• ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

কোম্পানীগঞ্জে টিলা ধ্বসে মৃতের সংখ্যা ৬

sylhetsurma.com
প্রকাশিত জানুয়ারি ২৩, ২০১৭

স্টাফ রিপোর্টার
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শাহ আরেফিন টিলা ধ্বসে মৃতের সংখ্যা নিয়ে ধু¤্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সূত্রগুলো থেকে ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
৬ জনের মারা যাওয়ার কথা শুনেছেন জানিয়ে সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার (গণমাধ্যম) সুজ্ঞান চাকমা বলেন, তবে আমরা এখন পর্যন্ত দু’জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হতে পেরেছি। তাদের একজনের নাম আল হাদী, অপরজনের নাম কাদির।
বিকেলে তিনি বলেন, দু’জনের নাম জানতে পারলেও একটি মরদেহও এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি। ওই এলাকাটা খুব দূর্গম। আর ঘটনা ঘটেছে  সোমবার ভোরে। পুলিশ যাওয়ার আগেই মরদেহ সরিয়ে ফেলেছে।
শাহ আরেফিন টিলাটির অবস্থান উপজেলার পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নে। এই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল ৬ জন মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। ৬ জনের মরদেহ পাননি জানিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের সাথে কথা বলে আমি ৬ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। এ দুর্ঘটনায় আরো কয়েকজন আহত হতে পারে বলে জানান তিনি।
টিলা ধসে হতাহতের সংবাদ পেয়ে  সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী আব্দুল হাছিব।  বিকেলে তিনি ফিরে এসে জানান, ৬ জনের মৃত্যুর খবর স্থানীয়দের কাছে তিনি শুনেছেন। তবে তিনজনের মরদেহ তিনি দেখে এসেছেন বলে জানিয়েছেন আব্দুল হাছিব।
৬ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়ের গত নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল আহমদও।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,  সোমবার ভোরে শাহ আরেফিনের টিলার অর্ন্তগত মটিয়ার টিলা কেটে পাথর উত্তোলনকালে ওই টিলা ধসে পড়ে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহতরা সকলেই পাথর শ্রমিক। আঞ্জু মিয়া নামের স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শ্রমিক দিয়ে টিলা কেটে পাথর উত্তোলন করাচ্ছিলেন বলে জানা গেছে।
নিহতের সংখ্যার মতো তাদের নাম ঠিকানা নিয়েও রয়েছে বিভ্রান্তি। নিহতদের মধ্যে ৩ জনের বাড়ি নেত্রকোনা জেলায় বলে ঘটনাস্থল থেকে ঘুরে এসে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সহকারী আব্দুল হাছিব। নিহতদের দুইজনের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র।
এ ব্যাপারে ভাটিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শাহাজাহান কাজীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের ইউনিয়নের অনেক লোক কোম্পানীগঞ্জে পাথর উত্তোলনের কাজ করে।  সোমবার দুর্ঘটনায় তাদের মধ্যে দু’জন মারা গেছেন বলে আমিও শুনেছি। তবে এখনো আমি নিশ্চিত হতে পারিনি।
কোম্পানীগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বায়েছ আলম বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে। তারা এখনো ফিরে আসেনি। আসলে নিশ্চিতভাবে নিহতের সংখ্যা জানাতে পারবো।
পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিনের অভিযোগ, টিলা থেকে পাথর উত্তোলন করতে গত ছয় মাসে অন্তত আটবার টিলা ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনা ধামাচাপা দেন পাথর উত্তোলনে নিয়োজিত প্রভাবশালী পাথর ব্যবসায়ীরা। সরকারি খাস খতিয়ানের ১৩৭ দশমিক ৫০ একর জায়গায় শাহ আরেফিন টিলা। লালচে, বাদামি ও আঠালো মাটির এ টিলার নিচে রয়েছে বড় বড় পাথর খন্ড। এসব পাথর উত্তোলন করতেই চলে টিলা কাটা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) একটি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শাহ আরেফিন টিলার কিছু জমি খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে বন্দোবস্ত নিয়ে প্রভাবশালী পাথর ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষ ২০০৯ সাল থেকে টিলা কেটে পাথর উত্তোলন করছে। টিলা কাটা আইনত নিষিদ্ধ থাকায় বেলা পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি কমিটির মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে। এ কমিটি ৯৬ দশমিক ২৫ একর জায়গার ৭০ ভাগ টিলা কেটে ৬২ লাখ ৮৮ হাজার পাথর লুটপাটের তথ্য সংগ্রহ করেছিল। গত বছরের শেষ দিকে খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয় সিলেটের আরো কয়েকটি কোয়ারির সাথে শাহ আরেফিন টিলা থেকেও পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তবু বন্ধ হয়নি উত্তোলন।