• ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

৪৫ দিনে ৬ খুন

sylhetsurma.com
প্রকাশিত অক্টোবর ২৩, ২০১৬

বড়লেখা সংবাদদাতা
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় একটি খুনের রেশ কাটতে না কাটতেই ঘটছে আরো একটি খুনের ঘটনা। লাশের মিছিলে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা, বৃটিশ নারী, অটোরিকশা চালক থেকে  নিরাপত্তা প্রহরীও। এ নিয়ে গত দেড়মাসে ছয়টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘচেছে উপজেলাটিতে। ফলে একের পর এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডর ঘটনায় সাধারণ মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে বেশিরভাগই হত্যাকাণ্ড পূর্ববিরোধের জেরেই সংঘটিত হচ্ছে। এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়ী করলেও সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে এ ধরণের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে বলে সচেতন মহল মনে করেন। পৃথক এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাকিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তে সংশ্লিষ্টরা।
সর্বশেষ গত শুক্রবার উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের বড় ময়দান গ্রামের মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে আছান উদ্দিন (৩৫) নামের এক বিল পাহারাদারকে রাতের আঁধারে খুন করে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। শনিবার ভোরে স্থানীয় একটি বিলের পানিতে ভাসমান অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দেলোয়ার হোসেন (২০) নামের এক যুবককে আটক করে।
এর আগে ১৪ অক্টোবর উপজেলার সদর ইউনিয়নের কেছরিগুল গ্রামে দুপুর সাড়ে ১২টার জমি সংক্রান্ত পূর্ববিরোধের জেরে আপন ভাতিজার ছুরিকাঘাতে আসুক আহমদ (৩৬) নির্মমভাবে খুন হন। নিহত আসুক আহমদ কেছরিগুল গ্রামের হাজী মঈন উদ্দিন মনাইর ছেলে। তিনি পেশায় সিএনজি চালিত অটোরিকশাচালক ছিলেন। ঘটনার পর পরই ভাতিজা সুমন আহমদ পালিয়ে যায়।
৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার দাসেরবাজার ইউনিয়নের পশ্চিম গুলুয়া গ্রামের মৃত ললিত মোহন দাসের স্ত্রী মায়া রানী দাসকে (৫৫) নিজ গৃহে ঢুকে কাঁচি দিয়ে কুপিয়ে খুন করে ভাসুরপুত্র নিপেশ দাস সুনাই (২৫)। ঘটনার পর পরই এলাকাবাসী অভিযুক্ত নিপেশ দাস সুনাইকে (২৩) আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পরে আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সুনাই। ২৯ সেপ্টেম্বর সকাল পৌনে ১১টার দিকে প্রকাশ্যে দিবালোকে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন প্যানেল চেয়ারম্যান ও আইনজীবী সহকারী আবুল হোসেন আলমকে (৩৮) দা দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে কাজল আহমদ (৪৭) নামে স্থানীয় এক সন্ত্রাসী। নিহত আবুল হোসেন আলম সায়পুর গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে। এই ঘটনায় আবুল হোসেন আলমের বাবা খলিলুর রহমান রাতে কাজল মিয়াকে ১ নম্বর আসামি করে ও আরো চার-পাঁচজনকে জনকে অজ্ঞাতনামা রেখে বড়লেখা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ঘটনার পরদিন শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ভোরে খুনি কাজল ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়দের হাতে আটক হয়। নিহতদের পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি, রাজনৈতিক জনপ্রিয়তায় ঈর্ষাণিত হয়ে পরিকল্পিতভাবে কাজলকে দিয়ে আলমকে খুন করা হয়েছে। এ ঘটনার পর নেপথ্যের ষড়ডন্ত্রকারীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে। ১৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার উপজেলার চান্দগ্রামের নিজ বাড়িতে ঈদের দিবাগত রাতে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত বৃটিশ নাগরিক ফাতির আলীর স্ত্রী প্রবাসী মায়ারুন নেছা (৬৬) ছেলেবধূর পরকীয়ার জেরে খুন হন। একইদিন উপজেলার চান্দেরগুল গ্রামের আব্দুল মতিনের বাড়িতে কোরবানির মাংস বন্টণ নিয়ে প্রতিপক্ষের দায়ের কোপে কুতুব আলী নামের এক ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনার পর পরই এলাকাবাসী হত্যাকারী আব্দুল জলিলকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ সহিদুর রহমান বলেন, উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক কালে যে কয়টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর প্রায় সবগুলোরই রহস্য উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। পৃথক এসব ঘটনার সাথে জড়িত চারজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। এসব ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।