• ১৩ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৪ঠা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

ছাতকের চেলারচর গ্রামে আনসার গংদের রাজত্বে সবাই যখন প্রজা

sylhetsurma.com
প্রকাশিত অক্টোবর ১০, ২০১৩
ছাতকের চেলারচর গ্রামে আনসার গংদের রাজত্বে সবাই যখন প্রজা

মো: ছাদিকুর রহমান ::::
আনসার আলী, সাজুর আলী, আবু সাঈদ, মানিক মিয়া- সবাই স্থানীয় রাজনীতির চেনামুখ। ছাতকের চেলারচর গ্রামের আওয়ামীলীগ কর্মী। দাপিয়ে বেড়ায় তারা ছাতক উপজেলার এই অঞ্চলে। নিজের গ-ির ভেতর তাদের অপ্রতিরোধ্য শক্তি। অধরা। পিলে চমকানো পথচলা। যখন তারা খেপে, এলাকার শান্তি পথ হারায়। হুঙ্কার দিলে আতঙ্কে নীল হয়ে যান মানুষ। তারা নিয়ন্ত্রণ করে এলাকার পুরো জনপদ। স্থানীয়রা বলছেন, এক অঘোষিত সন্ত্রাসী রাজত্বে বন্দী হয়ে গেছেন তারা। নিজের ‘বলয়ের’ বাইরের কারো কথা শুনে না তারা, বলতেও দেয় না। টুঁটি চেপে ধরে। ছাতকের চেলারচর গ্রাম ও তার আশপাশের এলাকার মানুষ চুপ হয়ে গেছেন। চোখের ভাষায় কেবল অসহায়ত্ব থেকে মুক্তির আকুতি। ঘরবাড়ি-জায়গা দখল, মাদক ব্যবসা, অনাচার-অত্যাচার, রাহাজানি, চাঁদাবাজির রাজত্বের কাছে সবাই যেন প্রজা।
ছাতকের উক্ত এলাকায় সাহস করে কথা বলার মানুষ নেই। লুকিয়ে লুকিয়ে, চুপিসারে কথা বলতে চান তারা। এই বুঝি কেউ দেখে ফেললো! চোখে-মুখে ভীতি। সেখানে এক ধরণের গা ছমছম করা পরিবেশে মানুষের বসবাস। কখন কোন বিপদ আসে তা নিয়েই চিন্তায় থাকেন তারা। লোকজন বলছেন, এটা ‘জিম্মি দশা’। জিম্মি দশায় থাকা এসব লোকজন জানিয়েছেন, তারা অসহায়। পরিচয় গোপন রাখার শর্ত জুড়ে দিয়ে তারা বলেন, একটি একটি করে প্রায় ১০ টির মতো বাড়ী দখল হয়েছে সেখানে। কেউই প্রতিবাদ করতে পারেননি। কিংবা প্রতিবাদ করার সাহস করেননি। দখল করা এসব বাসায় দখলদাররা থাকে। কোনোটিতে মদ জোয়ার আসর বসানো হয়েছে। এইসব বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কাজ চালিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সন্ত্রাসীরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দখলকৃত বাসার বেশির ভাগেরই মালিক গরীব ও অসহায়। গরীবদের শেষ সম্বল তাদের পৈত্রিক ভিটায় থাকতে হলে দিতে হচ্ছে তাদেরকে চাদা। যারা চাদা দিতে পারেনি তাদের বাড়ি দখল করে নিয়েছে এসব সন্ত্রাসীরা। এমনই এক অসহায় ব্যক্তি চেলারচর গ্রামের মৃত আমির আলীর পুত্র মাসুক মিয়া। আনসার আলী ও তার বাহিনীকে কয়েক বছর ধরে রীতিমতো চাঁদা দিয়ে আসছেন তিনি। কিন্তু আর কত দিবে? অসহায় মাসুক মিয়া যখন পারছেন না চাদার টাকা জোগাড় করতে তখন তার উপর নেমে আসে আনসার আলী বাহিনীর পাশবিক নির্যাতন। গত ২ অক্টোবর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আনসার আলী, সাজুর আলী, আবু সাঈদ, মানিক মিয়াসহ আরো কয়েকজন সন্ত্রাসী মাসুক মিয়ার বাড়িতে হামলা চালায়। লুট করে নেয় বাড়ির সব মালামাল। তারপর জোরপূর্বক মাসুক মিয়া ও তার পরিবারকে গলা ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বাড়ী এখন তাদের। অসহায় মাসুক মিয়া তার বাড়ি ফিরে পেতে স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার, থানা, প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু কোন আশ্বাস না পেয়ে হতাশ মাসুক মিয়া এখন দু:খ আর কষ্টকে সঙ্গী করে পরিবার নিয়ে রাস্তায় দিনযাপন করছেন। কে শুনবে তার ফরিয়াদ? কে দেবে তার অধিকার? কারণ রক্ষকই যে এখন ভক্ষক।
এই বাহিনী পুরো এলাকা দাপিয়ে বেড়ায়। তাদের নিজস্ব ‘টর্চার সেল’ রয়েছে বলেও এলাকাবাসী জানিয়েছেন। সেখানে অনেককে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। আর এতোসব অপরাধ-অপকর্ম, অনাচার-অত্যাচার করে সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। তাদের মাথার উপর রয়েছে ‘বিশ^াসী’ হাত । বিশ^াসী হাতওয়ালা সেই মানুষটিকে চেনে সবাই কিন্তু বলতে পারে না। কারণ লোকজনের টুঁটি চেপে ধরে আছে তারা।