• ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ঘন ঘন ভূমিকম্প : বাড়ছে শঙ্কা

sylhetsurma.com
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৫

13895226_1117504274976648_8499868811352506055_nএম এ মালেক :::
২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দু’ দফায় ভূমিকম্প হয়ে গেলো সিলেটসহ সারাদেশে। মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে ৫.৩ মাত্রার ভূমিকম্পের পর গতকাল বিকেলে ফের ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে সিলেটে। বিকাল ৪টা ৩৭ মিনিটে ৬.৮ মাত্রার তীব্র এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ভূমিকম্প জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানায় মঙ্গলবারের মতো এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৪০৯ কিলোমিটার দূরে মিয়ানমারে। এর আগের দিন ইতালীতেও ভয়াবহ ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।  স্বল্প ব্যবধানে ধারাবাহিক এ ভূমিকম্পকে অস্বাভাবিকভাবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বড় ভূমিকম্পের পূর্বে আক্রান্ত এলাকায় ঘন ঘন ছোট আকারে ভূমিকম্প হয়। আর প্রতি একশ’ বছর পর পর বড় আকারের ভূমিকম্প প্রলয়ংকারীরূপে আঘাত হানে। সিলেটে সর্বশেষ বড় ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিলো ১৯১৮ সালে। যা ইতিহাসে আজও ‘বড় ভুইসাল’ হিসেবে পরিচিত। এ ভূমিকম্পে ব্যাপক প্রাণহানির পাশাপাশি নদীর গতিপথও পাল্টে গিয়েছিলো বলে ইতিহাসবিদরা উল্লেখ করেছেন।  এদিকে, একাধিক ভূমিকম্পে ভূগর্ভের প্লেট সরে যাওয়ায় নাজুক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। সিলেটের অবস্থা আরো ভয়াবহ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্পের ডেঞ্জার জোনে রয়েছে সিলেটের অবস্থান। আর বছরের শুরু থেকে দফায় দফায় ভূমিকম্পে কাঁপছে সিলেট। এ বছরের শুরু হয়েছিলো ভূমিকম্প দিয়ে। আর গত আট মাসে এ পর্যন্ত অন্তত ১৫ দফায় ভূমিকম্প হয়েছে। তাই ভূমিকম্পের আতঙ্ক এখন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে সিলেটবাসীকে। যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্পের শঙ্কা করছেন দিশেহারা মানুষ। বড় ভূমিকম্প মোকাবেলায় এখনই প্রস্তুতি প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন অনেকে।   উল্লেøখ্য, ২০১৬ নতুন বছরের শুরুতেই  সিলেটসহ সারা দেশে ৬.৮ এবং ৭ মাত্রার দু’দফায় বড় ভূমিকম্প হয়। এরপর থেকে প্রায় প্রতিমাসেই ভূমিকম্প আঘাত হানছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫ বার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে দেশে। ঘন ঘন এমন ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে শক্তিশালী ভূমিকম্পের অশনি সঙ্কেত রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।  ভূ-তাত্ত্বিকরা বলছেন, ‘ইন্দো-বার্মা-হিমালয়ান, ইউরেশীয় একাধিক ভূ-ফাটল লাইনের বিস্তার ও অব্যাহত সঞ্চালনের কারণে বাংলাদেশ ও আশপাশ অঞ্চলটি বিশ্বের অন্যতম সক্রিয় ভূকম্পন বলয় হিসেবে চিহ্নিত। সাম্প্রতিককালে উপর্যুপরি মৃদু, হালকা, মাঝারি মাত্রার ভূকম্পনের কারণে এ অঞ্চলের ভূ-ফাটল লাইনগুলো নাজুক ও শিথিল হয়ে পড়ছে, যা অদূর ভবিষ্যতে আরও প্রবল মাত্রায় ভূমিকম্পের আলামত বহন করছে। বিগত এক-দেড়শ বছরে এই নিয়ে বেশ কয়েকবার এ অঞ্চলে রিখটার স্কেলে ৭ থেকে ৮ মাত্রার তীব্র ক্ষমতাসম্পন্ন ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। অভিন্ন টেকটোনিক প্লেট ও ভূ-ফাটল (ফল্ট) লাইনের অন্তর্গত হওয়ার কারণে ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চল ভূমিকম্পের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত। বগত দু’বছরে বাংলাদেশের ভূখ-ে এবং এর সংলগ্ন ভারত-মিয়ানমার অঞ্চল জুড়ে প্রায় অর্ধশত মৃদু, হালকা, মাঝারি ও শক্তিশালী ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে।
বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমার ত্রিদেশীয় এ অঞ্চলের ভূ-তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য, ভূ-গঠন অনুসারে এর অবস্থান পৃথিবীর অন্যতম সক্রিয় ভূকম্পন বলয়ে। বিশ্বে সাধারণত একই ভূ-কম্পন প্রবণ এলাকায় ৫০, ৭০, ১০০, ১৫০ বছর পরপর প্রবল বা শক্তিশালী মাত্রায় ভূমিকম্পের পুনরাবৃত্তি ঘটে। বাংলাদেশ ও এর সন্নিকটে উত্তর-পূর্ব ভারতের ভূকম্পন-প্রবণ অঞ্চলটিতে বিগত ১৫০ বছরের মধ্যে রিখটার স্কেলে ৭ ও ৮ মাত্রায় কমপক্ষে ৭টি ভূমিকম্প এবং একাধিক ভয়াল সুনামি আঘাত হানে, এমন রেকর্ড রয়েছে। এর মধ্যে ২টির উৎপত্তিস্থল (ইপি সেন্টার) ছিল বর্তমান বাংলাদেশ ভূখ-ের অভ্যন্তরেই এবং অপর ৫টি ভূমিকম্পের উৎস ছিল রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ২৫০ কিমি দূরত্বে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘বিশ্বের অন্যতম সক্রিয় ভূকম্পন বলয়ের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে বেশ উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে। বাংলাদেশ সংলগ্ন ভারত ও মিয়ানমারে ভূ-পাটাতন ও ভূ-ফাটল ঘন ঘন স্থানচ্যুত হচ্ছে। এর ফলে শক্তিশালী মাত্রায় ভূমিকম্প বলতে গেলে অনিবার্য হয়ে উঠেছে।
গত দু’দিনের ভূমিকম্প যথেষ্ট শক্তিশালীই ছিল। কিন্তু এর উৎপত্তিস্থল বেশ দূরে হওয়ায় তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে যেকোনো মুহূর্তে সিলেটসহ সারাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বড় ভূমিকম্প মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি এখনই প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।