• ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

থেমে নেই রাক্ষুসী কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গন : হিংস্র থাবায় ক্ষতিগ্রস্ত ৯টি উপজেলা

sylhetsurma.com
প্রকাশিত মার্চ ২১, ২০১৭

হবিগঞ্জ সংবাদদাতা :
হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলা সহ ৩টি জেলার কয়েকটি উপজেলা জুড়ে কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনে বসতবাড়ি, বনজসম্পদ, চাষাবাদ ভূমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার ইত্যাদি বিলীন হয়ে গেছে। তারপরও কুশিয়ারা নদীর ধ্বংস লীলা রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। নদী ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারিয়ে অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। নদী সভ্যতার প্রতীক হলেও কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী এলাকাবাসীর জন্য ধ্বংস ও ভয়ানক অভিশাপের প্রতীকরূপে বিরাজ করছে। কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে শুষ্ক মৌসুমে কুশিয়ারা নদীর হ্রাস, ঘরবাড়ি, বনজ সম্পদ, চাষাবাদযোগ্য ভূমি ও বসতবাড়ি ভাঙ্গন সমস্যা, বন্যার তান্ডবলীলায় ফসলহানি, নদীতে নৌযান চলাচল বিপর্যস্ত, মৎস্য সম্পদের অভাব, কুশিয়ারার তীর সংরক্ষণে উদাসীনতা ও স্থানীয় জীবনযাত্রার নিমান সেই ব্রিটিশ শাসন থেকে অব্যাহত আছে। কুশিয়ারা নদীর হিংস্র থাবায় ক্ষতিগ্রস্ত ও গৃহহীন হয়েছেন হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জের দীঘলবাক, আহমদপুর, কুমারকাদা, গালিমপুর, মাধবপুর, ফাদুলা, মথুরাপুর,বানিয়াচং,সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার অটঘর, নোয়াগাঁও, রানীগঞ্জ, সিলেট জেলার বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, জকিগঞ্জ উপজেলার এক বিরাট জনগোষ্ঠী। দেশের বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা রোধ কল্পে সামান্যতম হলেও সরকারী নানা পদক্ষেপ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও সাহায্য সহযোগিতা করা হলেও হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউপি’র জনগণকে কোন সরকারী সাহায্য, পুনর্বাসন করা হয়নি, এমনকি যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই ভাঙ্গনের তীব্রতা রোধে বাস্তব সম্মত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যার ফলে উল্লেখিত জনপদের বিভিন্ন পেশার লোকজন চাষাবাদযোগ্য জমি, বাসগৃহ, বনজসম্পদ বারবার হারানোর বেদনায় এলাকার বাতাসে দুঃখ ও হতাশার করুণ ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। উল্লেখিত উপজেলা গুলোতে নদী ভাঙ্গনের ফলে মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা চরমভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে। যার ফলে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে দীঘলবাক ইউনিয়ন সহ সুনামগঞ্জ, সিলেট জেলার তীরবর্তী এলাকায় বেকারত্ব, অশিক্ষা, দারিদ্র্যতা আশংকাজনক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নবীগঞ্জের দীঘলবাক ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদীর ধ্বংসলীলা বন্ধ কল্পে বিশিষ্ট সমাজসেবী, শিক্ষানুরাগী ও দীঘলবাক উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ্ আশ্রব আলী পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে অব্যাহত এই ভাঙ্গন রোধের জন্য পদক্ষেপ নিতে আবেদন পত্র পেশ করলে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন শাখা-৫ এর স্মারক পত্র নং- উঃ৫/বিবিধ-০৭/২০০/২০৭ (তারিখ-১৮-০৬-২০০০) মোতাবেক জরুরী ভিত্তিতে চেয়ারম্যান বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (ঢাকা) বরাবরে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিলে তা আলোর মুখ দেখেনি। সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম শাহ্ এ.এস.এম. কিবরিয়া এমপি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৎকালীন মহাপরিচালক মোখলেছুজ্জামান দীঘলবাক ইউপি ও তৎপার্শ্ববর্তী কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনকৃত এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এর পরেও ভাঙ্গন রোধের কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধান প্রকৌশলী, পানি উন্নয়ন বোর্ড তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশল (মৌলভীবাজার)কে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন যা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (মৌলভীবাজার) এবং নবীগঞ্জের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে দীঘলবাক এলাকার ভাঙ্গন রোধের জন্য আবেদন পত্র পেশ করলে তিনি ০৬/০৭/২০০০ ইং তারিখে কুশিয়ারা নদীর ধ্বংসলীলা ও প্রমত্ত্বতা সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে স্মারক নং- উনিও/নদী/গো:/বিবিধ ৬৫/৯৮-২০০০ইং মোতাবেক জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ডিসি হবিগঞ্জ বরাবরে সুপারিশসহ প্রতিবেদন পেশ করেন। বিষয়ে দীঘলবাক ইউনিয়নের স্থানীয় লোকজন জানান, কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গন রোধকল্পে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় ইউএনও থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারের সময় দীঘলবাকবাসী স্মারক লিপি, আবেদন পত্র পেশ ও মন্ত্রী, এমপিদের সাথে যোগাযোগ করেও এই ঐতিহ্যবাহী এলাকাকে রক্ষা করার জন্য বাস্তবমুখী কোন পদক্ষেপ গৃহীত না হওয়া দুঃখজনক। এশিয়ার অন্যতম গ্যাসকূপ অধ্যুষিত ঐতিহ্যবাহী দীঘলবাক এলাকা সহ ৩টি জেলার প্রায় ৯টি উপজেলাকে কুশিয়ারা নদীর কালো থাবা ও ধ্বংসলীলা থেকে জরুরী ভিত্তিতে রক্ষার জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগী, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জনসাধারণ।