• ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

আত্মঘাতী বিস্ফোরণে পুরুষ জঙ্গি নিহত : নারী জঙ্গি আগুনে পুড়ে মারা গেছে

sylhetsurma.com
প্রকাশিত মার্চ ২৮, ২০১৭

সিলেট সুরমা ডেস্ক : সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়িতে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোদের অভিযানে নিহত ৪ জঙ্গির মধ্যে দুইজনের সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত দু’জনের মধ্যে পুরুষ জঙ্গিটি আত্মঘাতী বিস্ফোরণে এবং নারী জঙ্গি আগুনে পুড়ে মারা গেছে।

মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) পুরুষ লাশটির সুরতহাল করেন মোগলাবাজার থানার এসআই মো. সোহেল রানা এবং নারীর লাশের সুরতহাল করেন একই থানার এসআই সুজন দত্ত।

সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহত ওই পুরুষের দৈর্ঘ্য আনুমানিক ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি। তার গোলাকার মুখমণ্ডল ছিল আগুনে পোড়া। মাথায় সামান্য চুল ও মুখে কিছু দাড়ি ছিল। তার পরনে ছিল কালো জামা ও দুই পায়ে ছিল কালো জুতা। লাশের বুক থেকে তলপেট পর্যন্ত পুরোটাই ছিল ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন। বাঁ পায়ের মাংস গোড়ালির টাকনু পর্যন্ত কাটা ছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “অজ্ঞাতনামা লাশটি একজন জঙ্গি সন্ত্রাসীর লাশ বলিয়া প্রতিয়মান হয়। উক্ত জঙ্গি সন্ত্রাসী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য নিজে নিজে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটাইয়া মারা গিয়াছে বলিয়া অনুমান করা যাইতেছে।”

অন্যদিকে নিহত নারী সম্পর্কে সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই নারীর দৈর্ঘ্য আনুমানিক চার ফুট। তার মুখমণ্ডল ছিল পোড়া, মাথায় সামান্য চুল দেখা গেছে। দুই হাত ও দুই পায়ের গিড়া পর্যন্ত সম্পূর্ণ দেহ পোড়া ছিল। একটি পায়ে সামান্য মাংস আছে এবং পায়ের তালুর নিচে আনুমানিক দুই ইঞ্চি কাটা। বুক ও পা দেখে বোঝা গেছে লাশটি একজন নারীর।

প্রতিবেদনে বলা হয়, “লাশটি একজন জঙ্গি সন্ত্রাসীর স্ত্রীর এবং গোপনীয়ভাবে জানা যায়, ওই নারী নিজেও একজন জঙ্গি সন্ত্রাসী দলের সদস্য। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য নিজের গায়ে নিজে আগুন লাগাইয়া মৃত্যুবরণ করিয়াছে বলিয়া অনুমান হয়।”

এদিকে, মঙ্গলবার অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে দুই লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শামসুল ইসলামের নেতৃত্বে চার সদস্যের চিকিৎসক দল ময়না তদন্ত সম্পন্ন করেন।

লাশ দুটি হিমাগারে রাখা হবে। পরিচয় নিশ্চিত হলে সেগুলো হস্তান্তর করা হবে। এই দু’জন কাওসার আহমদ ও মর্জিনা বেগম হতে পারে বলে ধারণা পুলিশের। তবে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হতে আঙ্গুলের ছাপ ও ডিএনএ’র নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান কতোয়ালি থানার ওসি সুহেল আহমদ।

অন্য দু’টি লাশ এখনো ঘটনাস্থলে আছে। সেগুলো আজ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে বলে জানা গেছে। আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সিলেটের জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্টে প্রেস ব্রিফিং করবে সেনাবাহিনী। সেখানে আজ ৫ দিনব্যাপী এ জঙ্গিবিরোধী অভিযান সমাপ্তির ঘোষণা দেয়া হতে পারে।

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকায় অবস্থিত আতিয়া মহল বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে ঘিরে রেখেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। শুক্রবার ঢাকা থেকে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াট সিলেটে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে ঘটনাস্থল ঘেরাও করে।

এরপর শনিবার সকাল থেকে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো দল ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ নামে অভিযান শুরু করে। এ অভিযানের মধ্যেই শনিবার সন্ধ্যায় সিলেটে পুলিশ চেকপোস্টে দুই দফা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৬ জন নিহত এবং ৪৪ জন আহত হন।

সোমবার তৃতীয় দফা সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনী জানায়, অভিযানে এ পর্যন্ত চার জঙ্গি নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে আছে তিন পুরুষ ও এক নারী।