• ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ছাতক দোয়ারাবাজারের নদী ভাঙ্গন সমস্যা নিয়ে পানিমন্ত্রীর দারস্থ

sylhetsurma.com
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৭

আশিস রহমানঃ 
সুনামগঞ্জের সুরমা নদী বিধৌত শিল্প নগরী ছাতক এবং দোয়ারাবাজার উপজেলা অব্যাহত নদী ভাঙ্গনের কবলে নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। এনিয়ে ছাতক, দোয়ারাবাজারের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং এলাকাবাসী দীর্ঘ দিন যাবৎ স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন কর্মসূচি সহ একাধিক সভা সমাবেশ করলেও আজোবধি সুরমা নদী ভাঙ্গন রোধে কোনো ধরনের সুরাহা মিলেনি। সর্বশেষ গত ২৯ জানুয়ারী রবিবার উপজেলা পরিষদের সামনে দোয়ারাবাজার উপজেলার কয়েক শতাধিক মুক্তিযোদ্ধারা নদী ভাঙন প্রতিরোধের দাবিতে মানববন্ধন করেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার না হওয়ায় উপরন্তু পাউবো,র উদাসীনতা প্রাধান্য পাচ্ছে মনে করছেন স্থানীয়রা। সুরমা নদীর ভাঙ্গন এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত কয়েক মাসের ভাঙ্গনের কবলে রয়েছে ছাতক উপজেলার মুক্তিরগাঁও-ছাতক সড়ক, মুক্তিরগাঁও, আটগ্রামসহ পার্শ্ববর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পারকুল, টুকেরগাঁও, শিবপুর, পুটামারা, দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ কার্যালয়সহ একাধিক প্রশাসনিক দপ্তর। ইতোমধ্যে দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরের মাঝেরগাঁও, মুরাদপুর গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়িঘর, ১টি মসজিদ ও একটি দাখিল মাদরাসা, সুরমা ইউনিয়নের নূরপুর জামে মসজিদ, নূরপুর বাজার, আলীপুর বাজারসহ বেশ কয়েকটি দোকানপাট নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নদীভাঙ্গনের ফলে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কার্যালয় ও পরিষদ ভবনটি। ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় সুরমা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গন এখন মারাত্মক আকার ধারণ করায় রাস্তা-ঘাট, ফসলী জমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ সুরমা নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন হাজারো পরিবার। এদিকে ছাতক দোয়ারার সুরমা নদী ভাঙ্গন সমস্যার প্রতিকারের দাবিতে পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলামের সাথে একাধিকবার ব্যক্তিগতভাবে বৈঠক করেছে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং দোয়ারাবাজার উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। সর্বশেষ গত ১২ফেব্রুয়ারি পানি সম্পদ মন্ত্রী বরাবরে ভাঙ্গন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্যে একটি লিখিত আবেদন করা হয়েছে। দোয়ারাবাজার উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও ছাতকস্থ জাবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম এবং ছাতকের কালারুকা ইউনিয়নের মুক্তিরগাঁও হরিশপুরের সাবেক মেম্বার নূরুল হকের দেয়া আবেদনকে পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহা-পরিচালক বরাবরে প্রেরণ করেছেন। আবেদনে বলা হয়, ছাতকের কালারুকা ইউপির মক্তিরগাঁও, আটগ্রাম, পৌরসভার বৌলা, পার্শ্ববর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পারকুল, টুকেরগাঁও, শিবপুর, পুটামারা, দোয়ারাবাজার উপজেলার সদর ইউনিয়নের নইনগাঁও, মাঝেরগাঁও, মাছিমপুর, মুরাদপুর, মাষ্টারপাড়া, মান্নার গাও ইউনিয়নের আমবাড়ি বাজার, কাটাখালী বাজার এবং সুরমা ইউনিয়নের সোনাপুর, নূরপুরসহ সুরমা নদীর তীরবর্তী বসতবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, স্কুল, মাদরাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। ছাতক দোয়ারার একমাত্র সড়কটি নদীগর্ভে বিলীন হওয়া ছাড়াও ছাতকের মুক্তিরগাও -আটগ্রাম এসড়কটি সুরমার ভয়াবহ ভাঙ্গনে বিলীন হওয়ায় এ সড়কে প্রায় ৬মাস থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। নদী ভাঙ্গনের হুমকির মুখে দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক একাধিক দফতর। উল্লেখ, এব্যাপারে ২০১৬সালের ২১নভেম্বর ও ২০১৩সলের ২১অক্টোবর সিলেট বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে নদী ভাঙ্গনরোধের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্যে পৃথক দু’টি আবেদন করা হয়। ২০১৩সালের আবেদন করেন ছাতকের হরিশপুর গ্রামের মানিক মিয়া ও বৌলা গ্রামের জয়নাল আবেদীন রফিক। পরবর্তীতে সুনামগ জেলা প্রশাসকের (এসএ) শাখা ছাতক উপজেলা ভূমি অফিসের মাধ্যমে একটি তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে এর সত্যতার ব্যাপারে নিশ্চিত হন। প্রতিবেদনে, সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রাজস্ব শাখার স্মারক নং০৫.৬০.৯০০০.০৮.১২.১২১.১৩-৩১৬২(২), তাং ১৪.১১.২০১৩ইং ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ের স্মারক নং-১৮৯৮, তাং ১৭.১১.২০১৩ইং মূলে মুক্তিরগাঁও ও বৌলা এলাকায় সুরমা নদীর ভাঙ্গনের ব্যাপারে বলা হয়, ছাতকের ২১৯নং জেএলস্থিত পূর্ব কামারগাঁও মৗজা ও ২২৫নং জেএলস্থিত নিজগাঁও মৌজার নদীর তীরবর্তী ফসলী জমি ভেঙ্গে ধীরে ধীরে নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। এক্ষেত্রে নদীর ভাঙ্গন রোধ করা একান্ত আবশ্যক। এছাড়া টুকেরগাঁও গ্রামের চরজাগা অংশ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার আওতাধীন ভূমি। যাহা খনন করা হলে এলাকাবাসীর মতে বিভিন্ন প্রতিষ্টান ও ফসলী জমি রক্ষা পাবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। পরে ২০১৪সালের ১৬জুন জেলা প্রশাসক মহোদয় এ প্রতিবেদনটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্যে সুনামগঞ্জ পাউবো,র নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে প্রেরণ করলে আজোবধি এর কোন অগ্রগতি হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে নদীভাঙ্গন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও পরিকল্পিত কোনো উদ্যোগ এবং মেরামত না-করায় ভাঙ্গনকবলিত এলাকায় এখন আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে। দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ না-নিলে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। জানা যায়, সম্প্রতি পানি সম্পদ মন্ত্রী বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহা-পরিচালক বরাবরে প্রেরণ করেছেন। মন্ত্রী মহোদয়ের দেয়া নির্দেশ যেন কার্যত বাস্তবায়িত হয় এ প্রত্যাশাই করছেন ছাতক দোয়ারাবাজারবাসী। এব্যাপারে ছাতকস্থ জাবা মেডিকেলের চেয়ারম্যান, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও দোয়ারাবাজার উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, ছাতক দোয়ারার নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকার জনসাধারণের জনস্বার্থে আমি ব্যক্তিগত ভাবে পানিসম্পদ মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে একাধিক বার বৈঠক করেছি। তিনি সমস্যা সমাধানে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। আমি আশাবাদী ছাতক দোয়ারাবাজারের নদী ভাঙ্গন সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে। এ বিষয়ে মোবাইলে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কল রিসিভ না করায় দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ইদ্রিস আলী বীর প্রতীকের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার তারেক মোঃ জাকারিয়া জানান, নদী ভাঙ্গন সমস্যার ব্যাপারে পাউবোর সাথে আমার যোগাযোগ হয়নি। তবে জানতে পেরেছি বেশি ভাঙ্গন কবলিত জায়গায় সাময়িকভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। দোয়ারাবাজার নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করে নদী ভাঙ্গন রোধে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান। ছাতকের কালারুকা ইউনিয়নের মুক্তির গাও হরিশপুরের সাবেক মেম্বার নুরুল ইসলাম জানান, নদী ভাঙ্গনে কবলে আমরা ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হতে বসেছি। এব্যাপারে পাউবো,র দায়সারা কর্মকান্ডে আমরা হতাশ।