• ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বর্ণাঢ্য জীবন

sylhetsurma.com
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৭

 সিলেট সুরমা ডেস্ক ::: দেশের প্রথম সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আর নেই।  সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জন্ম ১৯৪৬ সালে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার আনোয়ারাপুরে। প্রথম জীবনেই বামপন্থি আন্দোলনে জড়িয়ে পড়া এই রাজনীতিবিদ মোট সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে স্নাতকোত্তর করে ঢাকা সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে আইনে ডিগ্রি নেন সুরঞ্জিত। পরে কিছুদিন আইন পেশায় যুক্তও ছিলেন।
ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত সুরঞ্জিত ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়ের নির্বাচনে ন্যাপ থেকে জয়ী হয়ে আলোচনার জন্ম দেন। একাত্তরে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন ৫ নম্বর সেক্টরের সাব কমান্ডার হিসেবে।
সুরঞ্জিত ১৯৭৩ সালে দেশের প্রথম সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন ন্যাপ থেকে। ১৯৭৯ সালের সংসদে ছিলেন একতা পার্টির প্রতিনিধি হয়ে। ১৯৯১ সালের সংসদে গণতন্ত্রী পার্টি থেকে নির্বাচিত হন তিনি।
ছোট দলের বড় নেতা হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিত সুরঞ্জিত আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার পর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য অন্য আসনে উপনির্বাচনে বিজয়ী হন তিনি। এরপর অষ্টম, নবম ও দশম সংসদেও তিনি নির্বাচিত হন।
দেশের প্রথম সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য সুরঞ্জিত ছিলেন নবম সংসদে পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধন কমিটির কো-চেয়ারম্যান। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে সংস্কারের প্রস্তাব তোলাদের দলে সুরঞ্জিতও ছিলেন।
নির্বাচনের পর হাসিনার ‘সংস্কারপন্থি’ হিসেবে পরিচিত অন‌্যদের মত সুরঞ্জিতকেও মন্ত্রিসভার বাইরে রাখা হয়। পরে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকেও বাদ পড়েন সুরঞ্জিতের মতো ‘সংস্কারপন্থী’ নেতারা, তাদের কয়েকজনের স্থান হয় ‘ক্ষমতাহীন’ উপদেষ্টা পরিষদে।
জরুরি অবস্থার সময় ভূমিকা নিয়ে দলে ‘কোনঠাসা’ হওয়ার প্রেক্ষাপটে গণমাধ্যমে সাবলীল এই বর্ষীয়ান এই রাজনীতিককে এটাও বলতে দেখা যায়, ‘বাঘে ধরলে ছাড়ে, শেখ হাসিনা ধরলে ছাড়ে না’।
সরকারের তিন বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর সুরঞ্জিতের মন্ত্রিসভায় স্থান হয়, পান নবগঠিত রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, “আমি শেষ ট্রেনের যাত্রী।”
বাকপটু সুরঞ্জিত দেশের প্রথম রেলমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরই রেল বিভাগেকে দুর্নীতিমুক্ত করার স্বঙ্কল্প জানিয়ে বলেছিলেন, রেলের ‘কালো বিড়ালটি’ খুঁজে বের করতে চাই। কিন্তু পাঁচমাসের মাথায় এপিএসের গাড়িতে বিপুল অর্থ পাওয়া গেলে তিনি চাপে পড়ে যান।
সহকারীর অর্থ কেলেঙ্কারির দায় মাথায় নিয়ে তিনি পদত্যাগ করলেও তা গ্রহণ না করে সে সময় তাকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হিসাবে রাখেন শেখ হাসিনা।
দশম সংসদে নির্বাচিত হওয়ার পর সুরঞ্জিতকে আর মন্ত্রিত্বে ফেরানো হয়নি। মৃত‌্যুর আগ পর্যন্ত আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
রোববার ভোর রাত ৪টা ১০ মিনিটে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সুরঞ্জিত রক্তে হিমোগ্লোবিন স্বল্পতাজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।