ঢাকা ২১শে এপ্রিল, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই বৈশাখ, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:০৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩০, ২০২০
বাবর হোসেন :
২৯ মার্চ ২০২০ ইং রোববার দিবাগত রাত ৯ টা ৫৪ মিনিটে সাংবাদিক এম এ রহিম’র মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানতে পারলাম কমরেড মালেক ভাই সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় সবাইকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। ইন্নালিল্লাহী………. রাজিউন। সবাই মালেক ভাই কে চিনেন নারী কোর্টের সাবেক পিপি হিসেবে।
আমার সাথে মালেক ভাইয়ের পরিচয় সেই ১৯৮৬ সাল থেকে। তখন দেশে প্রকাশ্যে ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড করা যেত না, আমি তখন সাপ্তাহিক সিলেট সংবাদ পত্রিকায় কাজ করি। জাতীয় দৈনিক বাংলার সে সময়কার স্টাফ রিপোর্টার শ্রদ্ধেয় এডভোকেট তবারক হোসেইন পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদক ছিলেন।
অফিস ছিল রাজা ম্যানশনে, বর্তমানে যেখানে দৈনিক সিলেট বাণীর অফিস। সিলেট বাণীর বর্তমান নির্বাহী সম্পাদক ও সিলেট প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি এম এ হান্নান তখন সাপ্তাহিক সিলেট সংবাদের কানাইঘাট সংবাদদাতা ছিলেন এবং দৈনিক সিলেট মিরর সম্পাদক আহমেদ নূর সাপ্তাহিক সিলেট সংবাদে এসে তখনও যোগদান করেননি।
এডভোকেট তবারক হোসেইন উদীচীর সভাপতি ছিলেন, কমরেড মালেক ভাই কমিউনিষ্ঠ পার্টির নেতা এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম লড়াকু সৈনিক ও রূপকার।
রাজনৈতিক কর্মকান্ড প্রকাশ্য করার উপর নিষেধাজ্ঞার কারণে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আড়ালেই সাপ্তাহিক সিলেট সংবাদ পত্রিকার অফিসে তবারক হোসেইনের নেতৃত্বে গোপনে রাজনৈতিক কর্মকান্ড এবং মিটিং করতেন বামপন্থীরা।
সেখানে তখন আসতেন সাংস্কৃতিক কর্মী ও লেখক রফিকুল রহমান লজু, মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দিন লস্কর, কমরেড মালেক ভাই, এডভোকেট বেদানন্দ ভট্টাচার্য্য, গণসংগীত শিল্পী ভবতোষ চৌধুরী, শমসের হোসেইন, গোবিন্দ পাল, খেলাঘরের কমরেড তাজুল মোহাম্মদ, সাংবাদিক আল-আজাদ, সাংবাদিক তাজুল ইসলাম বাঙালী, তখনকার সময়কার ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ইখতিয়ার উদ্দিন, তাপস ভট্টাচার্য্য, আবিদ আলি সহ আরো অনেকেই।
অন্য সবাই যে যার মত করে এসে জড়ো হলেও মালেক ভাই তার বিশাল দেহখানা নিয়ে রাজা ম্যানশনে প্রবেশ করলে খবর হয়ে যেতো।
বিশেষ করে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের লোকজন অন্য কাউকে না দেখলে ও মালেক ভাইকে ঠিকই দেখে ফেলতো। সে সময় সিলেট জেলা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের কর্মকর্তা মিফতাহুল হুদা ও শাহ আলম ফারুকী। দুজনের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। পরবর্তীতে সেখানে এসেছিলেন, জাহিদ আকবর চৌধুরী নামের একজন সহকারি পুলিশ সুপার।
সিনিয়র সাংবাদিক হিসেবে তবারক হোসেইন এর সাথে তাদের জানাশোনা ছিল, যেহেতেু দৈনিক বাংলা এক সময় সরকারি মালিকানায় ছিল, স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী এবং অন্যতম সাংবাদিক ছিলেন কালের কণ্ঠের ফটো সাংবাদিক আসকার আমিন রাব্বীর পিতা খায়রুল আমিন লস্কর মঞ্জু ভাই।
একদিন বিকেলে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আড়ালে সিলেট সংবাদ অফিসে গোপন মিটিং চলছিলো এবং সেই মিটিং এ কমরেড মালেক ভাই ও উপস্থিত ছিলেন অন্য সকলের সাথে।
সে সময় সিলেট কোতোয়ালি থানার নুরুল ইসলাম নামে দাঁড়ি ওয়ালা এক দারোগা ছিলেন, তাকে সবাই খোমেনী বলে ডাকতো। ভেতরে পত্রিকার অফিসে মিটিং চলছে, আমি রাজা ম্যানশনের বাহিরে হাটাহাটি করছি এবং পরিস্থিতির দিকে খেয়াল রাখছি।
এ সময় সেখানে এসে উপস্থিত সেই খোমেনী দারোগা নুরুল ইসলাম। তাকে দেখলেই লোকজন দূরত্ব বজায় রেখে অবস্থান করতো। কারণ সে মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করতে অভ্যস্ত ছিল না কখনোই। আমার সাথে ও তার পরিচয় ছিল। কিন্তু সুসম্পর্ক তেমন একটা ছিল না।
লাল সিডিআই হোন্ডা মোটরসাইকেল টি কাকলী মিষ্টি ঘরের সামনে রেখে পায়ে হেঁটে রাজা ম্যানশনের কন্টিনেন্টাল টেইলার্সের সামনে এসে আমার কাছে জানতে চাইলো ভেতরে কিসের মিটিং হচ্ছে এবং কারা কারা আছেন।
আমি বলেছিলাম তবারক ভাইয়ের কাছে কিছু সিনিয়র সাংবাদিক এসেছেন, তারা কথাবার্তা বলছেন, তাই আমি বাহিরে চলে এলাম, অপেক্ষা করছি তারা চলে গেলে আমি অফিসে গিয়ে কাজ করব।
ব্যাটায় যে, কমরেড মালেক ভাইকে টার্গেট করে এসেছিলো আমি তা বুঝতে পারিনি। তবুও তাদের মিটিং শেষে আমি মালেক ভাইকে সতর্ক করে বলেছিলাম, নুরুল ইসলাম এসেছিলো, জিন্দাবাজার পয়েন্টে এলাকায় রয়েছে, আপনি সাবধানে যাবেন। মালেক ভাই মিটিং শেষে জিন্দাবাজার পয়েন্ট থেকে নেহার মার্কেটের সামন হয়ে বারুতখানা রাস্তার মুখে যেতেই মোহনলাল মিষ্টি ঘরের আড়াল থেকে বের হয়ে দারোগা নুরুল ইসলাম মালেক ভাইকে ধরে ফেলেছিল।
মালেক ভাই অবশ্য তার বিশাল দেহখানা নিয়ে দৌড়ে পালানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারেননি।
পরবর্তীতে মালেক ভাই ওকালতি পাশ করে সিলেট জেলা জজ আদালতের উকিল বারে উকালতিতে যোগদান করলেন, কমিউনিষ্ট পার্টির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও হলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে নারী নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি হলেন, দৈনিক শ্যামল সিলেট পত্রিকার বদৌলতে তাঁর নামের সাথে আরেকটি উপাধি যুক্ত হলো।
যে এম এ রহিমের মাধ্যমে আমি তাঁর মৃত্যুর সংবাদ পেলাম, সেই মানবজমিনের রহিম ধর্ষণ মামলা থেকে খালাস পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশি অবদান ছিলো মালেক ভাইয়ের। সাংবাদিকদের পেশাগত কারণে সহযোগিতা করতেন তিনি।
আমাকেও করেছিলেন, ডিআইজি মিজানের সেই তানিয়া ইয়াসমিন মনিকে ভিকটিম হিসেবে সম্ভবত আমিই প্রথম দেখেছিলাম মালেক ভাইর সহযোগিতায়।
যে মনিকে দিয়ে মানবজমিনের এক সময়কার ব্যুারো চীফ চৌধুরী মমতাজের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করানোর ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছিলো সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সে সময় ২০১৪ইং সালের কমিশনার ও বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা সাবেক ডিআইজি মিজানুর রহমান মিজান।
লেখক
বাবর হোসেন,
নির্বাহী সম্পাদক,সাপ্তাহিক বাংলার বারুদ।
সভাপতি : সিলেট সিটি প্রেসক্লাব।
উপদেষ্টা সম্পাদক : ওয়াহিদুর রহমান
সম্পাদক ও প্রকাশক মো. নাজমুল ইসলাম
নির্বাহী সম্পাদক : আমিনুল ইসলাম রোকন
সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ফোন : ০৮২১-৭১১০৬৯,
মোবাইল : (নির্বাহী সম্পাদক-০১৭১৫-৭৫৬৭১০ )
০১৬১১-৪০৫০০১-২(বার্তা),
০১৬১১-৪০৫০০৩(বিজ্ঞাপন), ইমেইল : www.sylhetsurma2011@gmail.com
ওয়েব : www.sylhetsurma.com
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি