সিলেট সুরমা ডেস্ক : স্ত্রী আর চার শিশু সন্তান নিয়ে এবাদুর রহমানের সংসার। এবাদই ছিলেন পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি। পেশায় দিনমজুর ছিলেন। সারাদিনের উপার্জনেই পরিবারের অন্য যোগাতেন। এবাদ এখন নেই। একদল নরপিশাচ তাকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। এবাদের অনুপস্থিতিতে তাঁর সংসারও এখন স্তব্ধ। এক অসহনীয় দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন এবাদের স্ত্রী নাছিমা বেগম। কিভাবে বাঁচবেন। সন্তানদেরইবা কীভাবে খাওয়াবেন- এমন নানা চিন্তায় চারপাশ ঘিরে অন্ধকার দেখছেন তিনি। ভয়ঙ্কর সেই দিনটির কথাও একটি মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারছেনা এবাদের পরিবার। ‘মানুষ এতো নির্মম হতে পারে? চোখের সামনে জ্যান্ত মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে পারে’? এমনসব ভাবনায় এক দুঃস্বপ্নের প্রহর কাটছে তাদের। সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউনিয়নের ছত্রপুর গ্রামের ঘটনা। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই গ্রামের হেলাল, কামাল, রহিম উদ্দিনদের সথে নিহত এবাদুর রহমান ও তার ভাই করিম, হেলালদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে নিহত এবাদুর রহমানের পরিবারকে বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়ে আসছিলো ঘাতক কামালরা। একাধিক মামলাও চলছে এ নিয়ে। পূর্ব বিরোধের জের ধরেই ২৯ এপ্রিল বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে গ্রামের মসজিদে তারাবির নামাজের পর এবাদুর রহমানের ভাতিজা শিবলুর সাথে কথা কাটাকাটি হয় প্রতিপক্ষ হেলালের। তখন উপস্থিত লোকজনরা বিষয়টি মিমাংসা করে দিলেও পরবর্তীতে হেলাল দলবল নিয়ে এবাদুর রহমানের বসত বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালায়। দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে তারা হামলে পড়ে। এলোপাতাড়ি কুপিয়ে এবাদুর রহমান সহ ৫ জনকে গুরুতর জখম করে ঘাতকরা। নির্মম আঘাতে ঘটনাস্থলেই সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন এবাদ। রক্তাক্ত জখম অবস্থায় দ্রুত তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে রওয়ানা হলে পথেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ঘটনার পরদিন নিহতের স্ত্রী নাছিমা বেগম বাদী হয়ে ঘাতক হেলাল, কামাল ও রহিম উদ্দিন সহ ৯জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরো ৩/৪ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নং- ১৭, ৩০/০৪/২০২০)। অন্যান্য আসামীরা হলেন, একই গ্রামের তবারক আলীর পুত্র এখলাস উদ্দিন (৩৫), তজম্মুল আলীর পুত্র কবির আহমদ (৩৫) ও হানিফ আহমদ (৪৫), মৃত আকবর আলীর পুত্র আতাউর রহমান আতাই (৪৫),মৃত ওয়ারিস আলীর পুত্র রফিকুল ইসলাম (৪৫), এবং কামাল আহমদের পুত্র ইমরান (১৯)। এবাদুর হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার দায়ে ৮ আসামীর মধ্যে এ পর্যন্ত পুলিশ দুজনকে গ্রেফতার করেছে। আটককৃতরা হলো ওই গ্রামের মৃত খলিলুর রহমানের পুত্র কামাল আহমদ (৪৫) ও মৃত তবারক আলী তবাইর পুত্র রহিম উদ্দিন (৫৫)। হত্যাকান্ডের পরদিন বৃহস্পতিবার ভোর রাতে এলাকার জংলা বাজার ও গাছবাড়ী চৌমোহনী এলাকা থেকে রাতভর অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু ঘটনার ১২ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো বাকী আসামীদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। মামলার প্রধান আসামী হেলালসহ অন্যরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তবে পুলিশ বলছে অভিযান অব্যাহত আছে। সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন এবাদের পরিবারের খোঁজ নিচ্ছেন নিয়মিত। খাবার পাঠিয়েছে নিহতের অসহায় পরিবারে। কানাইঘাট সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল করিমও এবাদের বাড়ি গিয়েছেন। এবাদ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে নিহতের স্বজনদের আশ্বস্ত করেছেন তিনি। আর স্থানীয়রা বলছেন, নিহত এবাদ একজন দিনমজুর ছিলেন। খুবই সহজ মানুষ তিনি। চলাফেরা ছিলো একদম নিরীহ প্রকৃতির। এরকম একজন মানুষকে মেরে ফেলল নরপশুরা। তার ৪টি অবুঝ সন্তান রয়েছে। শিশু গুলো এখন নিতান্ত অসহায় হয়ে পড়েছে। যারা তাকে হত্যা করেছে তাদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির দাবী এখন পুরো এলাকার। এব্যাপারে কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ শামসুদ্দোহা পিপিএম বলেন, ঘটনাটি নির্মম। আমরা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত দুজনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করেছি। অন্যান্য আসামীদেরও গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে- বলেন ওসি।