![](https://www.sylhetsurma.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাওঁ ও তোয়াকুল ইউনিয়নের হাওরাঞ্চল। হাওরাঞ্চলে রয়েছে উপজেলার নন্দিরগাওঁ ও তোয়াকুল ইউনিয়নের ছোট বড় প্রায় ১৮ টি গ্রাম। দেশ স্বাধীনের ৫৩ বছর অতিবাহিত হলেও এ-সব গ্রামে এখনো পাকা সড়কে ছোঁয়া লাগেনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সালুটিকর বাজার থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নন্দিরগাওঁ ইউনিয়নের কচুয়ারপার,দারিকান্দি ও দারিরপার গ্রাম। দারিকান্দি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চৌধুরী কান্দি,বাইমারপার, চলিতাবাড়ি ও শিয়ালা হাওর গ্রাম। শিয়ালা হাওর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জলুরমুখ গ্রাম।এবং জলুরমুখ থেকে
লক্ষীনগর,মেউয়ারকান্দি,চদিবদি হাওর,পূর্ব পেকেরখাল, জামলাকান্দি গ্রামগুলোর দূরত্ব আরো দুই কিলোমিটার। মাত্র ১০ কিলোমিটার পাকা সড়কের অভাবে এ যুগেও নন্দিরগাওঁ ও তোয়াকুল ইউনিয়নের এসব গ্রামের উপাধি হাওরাঞ্চল হিসেবে। এসব গ্রাম থেকে থেকে সালুটিকর বাজার,গোয়াইনঘাট উপজেলা সদর কিংবা জেলা শহরে যাওয়ার একটি মাত্র রাস্তা। এই একমাত্র রাস্তায়ও দৃষ্টি পড়েনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের। হাওর এলাকায় দৃষ্টি দিলে দেখা মিলে ‘বর্ষায় নাও আর হেমন্তে পাও’ প্রবাদের বাস্তব চিত্র। স্থানীয়রা জানান, যোগাযোগের ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়েই পড়াশোনার ইতি টানছে। চলিতাবাড়ি গ্রামের বীরমুক্তি যোদ্ধা কাশেম আলী বলেন, নন্দিরগাওঁ ও তোয়াকুল ইউনিয়নের হাওরাঞ্চলের গ্রামে জনবসতি শত বছরের পুরনো। এখনে ১৫ হাজার মানুষের বাস।
গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, সব রাজনৈতিক দলের জনপ্রতিনিধিরাই শুধু ভোটের সময় গ্রামে আসেন। নির্বাচন শেষ হলে তারা উধাও। একটি রাস্তার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ফল মেলেনি।
কৃষি, নদী, গবাদি পশু লালন পালন ও বর্ষায় মাছ ধরার মধ্যেই এসকল গ্রামের মানুষের জীবিকা সীমাবদ্ধ। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকার কারণেই তারা এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। নন্দিরগাওঁ ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ইউনুস আলীর আলাপকালে হাওরবাসীর দুর্ভোগের বিবরণ দেন। ইউনিয়ন বিএনপি নেতা রমযান আলী বলেন, ‘আমাদের গ্রামে স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। ৬-৭ বছর আগে বিদু্যতের আলো পৌঁছালেও রাস্তায় মাটির কাজ ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোন উন্নয়ন জনপ্রতিনিধি করেননি।
নন্দিরগাওঁ ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউল হক জিয়া বলেন, ‘১৫ বছর যাবৎ সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমদ হাওরাঞ্চলে কুড়ি বার মাটির রাস্তা পরিদর্শন করে পাকাকরণের আশ্বাসও দিয়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি তার ওয়াদা রক্ষা করেননি।’আমাদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নেই। অসুস্থ হলে স্বাস্থ্যসেবা পাই না। রাস্তাঘাট নেই। ভোটের সময় এলে অনেকে অনেক প্রতিশ্রম্নতি দেন। কিন্তু ভোটের পর তাদের আর দেখা যায় না।
গত ১৫ বছর যাবৎ শুধু রাস্তা উন্নয়নের প্রতিশ্রম্নতি শোনেই গেলাম। কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। বিএনপি নেতা আব্দুল মতিন লেবু বলেন, রাস্তার অভাবে গ্রামের লোকজন অসুস্থ হলে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা সেবা মেলে না। মুমূর্ষু রোগীদের দরজা, পলো অথবা গরুর গাড়িতে করে নিয়ে হয় চিকিৎসকের কাছে। অনেক সময় যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে বিনা চিকিৎসায় মারা যায় অনেকে। সামান্য বৃষ্টি হলে রাস্তায় চলতে পারি না। এখন তো হেঁটে আমরা সালুটিকর বাজারে যেতে পাড়ি। কিন্তু জ্যৈষ্ঠ মাসে নারী-পুরুষ হাঁটুর উপরে কাপড় তুলে দুই কিলোমিটার রাস্তা যাতায়াত করতে হয়।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন সালুটিকর – গোয়াইনঘাট রাস্তা থেকে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদর পর্যন্ত গাংকিনারী রাস্তা নামে এলজিইডিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদর থেকে গাংকিনারী রাস্তায় দুই কিলোমিটার আরসিসি ঢালাই করে পাকা করা হয়েছে। অপর দিকে সালুটিকর – গোয়াইনঘাট সড়কের কচুয়ারপার গ্রাম পর্যন্ত পাকাকরণের লক্ষে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রকৌশলীকে ডাটাবেইজ সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে।