• ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

শামীম যেভাবে পুরস্কার ঘোষিত ‘জঙ্গি’

sylhetsurma.com
প্রকাশিত আগস্ট ১১, ২০১৫

সিলেট সুরমা ডেস্ক::::: ২০১০ সালে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহ্‌রীরের প্রচারপত্র বিতরণের সময় গ্রেপ্তার হন মইনুল হাসান শামীম। সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ছাতক থানায় তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা হয়। তবে জাগৃতির প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলার পুরস্কার ঘোষিত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত এলাকার অনেকেই জানতেন না তিনি কোথায় আছেন, কী করছেন। চার মাস ধরে পরিবারের সঙ্গেও তাঁর কোনো যোগাযোগ ছিল না।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান  বুধবার জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টঙ্গী থেকে দীপন হত্যার আসামি শামীমকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর সম্পর্কে তথ্য দিতে দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল ডিএমপি। লেখক, ব্লগার, প্রকাশক, ভিন্নমতাবলম্বীসহ অন্তত ১০ জনকে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গত মে মাসে পুলিশ আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সন্দেহভাজন ছয় জঙ্গির ছবি প্রকাশ ও পুরস্কার ঘোষণা করে। ওই ছয়জনের মধ্যে শামীম ছিলেন।
জানা গেছে, মইনুল হাসান শামীমের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামে। তাঁর বাবা মৃত আবদুল কুদ্দুছ। ছাতক থানার পুলিশ জানিয়েছে, ছাতক শহরে হিযবুত তাহ্‌রীরের প্রচারপত্র বিতরণের সময় পুলিশ শামীমকে ২০১০ সালের প্রথম দিকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর বিরুদ্ধে ছাতক থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা হয়। ওই মামলায় পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। একপর্যায়ে শামীম সুনামগঞ্জের সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে অস্থায়ী জামিনে মুক্তি পান। পরে উচ্চ আদালত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে স্থায়ী জামিন দেন।
জামিন পেয়ে তিনি ছাতক থেকে সিলেটে লেখাপড়া করতে চলে যান। শামীম সিলেটে থাকা অবস্থায় বছরে দু-একবার বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন এবং খুব কম সময় বাড়িতে অবস্থান করতেন। গত চার মাস পরিবার থেকে একবারে বিচ্ছিন্ন ছিলেন শামীম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছয় ভাইবোনের মধ্যে শামীম সবার ছোট। বড় ভাই আবু জাফর টিপু ছাতক শহরে একসময় রেস্টুরেন্টের ব্যবসা করেন। তিনি পড়াশোনা করেছেন সিলেট সরকারি কলেজে। তিনি ছোট তিন ভাইকে সিলেট শহরের শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি করেন। অপর দুই ভাই নাজমুল হাসান লিটু ও মঞ্জুরুল হাসান মনজু লন্ডনে আছেন। দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। বাবা আবদুল কুদ্দুছ পাঁচ বছর আগে মারা গেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি জানান, শামীমকে গত কয়েক বছর এলাকায় কম দেখা গেছে। এলাকার লোকজন জানেন, শামীম সিলেটের মদনমোহন কলেজে লেখাপড়া করছেন।
এক প্রতিবেশী বলেন, শামীম খুবই বিনয়ী ছেলে ছিলেন। কম কথা বলতেন। মানুষের সঙ্গে মেলামেশাও করতেন কম। তাঁদের পরিবার এলাকায় বেশ পরিচিত। তাঁর বাবা এলাকার একজন সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন।
শামীমের বড় ভাই আবু জাফর টিপু বলেন, ‘আমার ভাই খুবই নিরীহ প্রকৃতির ছেলে। যে ছেলে রাতে ভয়ে ঘর থেকে বের হতো না, এখন শুনি সে ঢাকায় গিয়ে বড় সন্ত্রাসী হয়েছে, মানুষ খুন করেছে। আমরা এর কিছুই জানি না। গত ঈদেও সে বাড়িতে আসেনি। তখন থেকে তার সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই।’
সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শামীমের বিষয়ে খোঁজখবর রাখছিলাম। তাঁদের বাড়িতে পুলিশের নজরদারি ছিল। কিন্তু তিনি চার মাস ধরে পরিবার থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন ছিলেন।’