• ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

লবণ : সিলেটে গুজবের এক রাত

sylhetsurma.com
প্রকাশিত নভেম্বর ১৯, ২০১৯
লবণ : সিলেটে গুজবের এক রাত

সিলেট প্রতিনিধি : পুরো শহরে হুলস্থূল। দলবেঁধে মানুষ নেমেছেন বাজারে। পাড়ার মুদি দোকান থেকে সুপারশপ, সবখানেই ভিড়। লবণ চাই, লবণ। সোমবার সন্ধ্যা থেকে লবণের দাম বেড়ে যাচ্ছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে সিলেটজুড়ে। এমন খবরে ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়েন সিলেট নগরীর ভোগ্যপণ্যের দোকানগুলোতে। বাড়তি চাপে নিমিষেই ফুরিয়ে যায় নগরীর বিভিন্ন দোকানের লবণের স্টক। আবার অনেক ব্যবসায়ী বেশি দামে বিক্রির জন্য লবণ মজুদ করে রাখেন বলেও অভিযোগ ওঠেছে।সিলেট নগরী ছাড়াও পুরো বিভাগজুড়ে লবণ নিয়ে চলে এই লঙ্কাকাণ্ড। প্রশাসন বলছে, লবণের দাম বৃদ্ধির খবর পুরোটাই গুজব। কেউ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এই গুজব ছড়াতে পারে।ব্যবসায়ীরাও জানিয়েছেন, লবণের চাহিদামাফিক সরবরাহ আছে। শীঘ্রই দাম বাড়ার শঙ্কা নেই।তবে ব্যবসায়ীরা এমনটি দাবি করলেও সোমবার রাতেই অনেক দোকানে বাড়তি দামে লবণ বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।সোমবার রাতে লবণ ভর্তি দুটি ভ্যান জব্দ করেছে পুলিশ। আর অতিরিক্ত দামে লবণ বিক্রির দায়ে সোমবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে বড়লেখায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে উপজেলার সাতটি দোকানের মালিককে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করে।গুজবকে কেন্দ্র করে এই হুলস্থূলের প্রেক্ষিতে সোমবার সন্ধ্যায় জনগণকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন। নিজের ফেসবুকে পুলিশ সুপার লিখেন- ‘প্রিয় সিলেটবাসী, বাজারে নিত্য-প্রয়োজনীয় সামগ্রীর পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। কোন নিত্য-প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বাড়তে পারে এমন গুজবে কান না দেয়ার জন্য সকলকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।’আলিম আল রাজি নামে নগরীর এক চিকিৎসক সোমবার রাতে ফেসবুকে লেখেন- সিলেটে আরও একটি নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যের দাম বেড়ে গেছে।’দাম বেড়েছে’ – যারা এই গুজবটা ছড়িয়েছে তারা সফল। এখন সত্যি সত্যি অনেক যায়গায় আগের চেয়ে চারগুণ বেশি দামে এই দ্রব্যটা বিক্রি হচ্ছে। কিছু যায়গায় অবস্থা আরও খারাপ। আগামীকাল দাম আরও কয়েকগুণ বাড়তে পারে – এই আশংকায় আজকেই অনেকে দ্রব্যটা কিনে রাখছেন যার ফলে অনেক দোকানে দেখা দিয়েছে সংকট। আজকে বিক্রি না করে আগামীকাল বেশি দামে বিক্রি করবেন – এই আশায় দোকানীরাও ইতিমধ্যে তৈরি করে ফেলেছেন কৃত্রিম সংকট।সরকারের উচিত কঠোর অবস্থানে যাওয়া এবং পিটিয়ে এইসব অসভ্যদের সোজা করে ফেলা। ফাজলামোর একটা সীমা থাকা উচিত।সোমবার রাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, লবণ কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ক্রেতারা। বেশিরভাগ মুদি দোকানেরই মজুদ ফুরিয়ে গেছে। দোকানে লবণ না পেয়ে ক্রেতারা আক্রমণাত্মক আচরণ করতেও দেখা গেছে।সব ক্রেতারই দাবি, লবণের দাম বাড়তে যাচ্ছে এমন খবর শুনেছেন। তাই লবণ কিনতে এসেছেন তারা। তবে কোথায় এমন সংবাদ শুনেছেন একথা কেউ বলতে পারেননি। তবে নগরের ভালো ব্যবসায়ীরা তাৎক্ষণিক উদ্যোগী হয়ে ক্রেতাদের গুজব থেকে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেন। অনেকে ফেসবুকে জানিয়ে দেন বিষয়টি স্রেফ গুজব। ক্রেতাদের বিভ্রান্ত না হওয়ার পরামর্শ দেন তারা। নগরের আম্বরখাস্থ সুপারশপ ৮/১১’র স্বত্বাধিকারী আমিনুল ইসলাম পলাশ দৈনিক জাগরণকে বলেন, এটি স্রেফ গুজব। কিন্তু অনেকেই এই গুজবের শিকার হয়েছেন। সন্ধ্যার পর থেকেই ক্রেতরা লবণ কিনতে ভিড় করেন। একেক জন ৪/৫ কেজি করে লবণ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা নির্ধারিত দামেই ক্রেতাদের লবণ বিক্রি করছি। পলাশ জানান, লবণ আমাদের দেশী সহজলভ্য পণ্য। দেশে লবণের উৎপাদন প্রচুর। তাই এমন পণ্যের দাম বাড়ার কুনো যুক্তিকথা নেই। একটি দুষ্ট চক্র এমন গুজব ছড়িয়ে ভিন্ন ফায়দা নেয়ার চেষ্টা চালিয়েছে-যোগ করেন পলাশ। স্বপ্ন’র জিন্দাবাজার শাখার এক বিক্রয়কর্মী বলেন, সন্ধ্যার পরই তাদের লবণের স্টক শেষ হয়ে গেছে। এসময় আচমকা কেবল লবণ কেনার জন্য ক্রেতারা এসে দোকান ভিড় ককরেন। এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মো. জেদান আল মূসা লবণ নিয়ে গুজবে সারা না দেওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, এ ব্যাপারে পুলিশ সর্তক অবস্থায় আছে। লবণ নিয়ে যারা গুজব রটাবের তাদের বিরুদ্ধে কঠিন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে