• ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

নোবেলজয়ী অভিজিৎকে সহ্যই করতে পারছে না ক্ষমতাসীন বিজেপি

sylhetsurma.com
প্রকাশিত অক্টোবর ১৯, ২০১৯
নোবেলজয়ী অভিজিৎকে সহ্যই করতে পারছে না ক্ষমতাসীন বিজেপি

সিলেট সুরমা ডেস্ক : অর্থনীতিতে এবারের নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে যেন সহ্যই করতে পারছে না ক্ষমতাসীন বিজেপি। অভিজিতের তত্ত্ব ভারতে চলে না, অভিজিৎ বামপন্থি অর্থনীতিবিদ, অভিজিৎ বিদেশিনি বিয়ে করেছেন, অভিজিৎ অর্ধেক বাঙালি- এমন নানা কথা নিয়ে হাজির তারা।

অভিজিৎ কলকাতার ছেলে। পড়াশোনা কলকাতার সাউথ পয়েন্ট স্কুল আর প্রেসিডেন্সি কলেজে। এরপর দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে। অভিজিৎ আপাদমস্তক একজন বাঙালি। বিদেশে থাকলেও বাংলায় লেখালেখি করেন। কলকাতায় আসেন। দেশের বিভিন্ন সেমিনারে যোগ দেন। অভিজিতের সঙ্গে এবার অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন তার স্ত্রী এস্থার ডাফলো।

অভিজিতের নোবেল পাওয়ার খবরে অভিনন্দন জানিয়েছে দেশবাসী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও মানবাধিকার সংস্থা। তবে অভিজিতের নোবেলপ্রাপ্তিকে সাদরে গ্রহণ করেনি বিজেপি।

বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান বিজেপির জাতীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা শুক্রবার বলেছেন, ‘বিদেশিনীকে বিয়ে করলে নোবেল পাওয়া যায়, যেমনটা অধ্যাপক অমর্ত্য সেনও বিদেশিনী বিয়ে করে নোবেল পেয়েছিলেন। অভিজিৎ দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন ফ্রান্সের এস্থার ডাফলোকে। অমর্ত্য সেনও দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন বিদেশিনীকে।’

রাহুল সিনহা বলেন, ‘অভিজিৎ তো দিল্লিতে পড়াশোনার সময় ছাত্র আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ১০ দিন জেল খেটেছিলেন দিল্লির তিহার কারাগারে।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘বামপন্থী অর্থনীতি এ দেশে চলে না। মানুষ বামপন্থাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। বিদেশের কোথাও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্ব কাজে লাগতে পারে। তবে ভারতে দারিদ্র্য দূরীকরণে তার তত্ত্ব কাজে আসবে না। মহাত্মা গান্ধীর নীতিতেই ভারতে আর্থিক উন্নতি সম্ভব।’

এরআগে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নোবেল প্রাপ্তির দিনে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির নেতা দিলীপ ঘোষ অভিজিতের নোবেলপ্রাপ্তিতে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছিলেন, অভিজিৎ অর্ধেক বাঙালি।

শুক্রবার ভারতের কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বলেন, ‘নোবেল পাওয়ার জন্য আমরা অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন জানাই। আপনারা সকলেই জানেন উনি বামপন্থী মানসিকতার। কংগ্রেসের ঘোষিত ন্যায় প্রকল্পকে উনি সমর্থন দিয়েছিলেন। ন্যায় প্রকল্পের গুনগান গেয়েছেন। ভারতের মানুষ ওনার অর্থনৈতিক তত্ত্বকে খারিজ করে দিয়েছে।’

এদিকে, বিজেপির এই একতরফা অভিজিৎ বিদ্বেষ চললেও এর পালটা জবাবও আসছে। পালটা জবাবে যোগ হয়েছেন রাহুল গান্ধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ অনেকেই।

অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির এই আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হলেও এর পালটা জবাব দিয়েছেন কংগ্রেসের সাবেক প্রধান রাহুল গান্ধী। অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নোবেল প্রাপ্তিতে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি টু্ইটে বলেন, দারিদ্র্য দূরীকরণে অভিজিতের অর্থনৈতিক তত্ত্ব ভারতকে অর্থনীতির উন্নয়নের পথ দেখাতে পারে। ভারতের আর্থিক উন্নয়নে, দারিদ্র্য দূরীকরণে, ন্যায় প্রকল্পের রূপরেখা তৈরিতে সাহায্য করেছিলেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন ন্যায় প্রকল্পের পরিবর্তে চলছে মোদি নীতি, যা দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে।

ন্যায় প্রকল্পে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষকে মাসে ছয় হাজার রুপি করে আর্থিক অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন রাহুল গান্ধী লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে। কিন্তু নির্বাচনে জয়ী হতে না পারায় সেই প্রকল্প চাপা পড়ে যায়।

বিজেপির এইধরনের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বামপন্থী নেতা ও সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য ও সাবেক সাংসদ মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘দেশের অর্থনীতি নিয়ে যারা হিমশিম খাচ্ছেন, তাদের কাছ থেকে এটাই প্রত্যাশিত। দেশজুড়ে যারা জাতি বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন, নোবেলজয়ীর কৃতি সম্পর্কে এ ধরনের কুরুচিসম্পন্ন মন্তব্য করবেন, এটাই স্বাভাবিক।’

অন্যদিকে বামপন্থী দল সিপিআই (এমএল) এক বিবৃতিতে জানায়, ‘রাহুল সিনহার মন্তব্য নারীবিদ্বেষী। শালীনতার সীমা অতিক্রম করে গেছে। যে ভাষায় পীযূষ গোয়েল অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিন্তাভাবনা নস্যাৎ করেছেন, তা হাসির উদ্রেক করে।’

অভিজিৎ কলকাতার ছেলে। পড়াশোনা কলকাতার সাউথ পয়েন্ট স্কুল আর প্রেসিডেন্সি কলেজে। এরপর দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে। অভিজিৎ আপাদমস্তক একজন বাঙালি। বিদেশে থাকলেও বাংলায় লেখালেখি করেন। কলকাতায় আসেন। দেশের বিভিন্ন সেমিনারে যোগ দেন। অভিজিতের সঙ্গে এবার অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন তার স্ত্রী এস্থার ডাফলো।

অভিজিতের নোবেলপ্রাপ্তিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যারপরনাই খুশি। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় এলে তাকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হবে। তিনি বলেছেন, ‘অভিজিৎ আমাদের গর্ব, বাঙালিদের গর্ব, দেশের গর্ব, রাজ্যের গর্ব।’