সিলেট সুরমা ডেস্ক : নিজের উপর দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এবার নগরীতে মহড়া দিলেন শামীম আহমদ। যিনি কোম্পানীগঞ্জে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে প্রাণহানি আর পরিবেশ ধ্বংসের প্রধান হোতা হিসেবে অভিযুক্ত। সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তর তাকেসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলাও করে।
এই মামলা প্রত্যাহারের দাবিতেই রোববার নগরীতে মহড়া দেন শামীম। নগরীতে মিছিল আর আদালত প্রাঙ্গনে মানববন্ধনের পর জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন তার অনুসারি পাথর ব্যবসায়িরা। স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত না থাকলেও মিছিলের সামনের সারিতেই ছিলেন ব্যাপক সমালোচিত এই পাথর ব্যবসায়ীরা।
মামলার এজহারভুক্ত একজন আসামীর এভাবে নগরীতে প্রকাশ্যে মহড়া নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার দুপুরে সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে শামীম অনুসারিরা মানবন্ধন কর্মসূচি পালন করে। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশ করা হয়। এর আগে শামীম আহমদের নেতৃত্বে নগরীতে মিছিলও করেন তারা।
তবে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি শফিকুর রহমান খান দাবি করেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলায় কাউকে আটক করার বিধান নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের পর আদালতের নির্দেশ সাপেক্ষে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করবে। এরআগে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে না, চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে।
তবে তাঁর এই বক্তব্যের সাথে দ্বিমত জানিয়েছেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদুল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন। থানায় মামলা হওয়ার পর যেকোনো আসামীকেই পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের পাথর সাম্রাজ্যের কথা ওঠলেই নাম আসে কোম্পানীগঞ্জের পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম আহমদের নাম। ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় আর পুলিশের সাথে যোগসাজশে অবৈধ পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে পাথরকোয়ারির পরিবেশ তারা ধ্বংস করছেন বলে অভিযোগ আছে।
বোমামেশিন দিয়ে গভীর গর্ত খুঁড়ে পাথর উত্তোলনের কারণে বদলে যাচ্ছে নদীর গতিপথ, ঝুঁকির মুখে পড়ছে পুরো এলাকা। এসব গর্তে পাথর উত্তোলনে নামানো হচ্ছে দরিদ্র পাথরশ্রমিকদের। প্রতিনিয়ত মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পাথর উত্তোলন করছেন তারা। এভাবে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে গত ১১ মাসেই সিলেটে প্রাণ হারিয়েছে ৩৮ জন।
পাথর উত্তোলনের নামে ভোলাগঞ্জ, শাহ আরেফিন ও উৎমায় পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংসের তান্ডব চালানোর পাশাপাশি লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। মামলাও হয়েছে একাধিক। হত্যা-খুনের অভিযোগও আছে শামীমের বিরুদ্ধে। কোম্পানীগঞ্জে যুবলীগ নেতা আবদুল আলীকে গুলি করে হত্যার মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি শামীম।
সম্প্রতি শাহ আরেফিন টিলায় পাথর ধসে বেশ কয়েকজন শ্রমিক নিহতের ঘটনার পর জোরালোভাবে আলোচনায় আসে শামীমের নাম। প্রশাসনের গঠিত দুটি তদন্ত কমিটিতেও উঠে আসে শামীমসহ তার অনুসারীদের নাম।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে গত ৭ নভেম্বর শামীম আহমদ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পরিবেশ অধিদপ্তর। পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতিসাধনের দায়ে মামলাটি দায়ের করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক পারভেজ আহমদ। কোম্পানীগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত এ (নং-০৭) মামলায় আসামী করা হয় শামীম আহমদ ও তার ভাই বিলালসহ ২২ জনকে। এ মামলায় আরোও অজ্ঞাতনামা ৭০-৮০ জনকে আসামী করা হয়।
মামলার পরই অনুসারিদের দিয়ে সড়ক অবরোধর করান শামীম। সিলেট-কোম্পানিগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে মামলা তুলে না নেওয়া হলে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের আল্টিমেটামও দেওয়া হয়। তবে তাতে ব্যর্থ হয়ে এবার শহরে এসে মহড়া দিলেন তারা।
জেলা প্রশাসক বরাবর দেয়া স্মারকলিপিতে শামীম আহমদসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার, কোম্পানীগঞ্জের ইউএনওকে প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবি জানানো হয়।
স্মারকলিপি প্রদানকালে ও মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম, পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মুল্লুক হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, উত্তর রনিখাই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ কালা মিয়াসহ অন্যরা।
এ বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. রাহাত আনোয়ার বলেন, পাথর ব্যবসায়িদের প্রতিনিধি দাবি করে তিন চার জন লোক এসে স্মারকলিপি দিয়েছেন। সেখানে শামীম ছিলেন না। বাইরে কী ঘটেছে আমি জানি না।