• ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ফের পাথর কোয়ারিতে প্রাণহানি : লাশ গায়েবের চেষ্টা

প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৭

সিলেট সুরমা ডেস্ক
সিলেটের পাথর কোয়ারিতে ফের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এবার গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি কোয়ারি থেকে রাতের আঁধারে অবৈধভাবে পাথর তুলতে গিয়ে মাটিচাপায় ৩ শ্রমিক মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। এরপর সকাল হওয়ার আগেই মারা যাওয়া শ্রমিকদের লাশ লুকিয়ে সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনায় তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সুনামগঞ্জ থেকে দু’জনের ও নেত্রকোনা থেকে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ নিয়ে গত ২০ দিনে সিলেটের বিভিন্ন কোয়ারিতে পাথর উত্তোলনকালে ১০ জন শ্রমিক মারা যান বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে স্থানীয় সূত্রের দাবি, এই সময়কালে মারা গেছেন অন্তত ১৩ শ্রমিক। এরমধ্যে গত ২৩ জানুয়ারি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শাহ আরেফিন টিলা ধ্বসে সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটে। ওইদিন পাঁচ শ্রমিক মারা যান বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। যদিও স্থানীয়দের দাবি, আটজন মারা গিয়েছিলেন।
গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিছনাকান্দির বাদেপাশা খেয়াঘাট সংলগ্ন বাছিত মিয়ার পাথর কোয়ারিতে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে অবৈধভাবে গর্ত করে শ্রমিকরা পাথর উত্তোলন করছিলেন। হঠাৎ করে গর্তের পাশের মাটি ধ্বসে পড়লে ঘটনাস্থলেই ৩ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। রাতের মধ্যে মরদেহগুলো লুকিয়ে ফেলে পাথর উত্তোলনকারীরা।
শুক্রবার সকালে গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন বলেছিলেন, মাটি চাপায় শ্রমিক মৃত্যুর খবর গর্তের মালিক পুলিশকে জানায়নি। স্থানীয়দের কাছ থেকে শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ যাওয়ার আগেই তিন শ্রমিকের লাশ সেখান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
তবে দুপুরের দিকে দুজনের লাশ সুনামগঞ্জ সদর থেকে উদ্ধার করেছে সুনামগঞ্জ থানা পুলিশ। তারা হলেন সুনামগঞ্জ সদরের গুলেরগাঁওয়ের জাকির হোসেন (২০) ও তোলা মিয়া (২৫)। এরপর নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি থেকে পরিমল (৩২) নামে আরেক শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
তিন জনের লাশ উদ্ধারের পর ওসি দেলোয়ার হোসেন বলেন, কোয়ারিতে কর্তব্যরত অন্যান্য শ্রমিকদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে জানতে পারি নিহতদের লাশ সুনামগঞ্জ এবং নেত্রকোনায় গুমের উদ্দেশ্যে রাতেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে আমরা স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় তিনজনের লাশ উদ্ধার করে তাদের পরিচয়ও নিশ্চিত করতে পেরেছি। ময়না তদন্তের জন্য তাদের মরদেহগুলো স্থানীয় হাসপাতালে রাখা হয়েছে। ওসি বলেন, শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। কোয়ারি মালিকসহ সংশ্লিস্টদের মামলায় আসামী করা হবে। এরআগে ২৩ জানুয়ারি শাহ আরেফিন টিলা ধ্বসে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। দুটি কমিটিই শ্রমিক মৃত্যুর জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের গাফিলতিকে দায়ী করেছে।
এদিকে, দুপুরের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিলেটের পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান। এসময় তিনি বলেন, নিহত শ্রমিকদের লাশ গোপন করার কাজে জড়িতদের ও পাথর উত্তোলনের ওই গর্তের মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।