• ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

বিদায় কবি…..

sylhetsurma.com
প্রকাশিত আগস্ট ২৯, ২০১৬

সিলেট সুরমা ডেস্ক ::: শহীদ কাদরী সেই বিরলপ্রজ কবি, যিনি দীর্ঘকাল যাবৎ স্বদেশ থেকে দূরে মার্কিন মুলুকে স্বেচ্ছা-নির্বাসনে রয়েছেন। এ যাবৎ তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ সবেমাত্র তিনটি। এগুলো হলো- উত্তরাধিকার (১৯৬৭), তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা (১৯৭৪) এবং কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই (১৯৭৮)। এ তিনটি কাব্যগ্রন্থের বাইরে তাঁর আর কোনো গ্রন্থের সন্ধান এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি। দীর্ঘ দীর্ঘদিন যাবত তাঁর কোনো নতুন কবিতাও চোখে পড়েনি। হয়তো তিনি লেখালেখি ছেড়েই দিয়েছেন, নয়তো প্রকাশ করছেন না। কিন্তু তিনটি কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে তিনি যে আধুনিক মনন, বিশিষ্ট শিল্পবোধ এবং কাব্যভঙ্গির প্রকাশে যে গভীর জীবনবোধ, অন্তর্গত বিষাদ ও বৈরাগ্যের যোগ ঘটিয়েছেন তা অবশ্যই তাঁকে বাংলা কবিতার ময়দানে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে। বিরলপ্রজ এই কবির মৃত্যুতে গভীর শোকাহত সিলেট সুরমা পরিবার।

নাগরিক জীবনে প্রাত্যহিক যন্ত্রণা ও ক্লান্তির অভিজ্ঞতাকে তুলে এনেছিলেন কবিতায়। সামরিক বাহিনী দ্বারা তিনি প্রিয়তমাকে জানাতে চেয়েছিলেন অভিবাদন। সে কবি শহীদ কাদরী আর নেই। গতকাল রোববার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি (ইন্নলিলাহি…রাজিউন)। মৃত্যুকালে কবির বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ জানান, রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় নিউইয়র্কের নর্থ শোর বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শহীদ কাদরী। তিনি জানান, কবিপতœী নীরা কাদরী তাকে এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন-দ্রততম সময়ের মধ্যে তার মরদেহ বাংলাদেশ আনা হবে। কবিপতত্মী মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তার দাফনের ইচ্ছাপোষন করেছেন। বাংলাদেশে মরদেহ আসার পর তাকে শহীদ মিনারে জাতির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হবে বলে জানিয়েছেন মুহাম্মদ সামাদ।
তার মৃত্যুতে দেশের শিল্প-সাহিত্য জগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শহীদ কাদরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে বাংলা একাডেমি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জাতীয় কবিতা পরিষদসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কবি বেলাল চৌধুরী বলেন, আমার বন্ধু ছিল সে। খুবই শক্তিমান কবি। তার এ চলে যাওয়া আমার জন্য বড় ক্ষতি। আমি এই মুহূর্তে আর কিছুই বলতে পারবো না।
গত ১৪ আগস্ট প্রবাসী কবি শহীদ কাদরী ৭৪ বছরে পর্দাপন করেন। সেদিন নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় কবির বাসভবনে বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভক্ত-অনুরাগীরা কবিকে ফুল দিয়ে, গান গেয়ে ভালোবাসায় সিক্ত করেন। এর এক সপ্তাহ পর গত ২১ আগস্ট স্থানীয় সময় রাত ৩টা ১৫ মিনিটে নিউইয়র্কের নর্থ শোর হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয় তাকে। এর আগের দিন থেকেই জামাইকার বাসায় কবির শরীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তিনি উচ্চ রক্তচাপ এবং জ্বরে ভুগছিলেন।
প্রবাসী কবি শহীদ কাদরী ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গার পর তার পরিবার স্থায়ীভাবে ঢাকায় চলে আসেন। ১৪ বছর বয়সে শহীদ কাদেরীর প্রথম কবিতা ‘এই শীতে’ বুদ্ধদেব বসুর ‘কবিতা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। কাকতালীয়ভাবে সেদিনই তার মা মারা যান।
১৯৭১ সালে শহীদ কাদেরী বিয়ে করেন পিয়ারীকে। সে সময়কার হিসেবে আধুনিক এ নারীর হাত ধরে ভাগ্যের অন্বেষণে ১৯৭৮ সালে পাড়ি দেন জার্মানিতে। পিয়ারীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তিনি চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে তিনি নতুনে সঙ্গী হিসেবে বেছে নেন তার ভক্ত নীরাকে।
উত্তরাধিকার (১৯৬৭), তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা (১৯৭৪), কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই, আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও (২০০৯) শহীদ কাদরীর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। তিনি ২০১১ সালে একুশে পদক লাভ করেন। এছাড়াও তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, মযহারুল ইসলাম কবিতা পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন খ্যাতিমান এ কবি।
প্রধানমন্ত্রীর শোক
আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি শহীদ কাদরীর মৃত্যুতে  শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিউ ইয়র্কের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় মারা যান শহীদ কাদরী। কবির বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। উচ্চ রক্তচাপ ও জ্বর নিয়ে সাত দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।
তার মৃত্যুতে এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শহীদ কাদরীর মৃত্যুতে আধুনিক বাংলা কবিতা এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারাল।’ প্রয়াত এই কবির আত্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী।
সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরও কবি শহীদ কাদরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকা-ের পর শহীদ কাদরী লিখেছিলেন ‘হন্তারকদের প্রতি’:
বাঘ কিংবা ভালুকের মতো নয়,
বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে আসা হাঙরের দল নয়
না, কোনো উপমায় তদের গ্রেপ্তার করা যাবে না
তাদের পরনে ছিল ইউনিফর্ম
বুট, সৈনিকের টুপি,
বঙ্গবন্ধুর সাথে তাদের কথাও হয়েছিল,
তারা ব্যবহার করেছিল
এক্কেবারে খাঁটি বাঙালির মতো
বাংলা ভাষা। অস্বীকার করার উপায় নেই ওরা মানুষের মতো
দেখতে, এবং ওরা মানুষই
ওরা বাংলা মানুষ
এর চেয়ে ভয়াবহ কোনো কথা আমি আর শুনব না কোনোদিন।