• ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

উন্নয়ন কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সচেষ্ট হতে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহবান

sylhetsurma.com
প্রকাশিত জানুয়ারি ১১, ২০১৭

সিলেট সুরমা ডেস্ক ::::: সরকারের উন্নয়ন কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে নবনিবর্বাচিত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব পালনের আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের উন্নয়ন কাজের ধারাবাহিকতা যাতে বজায় থাকে। আমি চাই আপনারা (জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানগণ) অন্তত সেই দায়িত্বটা ভালভাবে পালন করবেন। …দেশ ও জাতির সেবায় আপনাদেরকে নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি চাই সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতার সাথে আপনারা স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করবেন। আপনাদের মূল লক্ষ্যটা হবে মানুষের সেবা করা।’
প্রধানমন্ত্রী আজ সকলে তাঁর তেজগাওস্থ কার্যালয়ে জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানদের শপথ বাক্য পাঠ করানো শেষে প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন।
সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদ আইনটি ২০০০ সালে পাস হবার ১৬ বছর পর ২৮ ডিসেম্বর ৫৯টি জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এটিই ছিল জেলা পরিষদের ১৩১ বছরের ইতিহাসে প্রথম সরাসরি নির্বাচন।   এদিন ৫৯ জন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে শপথ বাক্য পাঠ করান প্রধানমন্ত্রীঅনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মালেক শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণসহ উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
’৭৫ পরবর্তিতে এদেশের মানুষের বঞ্চনার ইতিহাস তুলে ধরে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদেরকে মনে রাখতে হবে- এ দেশের মানুষ দীর্ঘদিন শোষিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত ছিল। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর থেকে এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছিল। কেবলমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরই বাংলাদেশের জনগণ প্রথম জানতে পারে যে, সরকার জনগণের সেবা করে এবং জনগণ তার সুফল পায়।
শেখ হাসিনা বলেন, কাজেই আপনাদের ওপর এটাই দায়িত্ব থাকবে যে, প্রতিটি উন্নয়নের কাজ যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয় এবং স্ব-স্ব জেলার সার্বিক উন্নয়ন এবং সমস্রাবলী খুঁজে কের করা। কি করলে পরে সেই জেলার আরো উন্নতি হতে পারে সেই দিকে দৃষ্টি দেয়া এবং দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়েই আপনাদের কাজ করে যেতে হবে।
তিনি বলেন, ‘সরকার শুধু নিজেদের ক্ষমতা ভোগ করতে আসেনা এবং সেটা আমরা প্রমাণ করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রিকরণ করে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন । তাই মানুষের সেবা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর সেই লক্ষ্য সামনে রেখে আমরা ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে উদ্যোগ নেই এবং স্থানীয় সরকার আইন পাশ করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেলা পরিষদে নির্বাচন এবারই প্রথম হলো। আমরা ইলেকট্রোরাল কলেজের মাধ্যমে এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের আইন পাশ করি এবং সেভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বিধায় আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য জনসেবা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য দেশের মানুষকে সেবা দেয়া। আমরা যখন স্বাধীনতা অর্জন করি তখন দেশে সাড়ে ৭ কোটি মানুষ ছিল। আজকে ১৬ কোটি মানুষ। আমাদের ভূখন্ড সীমিত, তার মাঝে এত মানুষের কাছে সেবা পৌঁছনো সত্যিই খুব কষ্টসাধ্য।
তিনি বলেন, সে কারণেই আমরা সবসময় মনেকরি ক্ষমতাটাকে যতটা সম্ভব কিকেন্দ্রিকরণ করতে পারবো জনসেবাও তত নিশ্চিত হবে। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। এই স্বাধীনতাকে আমরা অর্থবহ করে তুলতে চাই। এই স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে আমরা পৌঁছে দিতে চাই।
রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলেই জনগণের সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি উন্নয়নের পথে আওয়ামী লীগ দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ এর নির্বাচনের পরে আমরা যখন সরকারে আসি তখন যেভাবে যে অবস্থায় বাংলাদেশকে পেয়েছিলাম- সে অবস্থা থেকে সর্বক্ষেত্রে একটা শৃংখলা ফিরিয়ে এনে একটা উন্নয়নের অগ্রযাত্রা আমরা শুরু করেছি। কারণ সকলের উন্নয়ন নিশ্চিত করাটাই আমাদের লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ এর পর ২০১৪ সালে যখন নির্বাচন হলো সেই নির্বাচনেও জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলো। যার ফলে আমাদের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় থেকেছে। যে কারণে আজ বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়ে গেছে।
তাঁর লক্ষ্য বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত করে গড়ে তোলা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশের মানুষ যদি ক্ষুধার্ত থাকে, দরিদ্র থাকে,তারা যদি রোগে- শোকে ভুগে মারা যায় তাহলে সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্য অর্জন কখনও সম্ভব হবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমরা জোর গলায় বলতে পারি- বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। চিকিৎসা সেবা জনগণের দোরগোঁড়ায় পৌছে গিয়েছে। শিক্ষার যেন অগ্রগতি হয় তাঁর জন্য বিশেষ পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। তারমধ্যে রয়েছে- আমরা বিনামূল্যে প্রিপ্রাইমারী থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্য বই দিচ্ছি। বৃত্তি-উপবৃত্তি দিচ্ছি, স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা অবকাঠামো গড়ে ত’লছি। বিভিন্ন টেনিং সেন্টার, টেনিং ইনষ্টিটিউট গড়ে তুলে বিভিন্নমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। যার সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে।
স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়েছে এবং ‘যেতে হবে বহু দূর’ এমন অভিমত ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজকে স্বাধীন দেশ। তবে, ৪৫ বছর কিন্তু স্বাধীনতার পার হয়ে গিয়েছে। এখনো অনেক কাজ বাকী, দেশের দু:খী মানুষের মুখে আমাদের হাসি ফোটাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, যদি ’৭৫ এর ১৫ আগষ্ট জাতির জীবনে না আসতো তাহলে বাংলাদেশ আরো ২৫-৩০ বছর আগেই উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠতো। জাতির পিতা পড়ে তুলতেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর সেই কাজ সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। কাজেই দায়িত্ব এখন আমাদের। আমরা তাঁর অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করতে চাই। সে জন্যই আমরা দিনরাত অত্যন্ত পরিশ্রম করে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়ে, নীতিমালা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। যার সুফল দেশ পাচ্ছে, দেশের মানুষ ভোগ করছে।