• ১৫ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

ভারতীয় গণমাধ্যমে গ্রেটার বাংলাদেশ ম্যাপ নিয়ে ভুয়া সংবাদ প্রচার সনাক্ত করেছে বাংলাফ্যাক্ট

sylhetsurma.com
প্রকাশিত মে ২০, ২০২৫
ভারতীয় গণমাধ্যমে গ্রেটার বাংলাদেশ ম্যাপ নিয়ে ভুয়া সংবাদ প্রচার সনাক্ত করেছে বাংলাফ্যাক্ট

Manual2 Ad Code

ভারতীয় গণমাধ্যমে গ্রেটার বাংলাদেশ এর ম্যাপ নিয়ে ভুয়া সংবাদ প্রচার সনাক্ত করেছে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) এর ফ্যাক্ট চেক ও মিডিয়া রিসার্চ টিম বাংলাফ্যাক্ট।

Manual7 Ad Code

বাংলাফ্যাক্টের অনুসন্ধানে সনাক্ত হয়েছে যে, তুরস্ক ভিত্তিক এনজিও বাংলাদেশে ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’ এর ম্যাপ প্রচার করছে বলে মিথ্যা তথ্য প্রচার ভারতীয় গণমাধ্যমে। বাংলাফ্যাক্ট অনুসন্ধান টিম জানায়, ‘ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর ভুয়া সংবাদ পরিবেশন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে ধারণা করা যায়।’

বাংলাফ্যাক্ট অনুসন্ধান টিম জানায়, তুরস্ক ভিত্তিক একটি এনজিও বাংলাদেশে ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’র ম্যাপ প্রচার করছে বলে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম। গত ১৭ মে ভারতীয় গণমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস ‘বাংলাদেশে তুরস্ক-সমর্থিত গোষ্ঠী ভারতের ভূখণ্ডসহ ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’ মানচিত্র প্রচার করছে’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ করে। পরবর্তীতে ইকোনমিক টাইমসের বরাত দিয়ে দেশটির আরো অন্তত দশটি গণমাধ্যম একই ধরনের সংবাদ পরিবেশন করে। এ সংক্রান্ত সংবাদে দাবি করা হয়েছে, তুরস্ক ভারতের প্রতিবেশী বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমানভাবে সক্রিয় হয়ে উঠছে, যেখানে তারা পাকিস্তানের সঙ্গে যে সম্পৃক্ততার মডেল প্রয়োগ করেছে, সেটি পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা করছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তুরস্কের শাসক দল একেপি ঘনিষ্ঠ এনজিওগুলো বাংলাদেশে দিন দিন আরও সক্রিয় হয়ে উঠছে।

Manual5 Ad Code

বাংলাফ্যাক্ট জানায়, ‘ইকোনমিক টাইমস (ইটি) লিখেছে, ঢাকায় ‘সালতানাত-ই-বাংলা’ নামে একটি কথিত তুরস্ক ভিত্তিক এনজিও-সমর্থিত ইসলামপন্থী সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছে। এই সংগঠন “গ্রেটার বাংলাদেশ”-এর একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে যেখানে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য, ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা এবং সম্পূর্ণ উত্তর-পূর্বাঞ্চল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মানচিত্রটি ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে দেখা গেছে। ইকোনমিক টাইমস পুরো সংবাদে কোন ধরণের প্রমাণ উপস্থাপন করেনি। বরং সূত্র হিসেবে উচ্চপদস্থ সূত্র, তুরস্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ- ইত্যাদি উল্লেখ করেছে।’
বাংলাফ্যাক্ট অনুসন্ধান করে দেখেছে, ‘সালতানাত-ই-বাংলা’ নামে কোনো সংগঠনের অস্তিত্ব বা কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখা যায়নি। তবে গত পহেলা বৈশাখে (১৪ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে ‘ভালো কাজের হালখাতা’ নামে এক প্রদর্শনীর আয়োজন করে সেন্টার ফর বেঙ্গল স্টাডিজ (সিবিএস) নামের একটি সংগঠন। সেখানে বাংলা সালতানাতের মানচিত্র প্রদর্শন করা হয়, এবং ঐতিহাসিক মানচিত্র হিসেবেই তা প্রদর্শন করা হয়, তথাকথিত গ্রেটার বাংলাদেশ-এর মানচিত্র হিসেবে নয়। সিবিএস কোনো এনজিও নয় এবং তুরস্ক ভিত্তিক সংগঠনও নয় বলে তারা বাংলাফ্যাক্টকে নিশ্চিত করেছেন।

বাংলাফ্যাক্ট অনুসন্ধান টিম জানায়, ভারতীয় গণমাধ্যমে সংবাদের বিষয়েও একটি বিবৃতি দিয়েছে সিবিএস। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি কিছু ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম বাংলা সালতানাতের মানচিত্রের বিষয়টি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব প্রতিবেদনে যে-সব অভিযোগ বা বক্তব্য উত্থাপন করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর। সিবিএস একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সমাজ ও সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে কোনো দেশি-বিদেশি সংগঠন বা গোষ্ঠীর আর্থিক, রাজনৈতিক কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক সংশ্লিষ্টতা নেই। সেন্টার ফর বেঙ্গল স্টাডিজ (সিবিএস) ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর এই মিথ্যা প্রচারণার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।’

Manual6 Ad Code

বাংলাফ্যাক্ট অনুসন্ধান টিম জানায়, ‘মূলত একটি ভারতীয় ষড়যন্ত্রতত্ত্ব, যা ভারতের কিছু কট্টর গোষ্ঠী বাংলাদেশ বিরোধী প্রোপাগান্ডার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। বাংলাদেশের কোনো সরকার, রাজনৈতিক দল বা রাষ্ট্রীয় নীতিমালায় এই ধারণার প্রতি কখনো কোনো সমর্থন দেখা যায়নি। বরং ষড়যন্ত্রতত্ত্বটি ভারতীয় অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রয়োজনে সময়-সময় সামনে আনতে দেখা গেছে। বর্তমানে যখন বাংলাদেশে ভারত থেকে বেআইনি পুশ-ইন ইস্যু আলোচনায়, তখন প্রায় দেড় মাস আগে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে আয়োজিত একটি প্রদর্শনীকে ইসলামিস্ট কার্যক্রম ও তথাকথিত গ্রেটার বাংলাদেশের ধারণার সাথে জুড়ে দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর ভুয়া সংবাদ পরিবেশন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে ধারণা করা যায়।’

বাংলাদেশে চলমান গুজব এবং ভুয়া খবর, অপতথ্য প্রতিরোধ এবং জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করছে বাংলাফ্যাক্ট।

গত বছর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যম এবং ভারত থেকে পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভুয়া তথ্য প্রচারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে ফ্যাক্টচেক।

Manual3 Ad Code

শুধু এপ্রিল মাসে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ২৯৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে বাংলাদেশের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান।