• ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ৯ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

চলে গেলেন কিংবদন্তি শিল্পী লাকী আখন্দ

sylhetsurma.com
প্রকাশিত এপ্রিল ২১, ২০১৭

সিলেট সুরমা ডেস্ক : দীর্ঘদিন ধরেই ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। তাকে বাঁচাতেও নেওয়া হয়েছিলো নানা উদ্যোগ তবে সকল প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে চলেই গেলেন কিংবদন্তি শিল্পী লাকী আখন্দ। লাকী আখন্দ গেয়েছিলেন, ‘আমায় ডেকো না, ফেরানো যাবে না’। সত্যিই ফেরানো গেলো না এ গুণি শিল্পীকে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান লাকী আখন্দ। ‘শিল্পীর পাশে ফাউন্ডেশন’ সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী এরশাদুল হক টিংকু জানান, টানা আড়াই মাস পর হাসপাতাল থেকে গত সপ্তাহে আরমানিটোলার নিজ বাসায় ফিরেছিলেন শিল্পী। বাসায় দুপুর নাগাদ তার শরীরের অবনতি ঘটে। দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় মিটফোর্ড হাসপাতালে। সেখানেই সন্ধ্যায় মারা যান তিনি। গত ৫ ফেব্রুয়ারি বরেণ্য এ শিল্পীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বিএসএমএমইউ-এর সেন্টার ফর প্যালিয়েটিভ কেয়ারের ভর্তি করা হয়। তিনি সেখানে অধ্যাপক নেজামুদ্দিন আহমেদের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গেল সপ্তাহে শরীরের অবস্থা উন্নতি হলে তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, গুণী এই সংগীতজ্ঞ অনেক দিন ধরেই ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। ছয় মাসের চিকিৎসা শেষে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ দেশে ফেরেন তিনি। সেখানে কেমোথেরাপি নেওয়ার পর শারীরিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছিল তার। একই বছরের জুনে আবারও থেরাপির জন্য ব্যাংকক যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে পরে আর তার সেখানে যাওয়া হয়ে উঠেনি।
অসুস্থতার প্রথম থেকেই লাকী আখন্দ ও তার পরিবার কোনও রকম আর্থিক সহযোগিতা গ্রহণের বিষয়ে বেশ কঠোর ছিলেন। দেশের শীর্ষ শিল্পীদের উদ্যোগে সহযোগিতা করতে চাইলেও বিনয়ের সঙ্গে লাকী আখন্দ সেটি গ্রহণে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। গুণী কিংবা অভিমানী এই মানুষটি অন্যের সাহায্য-সহযোগিতায় নিজের চিকিৎসা চালাতে মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না। তবে ব্যাংককে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় এই সংগীতকারের চিকিৎসার জন্য পাঁচ লাখ টাকা সহায়তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রীয় ভালোবাসা হিসেবে সেটি তিনি গ্রহণ করেছেন স্বাচ্ছন্দে।
লাকী আখন্দের উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে— ‘এই নীল মনিহার’, ‘আমায় ডেকো না’, ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে’, ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’, ‘মামনিয়া, ‘বিতৃষ্ণা জীবনে আমার’, ‘কি করে বললে তুমি’ ‘লিখতে পারি না কোনও গান, ‘ভালোবেসে চলে যেও না’ প্রভৃতি।
লাকী আখন্দ, আধুনিক বাংলা সঙ্গীতের খ্যাতিমান শিল্পী, সুরকার ও সংগীত পরিচালক। শৈশব কেটেছে ঐতিহ্যবাহী পুরান ঢাকার পাতলা খান লেনে। শৈশবেই তার সংগীতশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ। মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে এইচএমভি পাকিস্তানে সুরকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। সুরকার হিসেবে আরো কাজ করেছেন এইচএমভি ভারত এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রেও।
স্বাধীনতার পর পর নতুন উদ্যমে বাংলা গান নিয়ে কাজ শুরু করেন। তার নিজের সুর করা গানের সংখ্যা দেড় হাজারেরও বেশি। শিল্পীর সহোদর ক্ষণজন্মা হ্যাপী আখন্দের সাথে ছিলো তার আত্মার সম্পর্ক। ভাইয়ের মৃত্যুর পর দীর্ঘকাল তিনি নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন। দুজনের যৌথ প্রয়াসে সূচিত হয়েছিলো বাংলা গানের এক নতুন ধারা।