• ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

খাদিজাকে বাঁচানো ইমরানের চোখে সেই দৃশ্য

sylhetsurma.com
প্রকাশিত অক্টোবর ৮, ২০১৬

রফিকুল ইসলাম কামাল::::
kamalচোখ বুঝলেই সামনে ভেসে ওঠে সেই দৃশ্য। মন খারাপটা আরেকটু বেড়ে যায় ইমরানের। তাই রক্তাক্ত, নিথর খাদিজার ধুলোমাটিতে পড়ে থাকা সেই দৃশ্যকে প্রাণপণে চোখের সামনে থেকে সরাতে চান ইমরান। খাদিজার প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর হাসিমাখা মুখ দেখার ব্যাকুল আকুতি তার।
৩ অক্টোবর ২০১৬। সোমবার, বিকেল। আপনমনে সিলেট এমসি কলেজের সবুজ বনানীর সবুজ গালিচায় হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন ইমরান কবির। ঘুণাক্ষরেও ঠের পাননি তখন, কি ভয়ানক এক দৃশ্য অপেক্ষা করছে তার জন্য!
ইমরান হাঁটছিলেন। আচমকা হইচই শুনে কৌতুহলী হয়ে এগোতে লাগলেন। ¯œাতক (পাস) দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে বেরোনো শত শত শিক্ষার্থী দৌড়াচ্ছেন দিগবিদিগ। কৌতুহল বাড়তে লাগলো ইমরানের। কি ঘটছে, সেটা জানার কৌতুহল তাকে সামনে টেনে নিতে লাগলো।
এমসি কলেজের পুকুরপাড়ে গিয়ে থমকে দাঁড়ালেন ইমরান। বিশ্বাস করতে পারছিলেন না নিজের চোখকে! মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছেন খাদিজা, রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারপাশ। অন্যরা যখন সাহসহারা হয়ে দৌড়ে সরে যাচ্ছিলেন, ইমরানের মনে তখন মানবতার ডাক! আর তাই খাদিজার দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি। খাদিজার মাথা, হাতে চাপাতির অসংখ্য আঘাত। দেখেই আতঙ্কের করাল এক ¯্রােত বয়ে যায় বুকে। কি করবেন ইমরান?
না, আতঙ্কিত হন নি তিনি। মাথা ঠান্ডা রেখে দ্রুত ঠিক করে নিলেন করণীয়। খাদিজার ওড়না দিয়ে পেচিয়ে দিলেন তার মাথা, যাতে রক্তপাত কিছুটা বন্ধ হয়। সাহায্যের আশায় চিৎকার করতে লাগলেন। সেই চিৎকারে এগিয়ে এলেন আল আমিন ও মাহফুজ নামক আরো দুই যুবক। সিএনজি অটোরিকশায় তুলে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো খাদিজাকে। তারপর সবকিছু ঘটতে লাগলো দ্রুত। রক্ত লাগবে, দিলেন ইমরান। ওষুধ লাগবে, এনে দিলেন ইমরান। খাদিজার স্বজনরা এলেন, এরপর হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেন ইমরান।
ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে এক সপ্তাহ। কিন্তু খাদিজার সেই নিথর, চাপাতির আঘাতে রক্তাক্ত ছিন্নভিন্ন মাথার দৃশ্য এখনো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে ইমরানকে। খাদিজার হাসিমাখা মুখ দেখার ব্যাকুলতা এখন ইমরানের মাঝে।
ইমরানের ভাষায়, ‘খাদিজা আপুর হাসিমাখা মুখ কখনো দেখার সুযোগ হয়নি আমার। প্রথম দেখাতেই তার মলিন, রক্তাক্ত মুখ দেখতে হয়েছে আমাকে। সেই দৃশ্য চোখে ভাসছে সবসময়। আমি এই দৃশ্য নয়, খাদিজা আপুর হাসিমাখা মুখের দৃশ্য দেখতে চাই।’
ইমরানের এই চাওয়া, এই আকাঙ্খা তো তার একার নয়! এ তো সোনার বাংলার প্রত্যেকটা বিবেকবান মানুষের হৃদয়িক চাওয়া!