• ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

বিশ্বকাপের ডায়রি-(২)

প্রকাশিত ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬

মান্না চৌধুরী:
স্বপ্নের বিশ্বকাপ কাভার করতে ১২ মার্চ রাতে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হই আমরা দু’জন। ঢাকা হযরত শাহজালাল  (রহঃ) বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমানের এক ফ্লাইট কলকাতায় উড়িয়ে নিয়ে গেল। এ যাত্রায় লতিফ ট্রাভেলসের জহিরুল কবির চৌধুরী শিরু ভাইকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। বিমানের টিকিট দিয়ে তিনি আমাদের বিশ্বকাপ যাত্রাটা সহজ করে দেন। আরও একজনের অবদান স্বীকার করতেই হয়। সিলেটের পরিচিত মুখ মিজান আজিজ চৌধুরী সুইট। তার আর্থিক সহায়তাও আমাদের দারুণ কাজে লাগে। আমি আর আহবাব মোস্তফা দুজনেই কলকাতায় নতুন। এর আগে অনেকবার শুনেছি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী অনেক নোংরা আর সেখানে ক্রাইম অনেক বেশি। চুরি, ছিনতাই, বাটপারী নাকি কলকাতার চেনা দৃশ্য। যাক এ কথায় পরে আসছি। প্রায় ৪০ মিনিটের বিমান যাত্রা শেষে কলকাতার নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু বিমানবন্দরে নামলাম। বিমান থেকেই বিমানবন্দরের বাইরের অংশ আমাদের দৃষ্টি কেড়ে নিল। আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে তৈরী কলকাতা এয়ারপোর্ট দেখতে অনেকটা পাখির বাসার মতো। দেখতে দেখতে বেইজিংয়ের বিখ্যাত বার্ডস নেস্ট স্টেডিয়ামের কথা মনে পড়ে গেল। ২০০৮ অলিম্পিক আয়োজনের আগে অবাক করা সেই স্টেডিয়াম গড়ে তুলে চীন। কলকাতার এই বিমানবন্দরের এমন চকচকে ভাব আগে ছিল না। মাত্র বছর তিনেক আগে এটার আকারÑআয়তন বাড়ানো ও নতুন রূপ দেওয়ার কাজটি হয়েছে। এর স্থাপত্য সৌন্দর্য ও ভেতরের সাজসজ্জা চোখে পড়ার মতো। বিশাল বিমানবন্দরের প্রতিটা অংশ ছবির মতো সাজানো। আছে আধুনিকতার ছাপ। স্থাপত্য কাঠামোটি এমন, যেখানে বাইরের আলোকে ভালোভাবে কাজে লাগানো হয়েছে, সেদিক থেকে পরিবেশবান্ধবও বলা যায়। ছাদের সজ্জায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হস্তলিপির ব্যবহার টার্মিনালটিকে এক অপূর্ব রূপ দিয়েছে। এখন ভারতের ১০টি সেরা বিমানবন্দরের একটি হচ্ছে এই নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু বিমানবন্দর। কলকাতার এই বিমানবন্দরে নেমে মনে হলো এর সাজসজ্জা ভিনদেশের কোন অতিথিকে স্বাগত জানানোর এক নান্দনিক ও জমকালো আয়োজন বটে!  দেখতে দেখতে আমাদের মুগ্ধতা ছাড়িয়ে যায় আর মনে পড়ে কিছুক্ষন আগে ছেড়ে আসা আমাদের ঢাকা হযরত শাহজালাল  (রহঃ) বিমানবন্দরের কথা। বিশদ বিবরণ আর তুলনার বিচার, বিশ্লেষনে না গিয়ে কলকাতা আর ঢাকা বিমানবন্দরের মাঝখানে শুধু দুটো শব্দই যোগ করে নিন আকাশ-পাতাল! যাই হোক আমরা তো আমরাতেই আছি। এসব নিয়ে মাথা ঘামানো আমাদের কাজ নয়। দেশের কর্তাব্যক্তিরা আছেন, তারাই এসব নিয়ে ভাববেন, তাহলে কাজের কাজ কিছু একটা হতে পারে। ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে বাইরে গিয়ে দেখি সারি সারি ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের ঢাকার মতো নয়, অবশ্যই সেগুলো সভ্যতার সবটুকু নিয়ম মেনেই যাত্রীর অপেক্ষায়। কাউন্টারে ট্যাক্সি ভাড়া মিটিয়ে আমরা রওনা দিলাম কলকাতা নিউমার্কেটের দিকে। ইডেন গার্ডেন নাকি নিউমার্কেটের অনেকটা কাছাকাছি, তাই আমাদের সেদিকেই ছুটা। একটু খোঁজাখুঁজির পর হোটেল জাপন ইন্টারন্যাশনালই হলো কলকাতার ঠিকানা। কয়েক ঘন্টার বিশ্রাম শেষে আমাদের গন্তব্য এবার ইডেন গার্ডেন। অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড সংগ্রহ করতেই ইডেন যাত্রা। স্বপ্নের ইডেন গার্ডেনের সামনে গিয়েই পড়লাম নিরাপত্তা কড়াকড়িতে। ভেতরে চলছে অস্ট্রেলিয়া-ওয়েষ্ট ইন্ডজ প্রস্তুতি ম্যাচ, বাইরে তাই নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ইডেন। সাংবাদিক পরিচয়, বিশ্বকাপ কাভার করতে আসা, আইসিসির অনুমতিপত্র দেখিয়েও কাজ হলো না। তাদের একটাই কথা, খেলা শেষ হওয়ার পরেই যাওয়া যাবে ভেতরে। বাধ্য হয়ে আমরা ইডেনের বাইরে বিশাল খোলা জায়গায় কাটালাম অলস অনেক সময়। ম্যাচ শেষ হলে মুক্তি মিলে। আমাদের যেতে দেয়া হয় ইডেনের ভিতরে। বেঙ্গল ক্রিকেট এসোসিয়েশনের গেট দিয়ে ঢুকে খুঁজে পেলাম মিডিয়া রুম। সেখানে আইসিসির মিডিয়া টিমের কয়েক ভিনদেশী তরুণ বসে আছেন বিশ্বকাপ কাভার করতে আসা সাংবাদিকদের সেবা দিতে। পরিচয় দিতেই আমাদের গভীর আন্তরিকতায় বরণ করলেন তারা। ঘুচে গেল বাইরে কয়েক ঘন্টা বসে থাকার যন্ত্রনা। টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড হাতে পেয়ে সিলেটের দুই তরুণের চোখেমুখে তখন রাজ্য জয়ের হাসি। সেই হাসি ধরে রেখেই রাত ১১টার দিকে হোটেলে ফেরা।