসআই ফিরোজ মিয়া জেলা ও এসএমপি মিলিয়ে প্রায় ১০ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘদিন একই স্থানে কর্মরত থাকায় এই এএসআই বিশেষ শাখার তদন্তকে ঘিরে একটি দালাল চক্র গড়ে তুলেছেন। এএসআই মনোজ এক সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিতের সিলেট আগমন উপলক্ষ্যে প্রহরার দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে তিনি নিজেকে অর্থমন্ত্রীর লোক পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজর কাড়েন। ইচ্ছেমতো দপ্তর খাটেন এএসআই মনোজ।

বর্তমানে পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন সেরেস্তার দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। মূলত তার মদদেই বিশেষ শাখার এএসআইরা বেপরোয়া। প্রতি মাসে মনোজ ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে। তার শেল্টারে থেকে এএসআই ফিরোজ মিয়া বিআরটির কিছু দালালদের মাধ্যমে গাড়ি চালকদের ড্রাইভিং ক্লিয়ারেন্স নথিও জমা নেন। প্রতি নথি ১ হাজার টাকা করে নেন এএসআই ফিরোজ মিয়া। এদিকে থানাপুলিশ ক্লিয়ারেন্সের সেরেস্তার দায়িত্বে থাকা এএসআই জাকির হোসেন একই ধরনের অনিয়মে জড়িত।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিলেটের রোজভিউ হোটেলের ৩য় তলার এবং তালতলা ও জিন্দাবাজার ও দক্ষিণ সুরমার কয়েকটি ট্রাভেলসের দালালদের মাধ্যমে তারা নথির তদন্ত করেন। এই সব ট্রাভেলসের দালালেরা নথি পাসপোর্ট অফিসে জমা দিয়েই স্লিপ নিয়ে চলে যান সেরেস্তায়। সেখানে নথিপ্রতি ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা এই দুই সেরেস্তাদের দিতে হয়। এছাড়াও প্রার্থীর এক ঠিকানা ব্যবহার করা হলে এক হাজার টাকা আর দুই ঠিকানা থাকলে ২ হাজার টাকা সালামি দিতে হয়।

টাকা পাওয়ার পর এসব দালালের কাগজ যাচাই না করেই দ্রুত রিপোর্ট জমা দেন সেরেস্তা। যারা একা একা কাজ করতে চান, তাদের জন্যই বাসা পরিদর্শন ও হয়রানি। সেখানে গিয়ে এএসআই ফিরোজদের মতো কর্মকর্তারা নানা অজুহাত ও ভয় দেখিয়ে ঘুস দাবি করেন। টাকা দিলে পজেটিভ, না দিলে এটা আনেন, সেটা আনেন, এটা ভুল-সেটা ভুল বলে নেগেটিভ রিপোর্ট জাম দেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। আর ভুক্তভোগী ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

(তথ্য সূত্র : সিলেট টাইমস্ বিডি ডটকম)।