সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে শশুর বাড়ির লোকজন নিজেদের আখের গোছাতে গিয়ে শিশু কন্যার লাশ নিয়েও বাণিজ্যে নামার ঘটনায় গোটা সিলেট বিভাগ জুড়েই এমন প্রশ্নই নানা মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে সেই সাথে বইছে নিন্দার ঝড়। অবশেষে সেই শিশুটির লাশ রবিবার জেলা সদর হাসপাতাল ঘুরে সন্ধা রাতে সববাঁধা অতিক্রম করে দাফন করা হয়েছে। সচেতন মহলের প্রশ্ন একটাই কী অপরাধ ছিল ওই শিশু কন্যার? যে কারনে দাফনে বাঁধা, থানা পুলিশ আর সবশেষে মর্গে কাঁটাছেড়া করতে হল? শনিবার মধ্যরাতে জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের অনলাইন ভার্সন সহ একাধিক অনলাইন নিউজ পোর্টালে “জমি ছাড়া কন্যার লাশ দাফন করতে দেবেনা মা” শিরোনামে এ সংক্রান্ত সংবাদটি প্রকাশ হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন বর্বোরিচিত আচরণে অনেকেই ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সেই সাথে নিহত শিশুটির প্রতি সমবেদনা জানিয়ে অনেকেই ষ্ট্যাটাস পোষ্ট করেছেন। রাতেই পুলিশ বিভাগেও তোলপাড় শুরু হয়। ভোররাত পৌণে চার টার দিকে থানা পুলিশ বানিয়াগাঁও গ্রামে গিয়ে হুমায়ুন কবীরের বাড়ি থেকে শিশুটির লাশ উদ্যার করে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে রবিবার সকালে লাশ মর্গে পাঠায়। সরজমিনে শনিবার রাত থেকে রবিবার পর্র্য্যন্ত খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার শ্রীপুর উওর ইউনিয়নের বানিয়াগাঁও গ্রামের হুমায়ুন কবীরের দু’মাস বয়সী শিশু কন্যা মাহিরার শুক্রবার ভোররাতে স¦াভাবিক মৃত্যু হলে শশুর বাড়ির লোকজনকে জানিয়ে পরদিন শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় নামাজে জানাযা শেষে বাড়ির সামনে কবরে নামানো হয় লাশ। এক পর্যায়ে শশুর কাজীম উদ্দিন তার সহোদর ভাই প্রভাবশালী কাইয়ুম বাঁধা দেন লাশ দাফনে। বাধ্য হয়ে লাশ ফের বাড়িতে উঠিয়ে আনা হয়। হুমায়ুন কবীর শনিবার রাতে কান্নাজড়িত কন্ঠে এ প্রতিবেদককে জানায়, শশুর বাড়ির লোকজন লাশ দাফন করতে হলে স্ত্রীর নামে তার নীজ বাড়ি. ১ কেয়ার জমির দলিল ও আরো ৫ কেয়ার জমি কিনে দিয়ে লাশ দাফন করতে হবে বলে আলটিমেটাম দেয় । অন্যথায় ওই শিশু কন্যাকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে থানা পুলিশে মামলা করারও হুমকি দেয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার বাদজোহর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব খসরুল আলম পরিষদ কার্যালয়ে সুরাহার জন্য বসলেও শশুর বাড়ির লোকজন তাদের কথায় অনঢ় থাকায় শেষ পর্য্যন্ত হুমায়ুনের বাড়িতেই রাতভর পড়ে ছিলো শিশু কন্যার লাশ! উপজেলার কাজীম উদ্দিনের মেয়ে আলপিনার স্বামীর বাড়ির লোকজনের সাথে বণিবনা না হওয়ায় ৪০ দিনের দুধের শিশু কন্যাকে স্বামীর বাড়ি ফেলে রেখে পার্শ্ববর্তী বাপের বাড়ি চলে যায়। নবজাতক ওই শিশু কন্যাকে মা ছাড়াই পরিবারের লোকজন আগলে রেখেছিলেন। কিন্তু বিধিবাম শুক্রবার ভোররাতে ওই শিশু কন্যা স্বাভাবিক ভাবে মৃত্যুবরণ করার পর স্বামীকে লাশ দাফন করতে না দিয়ে বাড়ি, জমি লিখে দেয়ার অপকৌশল ও আলটিমেটাম দেয়া হয়। থানার ওসির দায়িত্বে থাকা এসআই নুরুল ইসলাম রবিবার বেলা দেড়টায় জানান, শিশু কন্যার লাশ পুলিশ হেফাজতে নেয়ার পর সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে সকাল ৮টার দিকে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আপাতত থানায় এ ব্যাপারে একটি সাধারণ ডায়রী করা হয়েছে তবে প্রাথমিক তদন্তে শিশুটিকে হত্যার কোন আলামত পাওয়া যায়নি,জমিজমা লিখে নেয়ার জন্যই লাশ দাফনে হুমায়ুনের শশুর বাড়ির লোকজন হত্যা মামলার ভয় দেখিয়েছে। এদিকে লাশবাহি গাড়ি বেলা সাড়ে ১১টার সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পৌছলে সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. রফিকুল ইসলাম বেলা ২টায় ওই শিশু কন্যার মুত্যু পরবর্তী ময়না তদন্ত করেন। বেলা পৌণে তিনটার দিকে ওই শিশুর পরিবারের লোকজন ও সাথে থাকা পুলিশ সদস্য লাশ লাশবাহি গাড়ী নিয়ে রওয়ানা হলে থানায় আসার পর ফের দূর্গম হাওর পাড়ি দিয়ে সন্ধা সোয়া ৬টায় ট্রলারে করে মাহিরার লাশ পৌছে গ্রামের বাড়িতে। লাশ পৌছার পর আশেপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ ছুঁটে আসেন দরিদ্র হুমায়ুনের বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে। সবশেষে সববাঁধা অতিক্রম করে সন্ধা ৭টায় বাড়ির সামনেই পারিবারীক কবরস্থানে পুর্বে খুঁড়ে রাখা কবরেই তিনদিন পর দাফন করা হল মাহিরার লাশ। হুমায়ুন লাশ দাফনের পর মুঠোফোনে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলে, গণমাধ্যকর্মীরা আমার মত দরিদ্র ব্যাক্তির পাশে দাড়িয়েছে বলেই আমি কোন রকম হয়রানী ছাড়াই থানা পুলিশ ও সদর হাসপাতাল কতৃপক্ষের সহযোগীতায় দ্রুত সময়ের মধ্যে ময়নাতদন্তের পর লাশটি দাফন করতে পেরেছি। আলপিনার পিতা কাজীম উদ্দীনের সাথে সন্ধা সোয়া ৭টায় এ প্রতিবেদকের আলাপকালে তিনি বললেন, আমার মেয়েকে হুমায়নু ঠিকমত ভরণ পোষণ করেনা, মারপিট করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল, বাড়ির মহিলারা লাশ শুক্রবার দেখেছে, তবে আমরা কেউ ওই বাড়িতে যাইনি। মেয়ে আলপিনার সাথে এর সত্যতা জানতে আলাপ করতে চাইলে তিনি বলেন, এখন তার সাথে আলাপ করতে দেয়া সম্ভব না , আমরা এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেব।