• ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

শিলংয়ের তীঁরে মজেছে সিলেট : বাড়ছে অপরাধ

sylhetsurma.com
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৬

shafiভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং। সিলেট সীমান্তের একদম কাছাকাছি। শিলংয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি খেলা হচ্ছে ‘তীর খেলা’।  অনেক ভারতীয়রা তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় এ খেলায় অংশ নিয়ে থাকেন। এখন এ খেলা শুধু ভারতে সীমাবদ্ধ নয় । সীমান্ত পেরিয়ে এ খেলা এখন সিলেট ও  অনুষ্ঠিত হয়।  এ ‘তীর খেলা’য় বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নিচ্ছে। সিলেটের যেকোন এলাকায় বসেই তারা শিলং জুয়ায় বাজি ধরছে। এ খেলাটি সপ্তাহের ছয়দিনই বসছে । প্রতিদিন দুইবার এ খেলার ড্র অনষ্টিত হয়ে থাকে। সিলেটে তাদের এজেন্টের মাধ্যমে এদেশীয় এজেন্টরা ভারতের এজেন্টের সাথে জুয়ার আসরের সমন¦য় করে থাকে। আর ভারতীয় এ ভাগ্যের খেলায় স্কুল কলেজের ছাত্র, শিক্ষক,দিনমজুর, রিকশাচালক, যানবাহনের চালক-শ্রমিকসহ বেকার যুবকরা অংশ নিচ্ছে। আর এতে করে অনেক স্কুলগ্রামী ছাত্ররা স্কুল ফাঁকি দিয়ে এ খেলায় অংশ নিচ্ছে এতে করে ছাত্রদের মনযোগ বইয়ের পরিবর্তে তীর খেলার দিকেই বেশী। দীর্ঘদিন ধরে এই খেলা চললেও এদের বিরুদ্ধে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ২০ থেকে ২৫ বছর পূর্বে ভারতীয় ধনকুবেররা এ রকম খেলাটি আবিস্কার করে। এর নাম রাখে মেঘালয়ের আঞ্চলিক ভাষায় ‘তীর খেলা’। স্থানীয় ভাবে খেলাটিকে অনেকেই শিলং,  ডিজিটাল খেলা, টুকা খেলা, নাম্বার খেলা, বোটকা খেলা, ভাগ্যের খেলা, ডিজিটাল নাম্বর খেলা ইত্যাদি নামে অবহিত করে থাকেন। খেলাটি ধরণ হচ্ছে এ রকম যে এদেশের এজেন্টদের মাধ্যমে ১-৯৯ পর্যন্ত নাম্বার বিক্রয় করা হয় যে কোন মূল্যে। লটারিতে ০ থেকে ৯৯ পর্যন্ত যে কোনো সংখ্যা কিনে নেওয়া যায়। সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাজি ধরা যায়।যত মূল্যে সংখ্যাটি বিক্রয় হবে তার ৭০ গুণ লাভ দেয়া হবে বিজয়ী নম্বরকে। অথাৎ ১০ টাকায় ৭০০ টাকা। একই নম্বর একাধিক লোকও কিনতে পারেন। সবাই কেনা দামের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি টাকা পাবেন। প্রতিদিন বিকাল সোয়া ৪টায় ও সাড়ে ৫টায় দুবার এ লটারির ড্র অনুষ্টিত হয়ে থাকে। ড্রর ফলাফল দেওয়া হয় অনলাইনে। ভারতের শিলং থেকেwww.teercounter.com  এ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জুয়ার আসরটি পরিচালনা করা হয়। আর এ ওয়েব সাইটের মাধ্যমে ফলাফল জানাও যায়।  অনুসন্ধানে জানা যায়, সিলেট শহরের কাজির বাজার ,শেখঘাট, বেতের বাজার, শামিমাবাদ, কাজলশাহ্, রিকাবীবাজার, মদিনা মার্কেট,কুমারগাঁও বাসষ্টেন্ড,তেমূখী, টুকের বাজার,আখালিয়া,বালুচর ,টিলাগড়, আম্বরখানা, মেন্দিবাগ, কদমতলীসহ শহরের প্রায় শতাধিক স্পটে ভারতীয় এ জুয়ার আসর বসে থাকে। আর এসব জুয়ার নেতৃত্বে রয়েছেন প্রভাবশালী দলের নেতাকর্মীরা ও প্রশাসনের একাধিক ব্যাক্তি।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ শতাধিক ব্যক্তিরা জানান- নাম্বার বইয়ের মালিকরা হোটেলে বসে নিরাপদে খেলার নাম্বার টুকন বিক্রয় করছেন। তাদের লিডারদের কারনে কোন কিছু বলতে পারছেনা হোটেল মালিকরা। এলাকাবাসীর দাবী ভারতীয় “তীর খেলা” লঠারির বিক্রেতাদের নিকট থেকে আইন প্রয়োগকারী দলের সদস্যরা বই প্রতি ৫শত হতে ৬শত টাকা হারে চাঁদা আদায় করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা উৎকোচের বিনিময়ে এলাকার প্রকাশ্যে তীর খেলার দোকান স্থাপন ও টোকেন বিক্রয়ের সুযোগ করে দিয়েছেন।
অপরদিকে মরণ নেশার হাত থেকে যুব সমাজকে বাঁচাতে শনিবার কদমতলী এলাকায় স্থানীয়  বাসিন্দাদের ও স্বর্ণশিখা সমাজ কল্যান সংস্থার নেতৃবৃন্দের সহযোগীতায় খেলাটির আসর বন্দ করা হয় এবং পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাহায্য কামনা করে।

গত ২৮ আগস্ট উত্তর সুরমা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল আহবায়ক আলহাজ্ব খলিলুর রহমান এসএমপি পুলিশ কমিশনার বরাবর এক লিখিত আবেদনের মাধ্যমে জুয়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণে আবেদন জানিয়েছেন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, উক্ত এলাকায় পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে ড্রাইভার ও হেলপাররা লোভনীয় জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছেন। এতে তাদের পারিবারিক জীবনে নেমে আসছেন ভয়াবহ বিপর্যয়। এসব শ্রমিকদের পরিবারের পক্ষ থেকে মালিক সমিতির বরাবরে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগের পরিপেক্ষিতে তারা নিজ উদ্যোগে জুয়া বন্ধের প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। কিন্তু তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় তারা উক্ত বিষয়ে পুলিশ কমিশনার বরাবর লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রতিকার কামনা করেছেন।
বিগত জুন মাসে শহরতলির বালুচরে জুয়ার আসর নিয়ন্ত্রণ করে ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপ। তাদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশের হাতে গ্রেফতারও হয়েছেন কয়েকজন।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মো. রহমত উল্লাহ জানান, শিলংয়ে অনলাইনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত জুয়া খেলা সিলেটে সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। এ খেলায় মানুষ এতই আসক্ত হয়েছে যে, একই পরিবারের বাবা-মা-ছেলে মিলে জুয়ায় বাজি ধরছেন। পুলিশ জুয়ার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছে। যেখানেই জুয়ার আসরের খবর পাচ্ছে সেখানেই স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় অপারেশন চালাচ্ছে।