• ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ৯ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

জনবল সংকট নিয়েই চলছে নবীগঞ্জ  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স !

sylhetsurma.com
প্রকাশিত জুলাই ৫, ২০২১
জনবল সংকট নিয়েই চলছে নবীগঞ্জ  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স !
সিলেট সুরমা ডেস্ক : নবীগঞ্জ হবিগঞ্জ জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম  উপজেলা। ২৪°২৫´ থেকে ২৪°৪১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°২৪´ থেকে ৯১°৪০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত এই উপজেলাটির উত্তরে সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই ও জগন্নাথপুর উপজেলা, দক্ষিণে হবিগঞ্জ সদর ও বাহুবল উপজেলা, পূর্বে মৌলভীবাজার জেলার মৌলভীবাজার সদর ও শ্রীমঙ্গল এবং সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলা এবং পশ্চিমে বানিয়াচং উপজেলা। উপজেলার মোট আয়তন ৪৩৯.৬০ বর্গ কিলোমিটার।নবীগঞ্জ  থেকে জেলা সদরের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। ১৩ টি ইউনিয়ন ও  ১ টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত নবীগঞ্জ উপজেলায় চিকিৎসার ক্ষেত্রে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সই জনগণের একমাত্র প্রধান ভরসাস্থল । কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই সীমিত জনবল নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে এই হাসপাতালটি। গুরুতর কোনো সমস্যা হলে জেলা সদর, না হলে ৬৫ কিঃমিঃ দূরত্বের সিলেটে রোগী নিয়ে যেতে হয়। করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। করোনা আক্রান্ত রোগীর গুরুতর কিছু হলে এখানে উন্নত কোন চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা নেই।
তবে করোনা চিকিৎসার প্রাথমিক প্রস্তুতি আছে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে চারটি কেবিন ও ১৫ টি শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে ২২টি। এই হাসপাতালে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করানো হচ্ছে। অন্যদিকে অপারেটর না থাকায় এক্সরে মেশিন অব্যবহৃত হয়ে পড়ে আছে। ৬ বছর ধরে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রেডিওগ্রাফি পদটি শূন্য। এতে রোগীরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্সরে করার কোন সুবিধা পাচ্ছেন না।
উপজেলা স্বাস্থ্যবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, করোনার শুরু থেকে  চলতি বছরের ৫ জুলাই পর্যন্ত নবীগঞ্জে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৫১ জন মৃত্যুবরণ করেন কয়েকজন । গত এক সপ্তাহে ১৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এরমধ্যে ৪ জন হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। বাকিরা বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
প্রায় ৩ বছর আগে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু দেওয়া হয়নি প্রয়োজনীয় জনবল ব্যবস্থা ।শুরু থেকেই যেখানে জনবল সংকট নিয়ে ৩১ শয্যার থেকে কম জনবল নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিচালনা করা হয়েছে। সেখানে এই জনবলের ঘাটতি নিয়েই পরিচালনা করা হচ্ছে ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কর্তৃপক্ষ সীমিত জনবল দিয়েই কোনোমতে উপজেলাবাসীর স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।  সমস্যা একটু বেশি হলেই হবিগঞ্জ বা সিলেটে রোগীকে রেফার করে  নিয়ে যেতে হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের ১ জুলাই নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু ৫০ শয্যা অনুযায়ী যে জনবল নিয়োগ দেওয়ার কথা, তা এখনো দেওয়া হয়নি। ফলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চলছে ৩১ শয্যার জনবল দিয়েই।  স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসায় নিয়োজিত টিএইচওসহ ৫ জন মেডিকেল অফিসার থাকলেও ইউনিয়ন ভিত্তিক কমিউনিটি উপ সহকারী মেডিকেল অফিসারসহ মেডিকেল এসিসটেন্ট পদ রয়েছে অনেকটাই খালি।  ৩১ শয্যার জনবলের মধ্যেই মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফি) পদটি ০৬ বছর ধরে শূন্য রয়েছে। টেকনোলজিস্টের অভাবে ০৬ বছর ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে এক্সরে মেশিন। মেডিকেল টেকনোলজিস্টের (ল্যাব) ২টি পদের একটি শূন্য। একটি পদের কর্মরত টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) ডেপুটেশনে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণে থাকায় এই বিভাগটি বন্ধ আছে প্রায় ৬ বছর ধরে। অন্যদিকে নার্সের ১৪টি পদের মধ্যে ৭টি শূন্য,  সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শকের ১১টি পদের মধ্যে ৭টি পদ শূন্য, স্বাস্থ্য পরিদর্শকের ৪টি পদের ৪টি শূন্য, অফিস সহকারীর ৩টি পদের মধ্যে ১টি পদ শূন্য, ক্লিনারের ৫টি পদের মধ্যে ১টি পদ শূন্য, নিরাপত্তা প্রহরীর ২টি পদের মধ্যে ,২টি শূন এমএলএসএস ৩টি পদের ৩টি পদ শূন্য, আয়া ২টি পদের ২ শূন্য, ওয়ার্ড বয় ২টি পদ ২টি পদ শূন্য,বাবুর্চি ২টি পদ ২টি শূন্য, মালি ১টি পদ ১টি শূন্য।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানিয়েছে, এখানে প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৩ শত থেকে ৪ শত রোগী বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা নিতে আসেন। সীমিত এই জনবল নিয়ে মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে জনবলের ঘাটতি পূরণ হলে উপজেলাবাসীকে আরো ভালোমানের সেবা দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন কতৃর্পক্ষ ।
তবে চিকিৎসা নিতে আসা  সাধারন মানুষের রয়েছে ব্যাপক অভিযোগ।  সরকারীভাবে ঔষধ না পাওয়া,চিকিৎসা সেবায় অবহেলা, সেবার নামে নার্সদের উৎকোচ দাবী,যেসব রােগীকে চিকিৎসা সেবা এই হাসপাতালে দেওয়া সম্ভব সে রোগীকে হবিগঞ্জ বা সিলেট প্রেরন করে হয়রানীসহ নানা সমস্যার কথা জানিয়েছেন অনেকেই। জনবল সংকট নিয়েই চলছে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষের ভরসাস্থল নবীগঞ্জ  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
নবীগঞ্জ  উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সামাদ, এ  প্রতিনিধিকে জানান, ‘৩১ শয্যার কম জনবল দিয়েই ৫০ শয্যার কার্যক্রম চলছে। ৩১ শয্যার জনবলেও বেশ কিছু পদ শূন্য আছে। এই সীমিত জনবল নিয়েও আমরা সাধ্যমতো জনগনকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছি। জনবল নিয়োগের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। জনবল নিয়োগের কার্যক্রম চলমান আছে। জনবল বাড়লে স্বাস্থ্য সেবার মান আরো বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ৪টি কেবিন ১৫ বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত আছে। ২২টি অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে। ভবিষ্যতে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি আরো খারাপ হলে তা মোকাবেলার জন্য আরো অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদা বারবে । হাসপাতালে আগত রোগী ও রোগীর স্বজনদের হাত ধোয়ার জন্য ওয়াশ বেসিন স্থাপন করা হয়েছে। করোনার নমুনা সংগ্রহের জন্য বুথ স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিদিন র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে এবং আর টি পিসি আর পরীক্ষার জন্য স্যাম্পল সংগ্রহ করে সিলেটে পাঠানো হচ্ছে। করোনার মৃদু হতে মাঝারি উপসর্গের রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়ার মতো ব্যবস্থা আমাদের এখানে আছে। তবে গুরুতর উপসর্গের করোনা রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রেফার করা ব্যতীত ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই।