• ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সিলেটে দুদুক কর্মকর্তাদের উপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ কাল

sylhetsurma.com
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৭

স্টাফ রিপোর্টার
সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান চালানোর সময় ঘুষখোর কর্মকর্তা গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে দুদক অফিসার ও সদস্যদের উপর ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ জানিয়ে রোববার দুর্নীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসুচীর ঘোষনা দিয়েছে। শনিবার এক সভায় এ কর্মসুচী ঘোষনা করা হয়।
সভায় বলা হয়,বাংলাদেশে এই প্রথম দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে দুদক কর্মকর্তা ও সদস্যরা লাঞ্চিত হয়েছেন, যা খুবই নিন্দনীয় ও মর্মান্তিক। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কক্ষে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। হামলায় দুদক সিলেট অঞ্চলের উপ-সহকারী পরিচালক ওয়াহিদ মঞ্জুর সোহাগ, আরেক কর্মকর্তা রনজিত কর্মকার, কনষ্টেবল মেছবাহ উদ্দিন চৌধুরী ও গাড়ী চালক বিপ্লব আহত হয়েছেন। সভায় বলা হয়, গত ১১ ডিসেম্বর ২০১৬ সিলেট জেলা প্রশাসক সহ ৩ কর্মকর্তার বিষয়-সম্পত্তির হিসাব দেয়ার জন্য দুদক সিলেট অঞ্চল থেকে নোটিশ দেয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে দুর্নীতিবাজরা। সিলেট জেলা প্রশাসনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে গৃহীত কার্যক্রমে দুদকের সাথে দেশবাসীও লাঞ্চিত হয়েছে। সভায় আজ ১২ ফেব্রুয়ারী রোববার দুপুর ১২টায় সিলেট রেজিষ্ট্রি মাঠে দুদক সিলেট অঞ্চল কর্মকর্তাদের উপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার, ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টদের চাকুরীচ্যুত করার দাবীতে এক গণজমায়েত ও বিক্ষোভ মিছিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এদিকে, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক) সিলেট এর সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) জুবায়ের সিদ্দিকী, সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মুজিবুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক রোটারিয়ান বেলাল আহমদ এক বিবৃতিতে বলেন, গত ৯ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের বাণিজ্য শাখায় এক কর্মচারীকে ঘুষ গ্রহণকালে ধরতে গিয়ে দুদকের উপ-পরিচালকসহ একটি দলকে ৩ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখা এবং দুদক কর্তৃক আটককৃত কর্মচারীকে ছাড়িয়ে নিতে জেলা প্রশাসনের কর্মচারীগণ দুদকের দু’জন উপ-পরিচালক, একজন কনস্টেবল ও গাড়ী চালককে মারধর করে টাকাসহ আসামীকে ছিনিয়ে নেয়ায় নেতৃবৃন্দ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে আরো বলেন, বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করে এগিয়ে নিতে সরকার নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের এ মহৎ উদ্যোগকে বাধাগ্রস্থ করতে যে লজ্জাজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে তার জন্য সিলেটের জেলা প্রশাসনের ইমেজকে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। জাতীয় স্বার্থে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক) এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করছে। পাশাপাশি জাতীয় স্বার্থে জনগণকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য আহবান জানান।
অপরদিকে,দুদকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে দুদক উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি  শনিবার সিলেটে এসেছেন। দুদক চেয়ারম্যানের নির্দেশে তদন্ত বিভাগের বিশেষ মহাপরিচালক আসাদুজ্জামান সরেজমিন ঘটনার তদন্ত করবেন। ঐ সুত্র জানায়, ডিসি অফিসের কর্মচারী আজিজুল ইসলাম হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে। তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মোবাইল ফোন ও বাসার টেলিফোন বন্ধ রয়েছে। এ কর্মচারীকেই ঘুষসহ গ্রেফতার করেছিল দুদক টিম। এ কারণেই টিমের ওপর হামলা চালায় ডিসি অফিসের কর্মচারীরা।
আবার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, উন্নত চিকিৎসার জন্য আজিজুলকে ঢাকায় নেয়া হয়েছে। অপর একটি সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসনের সহায়তায় চিকিৎসার নামে আজিজকে পালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুদকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, জেলা প্রশাসক তাকে চিকিৎসার জন্য নিজ জিম্মায় নিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর তার তত্ত্বাবধান থেকে আসামি পালিয়ে গেছে। এসব ঘটনা তদন্তে দুদক উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি সিলেটে পৌছেছেন। দুদক চেয়ারম্যানের নির্দেশে তদন্তÍ বিভাগের বিশেষ মহাপরিচালক আসাদুজ্জামান সরেজমিন ঘটনার তদন্ত করবেন। এ ছাড়া ঘুষের টাকাসহ অফিস সহকারী আজিজের বিরুদ্ধে একটি এবং সরকারি কাজে বাধাদান ও হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার অভিযোগে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হবে।
ঘটনা সম্পর্কে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, জনরোষের বিস্ফোরণ ঘটায় অনাকাক্ষিত এ ঘটনা ঘটেছে।  দুদকের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক শিরীন পারভিন বলেন, দুদক কমিশনের অনুমতি নিয়েই যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণপূর্বক ইনভেন্টরি করে ফাঁদ মামলার মাধ্যমে আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি জানান, এ সময় দায়িত্বশীল কয়েক কর্মকর্তা অভিযান পরিচালনাকারী দুদক টিমের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এ ছাড়া সহকারী কমিশনার পুলিশকে ধমক দিয়ে আসামির হাতকড়া খুলতে বাধ্য করিয়েছে।